তৃপ্ত: ব্রোঞ্জ, রুপোর পরে এ বার সোনা। ফাইনালে মিশেল লি-কে হারিয়ে উচ্ছ্বাস সিন্ধুর। সোমবার। ছবি রয়টার্স।
বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস শুরু হওয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছিল, এ বার পি ভি সিন্ধু নিশ্চয়ই সোনা জিতবে। এর আগে দু’বার যা ওর অধরা থেকে গিয়েছিল। ২০১৪ গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে সিন্ধু ব্রোঞ্জ জিতেছিল। তার পরের বার ২০১৮ গোল্ড কোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে ফাইনালে হেরে গিয়েছিল সাইনা নেহওয়ালের কাছে। তাই এ বার যে ও কোনও অবস্থাতেই সোনা জেতার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে না, সেটা গোড়া থেকেই জানতাম। সোমবার ঠিক সেটাই হল। ফাইনালে কানাডার মিশেল লি-কে ২১-১৫, ২১-১৩-এ হারিয়ে আমার মতো দেশের কোটি কোটি মানুষের আশা পূর্ণ করল সিন্ধু।
এ বারের কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দল নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক প্রত্যাশা ছিল। তার একটা কারণ গত বারের প্রতিযোগিতায় মিক্সড টিম আর মেয়েদের সিঙ্গলস, দুটো সোনাই জিতেছিলাম আমরা। তা ছাড়া এ বারের দলটাও খুব শক্তিশালী। প্রথম বার টমাস কাপ জেতার আত্মবিশ্বাস নিয়েও বার্মিংহামে নেমেছিল দলটা। তাই মিক্সড টিম তো বটেই, সিঙ্গলস আর ডাবলসেও আমরাই এ বার দাপট দেখাব সেই আশা ছিল।
শেষ পর্যন্ত মিক্সড টিমে সোনা হাতছাড়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরুষ ও মহিলাদের সিঙ্গলস আর পুরুষদের ডাবলসে সোনার হ্যাটট্রিক গড়ে ফেলল এই দলটা। যেটা ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের জন্য খুব ভাল খবর। কারণ এ মাসের শেষের দিকেই টোকিয়োয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। সেখানে এই সাফল্য অনেক আত্মবিশ্বাস জোগাবে সিন্ধুদের।
অনেকে বলতে পারেন, সিন্ধু তো ২০১৯ সালেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তা হলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নতুন করে ওর পাওয়ার আর কী আছে? তাঁদের বলব, এটাই সিন্ধুর বড় গুণ। নিজেকে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে যাওয়া। অলিম্পিক্সের দুটো পদক তো ছেড়েই দিলাম ব্যাডমিন্টন বিশ্বে সব বড় প্রতিযোগিতাতেই সিন্ধুর পদক রয়েছে। তাও যখনই সিন্ধু নতুন কোনও টুর্নামেন্টে নামে ওকে একই রকম ক্ষুধার্ত মনে হয়। সাফল্যের এই খিদেটাই সিন্ধুর সবচেয়ে বড় শক্তি। না হলে বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বছরের পর বছর নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে পারত না। যে কোনও খেলাধুলোর ক্ষেত্রেই শীর্ষে ওঠা সহজ, কিন্তু সেই জায়গাটা ধরে রাখা অনেক বেশি কঠিন।
প্রাক্তন ভারতীয় কোচ হিসেবে সিন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি বলেই জানি কোর্টে ও যে রকম বিধ্বংসী, কোর্টের বাইরে ও ততটাই নম্র। ২০১৪ গ্লাসগো কমওয়েলথ গেমসে সিন্ধু যখন ব্রোঞ্জ জেতে, তখনও আমি দলের সঙ্গে ছিলাম। কমনওয়েলথে সোনা জেতার শপথটা হয়তো ও তখনই করে রেখেছিল। সিন্ধুর আর একটা বড় গুণ হল ঠিক সময়ে জ্বলে ওঠা। বিশেষ করে বড় প্রতিযোগিতাগুলোতে।
এ বছর বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থার যে ১৪টা প্রতিযোগিতা হয়েছে, তার মধ্যে সিন্ধু তিনটের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সৈয়দ মোদী আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা, সুইস ওপেন ও জুলাইয়ে সিঙ্গাপুর ওপেনে। অনেকে বলতে পারেন, সিন্ধুর মতো চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়ের জন্য ধারাবাহিকতা রাখার দিক থেকে এটা দারুণ পরিসংখ্যান নয়। কিন্তু ওই যে বললাম, ঠিক সময়ে জ্বলে ওঠার গুণ। সেটাই ওকে বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে শীর্ষে তুলে এনেছে।
তা ছাড়া এ দিন ফাইনালের প্রতিপক্ষ মিশেল লি-র বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে এই ম্যাচে নামার আগে ৮-২-এ এগিয়েছিল সিন্ধু। শেষ বার সিন্ধু মিশেলের কাছে হেরেছিল ২০১৪ সালে গ্লাসগোতে। তার পরে ছ’বারই সিন্ধু ওকে টানা হারিয়েছিল। তাই আমি জানতাম, সিন্ধু এ বারও সফল হবে। নিজের অধরা সোনার স্বপ্ন পূর্ণ করবে। আমার প্রাক্তন ছাত্রী সেটাই করে দেখাল দাপটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy