বাগান প্রশাসনে সুব্রত ভট্টাচার্যের আবির্ভাব আটকাতে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার রাস্তায়ই হাঁটতে চলেছে সবুজ-মেরুন শাসকগোষ্ঠী। যা নিয়ে হঠাৎ-ই উত্তাল ময়দান।
মোহনবাগানের আসন্ন নির্বাচনে ফুটবল সচিব পদে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামতে চলেছেন ক্লাবের নিখাদ দুই ঘরের ছেলে। সুব্রত ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে শাসক গোষ্ঠীর প্রার্থী সম্ভবত হচ্ছেন সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার শাসকগোষ্ঠীর গোপন সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও কেউই এখন সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চাইছেন না। ক্লাব সূত্রের খবর, সুব্রতর ক্যারিশমার সঙ্গে লড়ার জন্য দু’টো নামই সামনে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এক জন চুনী গোস্বামী। অন্য জন সত্যজিৎ। চুনীর নাম ভোটার তালিকায় নেই। ফলে তাঁর ভোটে লড়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তি চুনীকে একটি সাম্মানিক পদ তৈরি করে পরে ক্লাবে আনার কথা ভাবছেন টুটু বসু-অঞ্জন মিত্ররা। ফলে সত্যজিৎকে প্রার্থী করছেন শাসকরা। সুব্রতর মতো সত্যও ফুটবলার জীবনে কোনও দিন বাগান ছাড়েননি। বহু ট্রফি এনেছেন ক্লাবে। সহকারি কোচ হয়েছেন কয়েক বার। এই মুহূর্তে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য। সবথেকে বড় কথা বিতর্কিত নন। মে মাসের নির্বাচনে (সম্ভবত ১০ মে) সুব্রত বা সত্যজিৎ যিনিই জিতে আসুন, শৈলেন মান্না, চুনী গোস্বামীদের উত্তরসূরি হিসেবে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের ফুটবল সচিবের দায়িত্ব নেবেন। আরও চমকপ্রদ, সম্ভবত প্রথম বার দুই ফুটবলার ফুটবল সচিবের পদে মুখোমুখি লড়বেন। তাও আবার সুব্রতর কোচিংয়ে বাগানে কেরিয়ারের শেষের দিকে খেলেছেন সত্যজিৎ। সেই ক্লাবেই একই পদের জন্য গুরু-শিষ্যের লড়াই! ক্লাবের এক ঘরের ছেলে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরোধী গোষ্ঠী থেকে নিজেদের দিকে টেনে আনার পর আর এক ঘরের ছেলে সত্যজিৎকে নির্বাচনী ময়দানে নামিয়ে দিতে পেরে উৎফুল্ল শাসকগোষ্ঠী।
শাসকরা যখন নানা চাল দিয়ে চলেছেন, তখন ক্লাবের বিরোধীগোষ্ঠীও বসে নেই। বাগান সমর্থকদের অতিপরিচিত মুখ বলরাম চৌধুরী সচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বর্তমান সচিব অঞ্জন মিত্রের বিরুদ্বে। অর্থ সচিব পদে দেবাশিস দত্তের বিরুদ্ধে লড়বেন বিধাননগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর বানীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমান সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসুর বিরুদ্ধে এখনও প্রার্থী ঠিক করতে পারেনি বিরোধীরা। চেষ্টা চলছে এক জন হেভিওয়েট মন্ত্রী বা বিধায়ককে দাঁড় করানোর। সুব্রত ছাড়াও প্রাক্তন ফুটবলার শঙ্কর সরকারকে কর্মসমিতিতে দাঁড় করাতে চলেছে বিরোধীগোষ্ঠী।
শাসকরাও কর্মসমিতিতে দু’জন ফুটবলারকে আনতে চাইছেন। শোনা যাচ্ছে শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি প্রদীপ চৌধুরীরও নাম। দু’-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে শাসকরা ক্রিকেট সচিব পদে এক জন ক্রিকেটারকে চাইলেও সেটা হচ্ছে না। যাঁর নাম ভাবা হয়েছিল সেই প্রাক্তন নামী ক্রিকেটার তাঁর সদস্যপদ নবীকরণ করাননি।
বর্তমান কর্মসমিতি থেকে শাসকরা বাদ দিতে চলেছেন অন্তত চার জনকে। তালিকাও তৈরি। কিন্তু বাদ পড়ে তাঁরা বিরোধী পক্ষে চলে যেতে পারেন ভেবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন অর্থাৎ ২০ এপ্রিল সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাসকরা। একই কারণে বিরোধীরাও অন্তত গোপনে তাঁদের প্রার্থী ঠিক করছেন। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ আগেই জানিয়েছিলেন তিনি কোনও পদে দাঁড়াবেন না। কর্মসমিতিতে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই প্যানেল চূড়ান্ত করছেন বলরাম-সুব্রতরা। শোনা যাচ্ছে বিরোধীদের প্যানেলে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দুই তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ, তমোনাশ ঘোষ থাকতে পারেন। নামী দু’জন চিকিৎসক, দুই আইনজীবীর সঙ্গেও কথা চলছে। বাগানের পরিচিত মুখ হারু মণ্ডল, সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের হয়ে মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন। বলরাম বললেন, ‘‘আমাদের তালিকায় প্রচুর চমক থাকবে। সব জানাব ২০ এপ্রিল।’’ বিরোধীগোষ্ঠীর তরফে এ দিন নির্বাচনের নিয়মাবলির বই আনতে ক্লাবে গিয়েছিলেন সুব্রত। তাঁকে শুক্রবার সেটা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শাসকরা।
নির্বাচনের পর প্রেসি়ডেন্ট পদে টুটু বসুকেই বেছেছেন শাসকরা। বিরোধীরা চাইছেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বা বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করে নির্বাচনে নামতে। তাঁদের রাজি করানোর চেষ্টা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy