কোপা ফাইনালে এ ভাবেই আটকে গিয়েছিলেন। এ বার মেসিকে যেন মাঠে স্বাধীনতা দেন কোচ।
লিওনেল মেসি অবসর ভেঙে ফেরায় আমি একটুও অবাক নই। জানতাম আবেগের বসেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মেসি। ওর মতো প্রতিভা ফুটবল থেকে খুব বেশিদিন দূরে থাকতে পারে না। তার উপর আবার আর্জেন্তিনার সামনে গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার অপেক্ষা করছে। যে সব ম্যাচে মেসির দলে থাকা ছিল অত্যন্ত জরুরি। তাই তো আর্জেন্তিনার নতুন কোচ এদগার্দো বাউজার কাছে দলের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল মেসিকে কোনওরকম ভাবে অবসর ভাঙিয়ে দলে ফেরানো।
সবাই বলছে শুনছি অবসর ভেঙে ফেরায় আরও বেশি চাপ তৈরি হল মেসির ওপর। ও নাকি নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারল। আমার মনে হয় এই মনোভাবটা সম্পূর্ণ ভুল। বরং জিনিসটা উল্টো হল। অবসর থেকে ফেরা মেসি কিন্তু আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। তেতে থাকবে দলকে ট্রফি জেতাতে। মাঝে মাঝে সমালোচনা কোনও বিশ্বমানের প্রতিভাকে তাতিয়ে দেয়। আমি নিশ্চিত, মেসির ক্ষেত্রেও সেটাই হবে।
ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখছিলাম, আর্জেন্তিনার নতুন কোচ এদগার্দো বাউজা বলেছেন, মেসিকে তিনি ফলস নাইনে খেলাবেন না। কারণ, কোপায় দেখা গিয়েছে, দু’তিন জন মিলে ঘিরে ফেলছিল মেসিকে। আর্জেন্তিনাকে যদি আক্রমণ তৈরি করতে হয় তা হলে মেসিকে ফ্রি-রোলে খেলতে হবে। অন্তত ছ’টার মধ্যে পাঁচটা মুভ তৈরি করতে হবে।
তা হলে প্রশ্ন হচ্ছে, ফলস নাইনে না খেললে মেসি খেলবে কোথায়? বাউজা কিন্তু খুব ট্র্যাডিশনাল মানসিকতার কোচ। ৪-৪-২ ফর্মেশনই পছন্দ করেন। মেসিকে তাই ফ্রি-রোলেই ব্যবহার করবেন বাউজা। ওঁর মতো চতুর কোচ জানেন মেসিকে যত মার্কারদের থেকে দূরে রাখা যাবে তত দলের লাভ। ৪-৪-২ মানে তো মাঝমাঠে চার জন। আর উপরে দু’জন ফরোয়ার্ড। মেসিকে তাই মাঝমাঠ ও ফরোয়ার্ড লাইনের মাঝখানেই খেলাবেন বাউজা। ফর্মেশনের ধরনটা সম্ভবত একটু পাল্টে মেসিকে ফ্রি-রোল দেবেন। যাতে মাঠে ওপেন স্পেসগুলোতে বেশি বল ধরার সুযোগ পায় মেসি। অনেক বেশি মুভমেন্ট করতে পারে। বাকিদের সঙ্গে লিঙ্ক আপ প্লেটাও সুন্দর হয়। কোপা ফাইনালে চিলির ফুটবলাররা ঘিরে ফেলছিল মেসিকে। কিন্তু ওকে যদি ফ্রি-রোলে খেলানো হয় তা হলে ক্রমাগত জায়গা পাল্টাতে পারবে। কেউ মার্কও করতে পারবে না। কোনও বিশেষ পজিশনের বাড়তি দায়িত্ব যাতে ওর উপর না চাপিয়ে দেওয়া হয়।
সবাই যখন বলে মেসি দেশের হয়ে কিছু করতে পারে না, আমার রাগ হয়। আরে ভাবতে হবে বার্সেলোনায় কারা খেলছে মেসির পাশে। তার উপরে প্রতি সপ্তাহে একসঙ্গে ট্রেনিং করায় ক্লাব দলে বোঝাপড়া বেশি থাকে। তাই তো মেসির পাসগুলো থেকে ফিনিশ করতে পারে সুয়ারেজ। কারণ ও জানে মেসি কোথায় বলটা বাড়াতে পারে। ফুটবল তো জাদু নয়। নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি লাগে জিততে।
আর্জেন্তিনাকেও সেই ক্লাবের ব্লু প্রিন্ট নিতে হবে। মেসি যদি দলের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়, তা হলে বাকি ফুটবলার এমন বাছতে হবে যারা মেসির স্টাইলের সঙ্গে খাপ খায়। দি’মারিয়ার মতো বল প্লেয়ারকে আরও সুযোগ দিতে হবে মেসির সঙ্গে কম্বিনেশন তৈরি করতে। মাঝমাঠকে আরও বেশি করে বল বাড়িয়ে যেতে হবে। তবেই তো মেসি খেলতে পারবে।
বাকি ফুটবলপ্রেমীদের মতো আমিও চাই মেসি আর্জেন্তিনার হয়েও ভাল খেলুক। এমন সমস্ত গোল করুক যাতে প্রমাণ হয় জিনিয়াসরা সব পরিস্থিতিতেই সেরাটা বের করে আনতে পারে।
শুক্রবার সুয়ারেজের উরুগুয়ের বিরুদ্ধে নামার কথা মেসি। বাকিদের মতো আমিও চাইব চোট সারিয়ে উঠে মেসি যেন একটা দুরন্ত ম্যাচ খেলে। প্রথম ইনিংসে যে সমস্ত জিনিস মেসির থেকে পাইনি, আশায় আছি সেগুলো এ বার দেখতে পাব। যেমন...
এক, আরও বেশি ফরোয়ার্ড রান নিক মেসি। ওর মতো প্লেয়ার খুব বেশি ডিপে খেললে হারিয়ে যাবে খেলার থেকে। দুই, সেট পিস আরও নিঁখুত হোক। রোনাল্ডোর মতো মেসিও দারুণ ফ্রি-কিক নেয়। ওর স্টাইলটা পুরো আলাদা। কিন্তু দশটার মধ্যে ন’টা যেন টার্গেটে থাকে। তিন, গোলে আরও বেশি শট। স্কোরিং জোনের আশেপাশে থাকতে হবে। পাস বাড়িয়ে গোল করানো ঠিক আছে। কিন্তু নিজেও যখন দুর্দান্ত ফিনিশার, তখন আরও বেশি করে শট নিতে ক্ষতি কী।
সবশেষে, মাথা গরম করে যেন আবার অবসর না নিয়ে নেয় মেসি। ওর মতো ফুটবলার ভাগ্য করেই পায় কোনও প্রজন্ম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy