Advertisement
০২ মে ২০২৪
আমির যে দিন চাইবে সে দিনই আমি লড়তে তৈরি, হুঙ্কার বিজেন্দ্রর

চিনকে এ বার দেখিয়ে দেবো কে সেরা

তবে চ্যালেঞ্জ একটা আছেই। জানি, জিতলে আমারটা রাখার পাশাপাশি ওরটা জিতে নেব। সেটাই চাইছি আমি। ওর বেল্টটা নিয়ে রিং ছাড়তে। চিনকে দেখিয়ে দিতে হবে, কে সেরা।

বিজেন্দ্র না জুলপিকর, কার হাতে থাকবে জোড়া বেল্ট? ফাইল চিত্র

বিজেন্দ্র না জুলপিকর, কার হাতে থাকবে জোড়া বেল্ট? ফাইল চিত্র

কৌশিক দাশ
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৪:২০
Share: Save:

‘কিংগ অফ এশিয়া’-কে হবেন, ঠিক হবে ৫ অগস্ট মুম্বইয়ে। এক দিকে ভারতের বিজেন্দ্র সিংহ। অন্য দিকে চিনের জুলপিকর মইমইতালি। বক্সিংয়ের এই মেগা লড়াইয়ের আগে ম্যাঞ্চেস্টার থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিলেন বিজেন্দ্র সিংহ।

প্রশ্ন: এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার আর একটা লড়াই। ম্যাঞ্চেস্টারে আপনার প্রস্তুতি কেমন চলছে?

বিজেন্দ্র সিংহ: এক কথায় দুর্দান্ত। হার্ডকোর ট্রেনিং যাকে বলে। ওয়েট, কার্ডিও তো আছেই। স্পারিং পার্টনারদের (রিংয়ে লড়াইয়ের সঙ্গী) নিয়েও কাজ করছি। আমার লক্ষ্য একটাই, সবাইকে বুঝিয়ে দিতে চাই, কে সেরা।

প্র: এ বারের প্রতিদ্বন্দ্বী জুলপিকর মইমইতিয়ালি বাঁ-হাতি। বাঁ-হাতিদের সঙ্গে লড়াইটা কত কঠিন?

বিজেন্দ্র: কঠিন কাজ, এমনটা বলব না। আপনাকে একটু অন্য ভাবে তৈরি হতে হবে। টেকনিকে বদল আনতে হবে। ডান হাতিদের সঙ্গে লড়ার ক্ষেত্রে আপনি মোটামুটি একজনের ভাল খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন। কিন্তু বাঁ হাতিদের সঙ্গে লড়ার সময় আপনাকে নিজেকে একটু বদলাতে হবে। লড়াইয়ের স্টাইলে বদল আনতে হবে।

আরও পড়ুন: যত যুদ্ধ বাইরে, মাঠে বন্ধুত্বের পক্ষেই মাশরফি

প্র: জুলপিকরের সঙ্গে লড়ার জন্য কি বিশেষ কোনও ট্রেনিং করছেন?

বিজেন্দ্র: হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা জানি, লড়াইটা মোটেও সোজা হবে না। তাই ট্রেনিংয়ের সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছি। আমার চেয়ে বেশি ওজনের স্পারিং পার্টনারদের সঙ্গে লড়ছি। বাঁ-হাতিদের সঙ্গে লড়ছি। টেকনিকে যেটুকু বদল আনার, সে সব এই প্র্যাকটিসে আনছি।

প্র: নিজের কাছে আপনার সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট কী? আর কী কী জায়গায় খুঁত আছে বলে মনে করেন?

বিজেন্দ্র: (হেসে) আমি নিজের দুর্বলতার কথা কী করে বলব। আমার কাছে সবই ভাল। আমার উচ্চতা, আমার ওজন, আমার রিফ্লেক্স। আসলে শক্তি-দুর্বলতার ব্যাপারগুলো বদলে যায় রিংয়ে নামলে। তখন আপনার প্রতিন্দ্বন্দ্বী কী ভাবে আপনার ঘুষির মোকাবিলা করছে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আমার ডান হাতি, বাঁ হাতি পাঞ্চের জবাব ওর কাছে কী আছে, তার ওপরই নির্ভর করে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে।

প্র: এ বারের লড়াইটা দু’টো খেতাবের জন্য। জিতলে নিজের খেতাব (ডব্লিউবিও এশিয়া প্যাসিফিক) ধরে রাখার পাশাপাশি জুলপিকরেরটাও (ডব্লিউবিও ওরিয়েন্টাল) জিতে নিতে পারবেন। কোনও বাড়তি চাপ?

বিজেন্দ্র: না, বাড়তি চাপের কিছু নেই। তবে চ্যালেঞ্জ একটা আছেই। জানি, জিতলে আমারটা রাখার পাশাপাশি ওরটা জিতে নেব। সেটাই চাইছি আমি। ওর বেল্টটা নিয়ে রিং ছাড়তে। চিনকে দেখিয়ে দিতে হবে, কে সেরা।

প্র: এই লড়াইয়ে আপনার সবচেয়ে বড় সুবিধা কী হতে যাচ্ছে?

বিজেন্দ্র: অবশ্যই দর্শকদের সমর্থন। মুম্বইয়ে লড়াই হবে এ বার। অনেকেই আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আমি নিশ্চিত, দর্শকদের চিৎকার আমাকে আরও তাতিয়ে দেবে।

প্র: ভারত-চিন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আপনাদের এই লড়াইটা হতে চলেছে। চিনের এক নম্বরের বিরুদ্ধে নামার আগে কী মনে হচ্ছে?

বিজেন্দ্র: একটা উত্তেজনা তো আছেই। বিশেষ করে ভারত-চিন নিয়ে এখন যে রকম টেনশন চলছে সীমান্তে। টুইটার, ইউটিউব— যেখানে দেখছি, ভারত-চিন উত্তেজনার আঁচ পাচ্ছি। আমি নিশ্চিত, রিংয়েও সেই উত্তেজনার আঁচ পাওয়া যাবে। আর এটাও জানি, ভারত বনাম চিন হওয়ার কারণে দর্শকরাও এই লড়াইটা বিশেষ ভাবে নেবে।

প্র: আপনি রিংয়ে নামার আগে চাপ সামলান কী ভাবে? বিশেষ কোনও বই পড়া যা যোগাভ্যাস?

বিজেন্দ্র: অবশ্যই যোগ আমার একটা বড় অস্ত্র। আর এই লড়াইটার আগে মনঃসংযোগ বাড়াতে আমি বিশেষ করে যোগের সাহায্য নেব। এখন আমি ইউ কে-তে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু একবার ভারতে এসে গেলেই জানি আমাকে অনেক কিছু সামলাতে হবে। মিডিয়া, ফ্যান, স্পনসর— সব কিছু। এ সব সামলে মনঃসংযোগটা ধরে রাখা খুব জরুরি।

প্র: আপনি এখন ভারতীয় বক্সিংয়ের মুখ। একটার পর একটা লড়াই জিতছেন নক আউটে। লোকের প্রত্যাশাও বেড়ে গিয়েছে অনেক। এর জন্য কি বাড়তি চাপ টের পান?

বিজেন্দ্র: না, না। চাপ নয়, এর ফলে আমার ওপর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। লোকে আমাকে বক্সার বলে জানে। চায়, আমি যেন রিংয়ে নেমে প্রতিপক্ষকে শুইয়ে দিতে পারি। আমার কাজটা হল, রিংয়ে নেমে দেশের সম্মান রাখা। সব লড়াই জেতা। সেটাই করার চেষ্টা করি।

প্র: আপনার বক্সিং জীবনের এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত কোনটা? অলিম্পিক্স পদক জয় না প্রো বাউটের কোনও বিশেষ লড়াই?

বিজেন্দ্র: অবশ্যই অলিম্পিক্স পদক জয়। অলিম্পিক্স পদক আমাকে বিজেন্দ্র সিংহ বানিয়েছে। অলিম্পিক্স পদক জেতার পরে লোকে আমাকে বক্সার বলে চিনেছে। আমার এই বক্সিং কেরিয়ারে এক নম্বরে থাকবে অলিম্পিক্স পদকই।

প্র: আমির খান আপনাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। বলেছেন, আপনাকে একবার রিংয়ে পেতে চান। কী জবাব দেবেন আমিরকে?

বিজেন্দ্র: তাই বুঝি? আমি একশো শতাংশ তৈরি। আমি আমির খানকে একটা কথা বলতে চাই। আমির, তুমি পৃথিবীর যেখানে যখন ডাকবে, আমি যেতে তৈরি। তুমি তারিখ ঠিক করো, আমি রিংয়ে নামতে প্রস্তুত।

প্র: শেষ প্রশ্ন, আপনি যদি চিনের বক্সারকে হারাতে পারেন, তা হলে কাকে সেই জয় উৎসর্গ করবেন?

বিজেন্দ্র: সত্যি বলতে আমি এখনও ঠিক করিনি। দেখা যাক, কী করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE