Advertisement
১৬ জুন ২০২৪
অজি এক্সপ্রেস

ফাঁদে পা না-দিয়েই সফল অধিনায়ক কোহালি

পাঠকরা যখন এই লেখা পড়বেন, নতুন বছর শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই এই সুযোগে ভারতের সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আর এই নতুন যুগকে দারুণ ভাবে স্বাগত জানানোর কী দারুণ সুযোগ পাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। যে যুগের নামকরণ করাই যায় ‘বিরাট যুগ’। 

সিডনিতে ইতিহাস হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভারতকে।

সিডনিতে ইতিহাস হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভারতকে।

জেফ থমসন
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৪
Share: Save:

পাঠকরা যখন এই লেখা পড়বেন, নতুন বছর শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই এই সুযোগে ভারতের সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আর এই নতুন যুগকে দারুণ ভাবে স্বাগত জানানোর কী দারুণ সুযোগ পাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। যে যুগের নামকরণ করাই যায় ‘বিরাট যুগ’।

সিডনি টেস্টের আগেই ভারত ২-১ এগিয়ে গিয়েছে। যার মানে হল, এই সিরিজ আর হারছে না কোহালিরা। সিডনিতে ইতিহাস হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভারতকে। যে টেস্ট জিতলেই ইতিহাসে জায়গা করে নেবে কোহালির ভারত। আমার কাছে ভারতই সুবিধাজনক জায়গায় আছে। কারণ ড্র করলেই সিরিজ জিতবে ওরা। আগের লেখায় আমি বলেছিলাম, টিম পেনের সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ভুল করেছিল কোহালি। অস্ট্রেলীয়রা ওই চালটা চালে। বিপক্ষের অধিনায়ককে নানা ভাবে বিব্রত করে তার মনঃসংযোগ নষ্ট করে দেয়। কোহালি খুব তাড়াতাড়ি ওর ভুলটা বুঝতে পেরেছিল। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার ফাঁদে পা দেয়নি। পার্‌থে আমরা দেখেছি, কোহালি বনাম পেনের বাগ্‌যুদ্ধ শিরোনামে চলে এসেছিল। কিন্তু মেলবোর্নে এই নিয়ে এক লাইনও লেখা হয়নি। কোহালির এই স‌ংযম ওর নেতৃত্বেও প্রভাব ফেলেছে। খুব ভাল নেতৃত্ব দিয়েছে। হাতের অস্ত্রগুলোকেও খুব ভাল কাজে লাগিয়েছে। এর আগে ভারত থেকে যে সব অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিল, তারা সবাই ছিল বেশ ভদ্রলোক গোছের। কোহালি আবার হল গিয়ে অনেকটা অস্ট্রেলীয় ধাঁচের।

এই সিরিজে ভারতীয় বোলিং আক্রমণও খুব সাড়া ফেলেছে, তাই না? ওদের বোলিং আক্রমণে একটা নতুন জিনিস দেখা যাচ্ছে, যেটা আগে ছিল না। গতি। এর আগে এক জন ভারতীয় ফাস্ট বোলারকে আমি খুব জোরে বল করতে দেখেছিলাম। সে হল জাভাগাল শ্রীনাথ। ও আর বেঙ্কটেশ প্রসাদ— দু’জনেই এমআরএফ ফাউন্ডেশন থেকে বেরিয়েছে। আমি আর ডেনিস লিলি, একসঙ্গে এমআরএফ ফাউন্ডেশনে কাজ করেছি। দু’জনকে দেখে আমাদের ভাল লেগেছিল। তবে বলতেই হবে, এই পেস আক্রমণ আরও ভাল।

এই পেস আক্রমণের মূল স্তম্ভ হল যশপ্রীত বুমরা। গত ১২ মাসে বুমরা অনেক উইকেট পেয়েছে। ওর বোলিং গড়ও খুব ভাল। উইকেট পিছু ২১ রান। মেলবোর্নের পিচে বেশ ভাল বল করে গেল। বুমরার প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেট আর দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট ভারতকে ম্যাচ জিততে সাহায্য করেছে। পিচে বল একটু ওঠা-নামা করেছে ঠিকই, কিন্তু নয় উইকেট নিতে গেলে আপনাকে মাঠে নেমে ভাল বল করতে হবে। বুমরার বোলিং অ্যাকশনটা একটু ব্যতিক্রমী। বল ছাড়ার সময় ওর বাঁ হাতটা শক্ত হয়ে থাকে, যা বিশেষ একটা দেখা যায় না। মনে হয়, এই অ্যাকশনের জন্যই বুমরা বাউন্সটা একটু বেশি পায়। ওর একটা ব্যাপার আমার খুব ভাল লাগে। সব সময় বল করার জন্য মুখিয়ে আছে। পিচ কী রকম, পিচ থেকে সাহায্য পাবে কি না, এ সব নিয়ে ভাবে না। শুধু বলটা হাতে নিয়ে দৌড় শুরু করতে চায়। আর নিজের একশো শতাংশ দিতে চায়। বলটা হাতে পেলেই বুমরা খুশি।

অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং দেখে আমি বেশ হতাশ। একমাত্র প্যাট কামিন্স ছাড়া আর কেউ নতুন বল সিমে ফেলে ফায়দা তোলার চেষ্টা করল না। এই ব্যাপারে ভারতীয় পেসাররা অনেক বেশি দক্ষতাসম্পন্ন। ক্রিকেট নিয়ে আমি অনেক জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা শুনি। গত দশ বছরে ক্রিকেট নাকি অনেক পাল্টে গিয়েছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। যত্ত সব বাজে কথা। ক্রিকেটের মূল ব্যাপার একই আছে। তুমি ভুল লাইনে বল করো, তোমাকে ব্যাটসম্যান মেরে দেবে। নিজের অফস্টাম্প কোথায় গুলিয়ে ফেলো, তুমি ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যাবে।

এই অস্ট্রেলীয় দলের ব্যাটিং লাইনটা খুবই সাধারণ মানের। ওরা ভাল টেস্ট ক্রিকেটারও নয়। ওদের অস্ট্রেলিয়া দলে খেলতে ডাকা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কত জনের সেই যোগ্যতা আছে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। টপ অর্ডারের তো কোনও ইচ্ছেই দেখলাম না বড় রান করার। প্যাট কামিন্স ওদের সর্বোচ্চ স্কোরার! এতেই বোঝা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের কী হাল। এই ব্যাটিং লাইনে কোনও তারকা ব্যাটসম্যানই নেই। এরা সব গড়পরতা ক্রিকেটার, কেউ খাঁটি ব্যাটসম্যান নয়। শন মার্শ হয়তো একটু ভাল। অস্ট্রেলিয়া ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কয়েক জনকে দিয়ে চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের ব্যাটিংয়ে না আছে সানি গাওস্কর, না আছে সচিন তেন্ডুলকর না বিরাট কোহালি। গ্রেগ চ্যাপেল, ইয়ান চ্যাপেল বা ম্যাথু হেডেনের মতো ব্যাটসম্যান কোথায়? দলে তারকা ব্যাটসম্যানের প্রয়োজন, গড়পরতা ব্যাটসম্যান নয়। হ্যাঁ, স্টিভ স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নার থাকলে পার্থক্য একটা হত ঠিকই, কিন্তু ওদের নিয়ে আলোচনা না করাই ভাল।

সিডনিতে নামার আগে ভারতের চিন্তা হতে পারে ওপেনিং জুটি। হনুমা বিহারীর শর্ট বল খেলার টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন আছে। আরও একটা কথা বলতে চাই। মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে নিয়ে কেরি ও’কিফের মন্তব্যে আমি একটুও মজা পাইনি। ছেলেটা দুই ইনিংসেই ভাল রান করেছে এবং ভারতের জয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে। কেরি ও’কিফের মতো এক জন সাধারণ মানের ক্রিকেটার, যাকে কি না খেলোয়াড় জীবনে কোনও দলই প্রায় নিত না, তার কোনও অধিকারই নেই এক জন প্রতিশ্রুতিমান ভারতীয় ক্রিকেটারকে বিদ্রুপ করার।

(৩৬০ কর থমসন-কলাম)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE