সারে জঁহা সে আচ্ছা...: বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয় উদযাপন। রবিবার, হাজরা এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
দুপুরে পিত্তরক্ষা হয়েছিল চটজলদি পিৎজাযোগে, রাতে জয়োল্লাসে ভুরিভোজ সিআইটি রোডে দলের এক পাণ্ডার ফ্ল্যাটে।
মাঝের সময়টুকু ফুরফুরে হতে মোটরবাইকে গঙ্গার ঘাট হয়ে বৌবাজার থেকে পার্ক স্ট্রিট তুমুল চক্কর দিচ্ছিল যুব-বাহিনী। রবি-সন্ধেয় ধর্মতলার মোড়ে দলটার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
মুখের তেরঙা অলঙ্করণ তখন ঘামে গলে-গলে পড়ছে। তিনটি বাইকে দু’জন করে ছ’জনের দল। দৃশ্যটা বুঝিয়ে দিল যতই বিশ্বায়ন আসুক, উপমহাদেশের দুই পড়শির দ্বৈরথের ঝাঁঝে এখনও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কলকাতা।
এমনিতে ফি-রবিবার ওয়েলিংটনের মাঠে ক্রিকেট খেলতে জড়ো হন তাঁরা। সদ্য চাকরিতে ঢোকা কিংবা কলেজপড়ুয়া তরুণরা এই দিনটায় যে যার বাড়িতে না-কাটিয়ে বৌবাজারে নিজেদের ক্লাবঘরে একসঙ্গে খেলা দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। উজ্জ্বল, কৌস্তুভ, অয়নদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ঠাকুরপুকুরের অরিন্দম অবধি উজিয়ে এসেছেন মধ্য কলকাতায়। ‘আধ ডজন গপ্পো’ বলে চিৎকার করতে করতে বাইক ছুটিয়ে জয়ের উত্তাপটা ওঁরাই ছড়িয়ে দিলেন শহরের রাস্তায়। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের রেকর্ড অক্ষুণ্ণ থাকার মেজাজটাই আলাদা। অনেকের মুখে-মুখেই ঘুরছে, অধুনা পরিচিত টিভির বিজ্ঞাপন। ভারতকে বিশ্বকাপে হারিয়ে বাজি ফাটানোর পাক-স্বপ্ন এ বারও অধরাই থাকল। বিজ্ঞাপনের ভঙ্গিতে ‘কব আয়েগা মওকা’ বলতে বলতে সাঁ সাঁ করে বেরিয়ে গেলেন বাইকবাজেরা।
হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে কলকাতার বৈকালিক উল্লাসের মধ্যে কিছু বেনিয়মও মিশে গিয়েছে। পার্ক স্ট্রিটের কাছে এক যুবক মাথা চুলকে পুলিশকর্মীকে বোঝাচ্ছিলেন, ‘‘হুট করে জয় রাইডে বেরোনোর সময়ে স্যর খেয়াল ছিল না, হেলমেট পরা হয়নি।’’ ‘‘পরের দিন এমন ভুল হলে কিন্তু ছাড় পাবি না!’’বলে যুবকের হাতের তেরঙা পতাকাটা নেড়েচেড়ে ছাড় দিলেন সার্জেন্ট।
শীত-শেষের দুপুরে সপ্তাহান্তের শপিংমলে ভিড় হাল্কাই ছিল রবিবারের তুলনায়। পরপর পাকিস্তানের উইকেট পড়তে শুরু করার পরেই জনতা দলে-দলে উদ্যাপনে পথে নামে। সল্টলেকের শপিংমল-মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমার টিকিট কাউন্টারের পাশেই টিভি রাখা। সেখানে জমায়েতের সম্ভাবনা বুঝেই একটি ইভেন্টের আয়োজন করেছে একটি গাড়ি সংস্থা। ম্যাচ ‘ইন্ডিয়ার পকেটে’ বোঝার পরেই টিভির সামনে ভিড়টা ক্রমশ বাড়তে থাকল।
সন্ধেয় দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ফুডকোর্টে মুখোমুখি দুই বন্ধু। ক্যালিফোর্নিয়া-প্রবাসী মধুরা মিত্র ও যাদবপুরের সুচেতা ভট্টাচার্যের দেখা প্রায় চার বছর বাদে। পুনর্মিলনের এর থেকে ভাল দিন আর কী হতে পারত! পটনার মহম্মদ কাইফ ও সঙ্গীতা যাদব এখন চাকরি সূত্রে কলকাতাবাসী। শপিংমলের জায়ান্ট স্ক্রিনে ক্রিকেট দেখে দারুণ উত্তেজিত নবদম্পতি বলে ফেললেন, “কলকাতার ক্রিকেট-পাগলামোর গল্প অনেক শুনেছি, এই প্রথম চাক্ষুষ করলাম।”
সকালে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে বিরাট-রায়নাদের ব্যাটিং-বিক্রম দেখতে না-পেয়ে রেগে কাঁই হয়েছিলেন লেকটাউন-বাঙুর-দমদম পার্কের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। লেকটাউন যশোহর রোডের মুখে কিছুক্ষণ পথ অবরোধে সামিল হন তাঁরা।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে এমন দাপুটে জয়েও পটকা ফাটানো বা শোভাযাত্রার রীতি অবশ্য এ বার খানিকটা ঢিলে। তবে সকাল-সকাল ফেসবুকের ‘ঠাসঠাস দ্রুমদ্রামে’ দেখা গেল বিরাম নেই। কারও ঘোষণা, এই বিশ্বকাপ মহাভারতের বিরাট-পর্ব হতে চলেছে। কারও দাবি, পয়মন্ত বিগ বি-কে কিন্তু যে ভাবে হোক, ‘ইন্ডিয়া’র সব ম্যাচে চাই। এ সব নিছকই ক্রিকেট বোঝাতে, তেরঙা ও সবুজরঙা পোশাকের শিশুদের গলাগলির ছবিও এন্তার শেয়ার হচ্ছে। ম্যাচ শেষে তোপধ্বনি, নক-আউটে কিন্তু ফের এই পাকিস্তানকেই আর এক বার দেখে নিতে চাই। সাইবার-দেওয়ালের উত্তেজনা ক্রমশ শহরের রেস্তোরাঁ-সিনেমাহলের মোচ্ছবে মিশে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy