স্বপ্না বর্মণ।নিজস্ব ছবি।
রাজ্য সরকারের কাছে থাকার জায়গা চাইলেন এশিয়াডে সোনাজয়ী স্বপ্না বর্মণ। তবে তা যেন সল্টলেকের সাইয়ের কাছে হয়। কলকাতায় ফিরে এটাই নিজস্ব চাহিদা সোনার মেয়ের।
জলপাইগুড়িতে তাঁর নিজের বাড়িতে যাওয়া হয়নি বছরখানেক। ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন সাই হয়ে উঠেছে স্বপ্নার বাড়ি। কিন্তু, যদি পারফরম্যান্স না থাকে, তখন তো আর সেখানে থাকতে পারবেন না। স্বপ্না সে জন্যই শুক্রবার বিকেলে সাইয়ে পৌঁছে বললেন, “বাড়ি থেকে শুনলাম, মমতাদি ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। দাদাদের চাকরিও দেবে। আমার একটাই ইচ্ছে। যদি আমাদের মাঠের কাছাকাছি সল্টলেক বা নিউটাউনে একটা ফ্ল্যাট বা বসবাসের জায়গা করে দেন, তবে খুব ভাল হয়।”
স্বপ্নার লড়াই শুধু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধেই নয়, চোট-যন্ত্রণার বিরুদ্ধেও ছিল। সেজন্যই হেপ্টাথলনে সোনা এত তৃপ্তি আনছে। দুই চোখে তাই খুশির ঝিলিক। মুখে হাজার ওয়াটের আলো। জীবন অবশ্য এত সহজ ছিল না। ২০১৬ সালে একবার ভেবেছিলেন চোটের জন্য অ্যাথলেটিক্স ছেড়ে দেবেন। মাস তিনেকের জন্য ফিরেও গিয়েছিলেন বাড়ি। কিন্তু কোচ সুভাষ সরকার ফিরিয়ে এনেছিলেন। শিক্ষক দিবসে তাই নিজের সোনার পদকই স্যারকে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। স্বপ্না জানেন, মানেনও, এই পদক যতটা তাঁর নিজের, ততটাই স্যারেরও। তাঁর কথায়, “স্যার তখন বারবার ফোন করেছিলেন আমাকে। বলেছিলেন, তুই আয়, আমি দেখছি। এটাই আমার টার্নিং পয়েন্ট।”
আরও পড়ুন: স্বপ্না স্বপ্না চিৎকারের মধ্যেই ঘরে ফিরলেন সোনার মেয়ে
আরও পড়ুন: সৌরভের পর হৃদয়, ওয়ার্ল্ড শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা আনলেন ভারতে
দাঁতের ব্যথার জন্য খেতে পারেননি গেমস ভিলেজে। গিলতেই পারছিলেন না। এত যন্ত্রণা হচ্ছিল। অনুশীলনও করতে পারেননি। সংশয় জন্ম নিয়েছিল। স্যারকে বলেছিলেন, “কী করে নামব ইভেন্টে?” তবুও হাল ছাড়েননি। অদম্য জেদে নিজেকে বলেছিলেন, “আমাকে করতেই হবে। এতদিনের অনুশীলন। সেটা নষ্ট হতে দেওযা যাবে না।” শুধু তো দাঁতের ব্যথা নয়। এশিয়ান গেমসের ঠিক আগে মাথাচাড়া দিয়েছিল কোমরের চোট। তা নিয়েই এসেছে সাফল্য।
পরের টার্গেট হেপ্টাথলনে ৬৩০০ পয়েন্ট করা। এশিয়ান গেমসে করেছেন ৬০২৬ পয়েন্ট। তাই থাকতে চান উন্নতির রাস্তায়। তবে তার আগে বাড়ি যাওয়া রয়েছে। সেখানে কয়েকদিন কাটিয়ে নেমে পড়বেন চোট সারানোর লড়াইয়ে। তারপর অলিম্পিক তো আছেই। থাকছে কিছু সংকল্পও। নিজেই শোনালেন তা, “যেমন রাগ করব না, ডিসিপ্লনড থাকব। আর আমাকে কেউ অন্য ভাবে দেখবেন না। আমি একই রকম রয়েছি।”
খেলাধূলায় এসেছিলেন একটা চাকরির সন্ধানে। সেই স্বপ্নার কাছে এখন একের পর এক চাকরির প্রস্তাব। কিন্তু চাকরি নয়, উন্নতির পথে থাকতে মরিয়া তিনি। সঙ্গে থাকছে একটা অন্য উপলব্ধিও। চোট নিয়ে, যন্ত্রণা সহ্য করে যদি এশিয়াডে সোনা আসতে পারে, তবে পুরো ফিট থাকলে কোথায় না পৌঁছতে পারেন। স্বপ্না শুধু বাঙালিকেই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন না। নিজেও দেখছেন।
(অলিম্পিক্স, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস হোক কিংবা ফুটবল বিশ্বকাপ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ - বিশ্ব ক্রীড়ার মেগা ইভেন্টের সব খবর আমাদের খেলা বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy