ইস্টবেঙ্গল নিয়ে লিখলেন মেহতাব হোসেন
ইস্টবেঙ্গলে গর্বের সঙ্গে খেলেছি। তাই এই লাল-হলুদ জার্সি আমার কাছে মায়ের মতো। জার্সির মধ্যে মশালের প্রতীক দেখলেই গায়ের রক্ত গরম হয়ে যেত। মাঠে নামলেই আলাদা উত্তেজনায় টগবগ করতাম। সেই ক্লাবকে এখন দেখলে কষ্ট হয়।
আপনি ইস্টবেঙ্গলের নাম ব্যবহার করছেন। এই ক্লাবের ১০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন। কর্পোরেট যুগে সেটা করুন। কিন্তু ক্লাব ও সমর্থকদের দূরে সরিয়ে রেখে এমনটা করা উচিত নয়। কারণ আমার মতে ঝামেলা করে কোনও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই আমার মতে এই সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাব, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সমর্থকদের একাংশ এক টেবিলে আলোচনায় বসুক।
আমার নাম মেহতাব হোসেন। এই নামটা আমার বাবা-মা দিয়েছেন। ওঁদের জন্য আমি পরিচিতি পেয়েছি। বাকি খ্যাতি যোগ হয়েছে ফুটবলের জন্য। সেই পরিচিতি যদি আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে আমার অস্তিত্ব কোথায়? কিংবা মনে করুন যাদের জন্য আমি সমাজে পরিচয় পেয়েছি তাদেরই যদি ভুলে যাই, অসম্মান করি তাহলে সেটা সঠিক হবে? ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ও শ্রী সিমেন্টের মধ্যে দ্বন্দকে তো আমি সে ভাবেই বিশ্লেষণ করছি।
সবাই আমাদের ক্লাবকে দেশের সেরা লিগে খেলতে দেখতে চায়। আমিও চাই। কিন্তু এই ভাবে নয়। ঝামেলা করে নয়। এত রক্তপাত, এত হানাহানির বিনিময়ে কোনও ভাল জিনিস হতে পারে না।
দল আইএসএল খেলবে। সেই চাওয়ার মধ্যে কোনও ভুল নেই। যেহেতু এটিকে মোহনবাগান ভাল দল তৈরি করে আইএসএল খেলছে, তাই লাল-হলুদ সমর্থকদের উৎকণ্ঠা আরও বাড়ছে। তবে সব কিছু বিবেচনা করে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
আমি এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক চুক্তি ও চূড়ান্ত চুক্তি পড়ে দেখিনি। তাই কোনও পক্ষকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারব না। তবে ক্লাবের কথা ধরলে যদি শ্রী সিমেন্ট ক্লাবের মালিকানা নিতে চায় তাহলে সেটা মেনে নেওয়াও সম্ভব নয়। সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে মোহনবাগানের চুক্তি হওয়ার পর কিন্তু সবুজ-মেরুন সমর্থকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়নি। ঐ ক্লাবের সমর্থকরা ইচ্ছে করলেই ক্লাবে যেতে পারেন। কিন্তু লাল-হলুদ কর্তারা চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে সই করে দিলে ক্লাবের অন্দর মহলের পরিস্থিতি বদলে যাবে। এটা তো মেনে নেওয়া অসম্ভব।
শ্রী সিমেন্টের আরও একটা বিষয় আমার ভাল লাগেনি। আমাদের সময় কিংবা তারও আগে অ্যাওয়ে জার্সির মধ্যেও লাল-হলুদ আভা থাকত। প্যান্টের রং হতো কালো। গত মরসুমে কিন্তু অ্যাওয়ে জার্সির রং নীল-সাদা ছিল। কতজনের নজরে এই জিনিসটা এসেছে জানি না। তবে এটা কাম্য ছিল না। ম্যানচেস্টার সিটি-র হোম ও অ্যাওয়ে জার্সির ক্ষেত্রে কোনও বদল আসেনি।
গত মরসুমে আমাদের ক্লাব আইএসএল খেললেও দল আহামরি ছিল না। আশা করেছিলাম সব ঝামেলা দূরে সরিয়ে রেখে এ বার ভাল দল গড়া হবে। কিন্তু তেমন ইঙ্গিত তো পাচ্ছি না। এত কিছুর পরেও আলোচনার মাধ্যমে রফাসূত্র বের হতে পারে। এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু এর পরেও কি আদৌ ভাল দল গড়া সম্ভব? এই প্রশ্নটা কিন্তু রয়েই গেল।
(প্রাক্তন ফুটবলার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy