তারায় তারায়। শহরে এক ক্রিকেট আড্ডায় গ্যারি কার্স্টেন ও মোহিন্দর অমরনাথ। শনিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
একজন প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক।
অন্যজন ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ- খরা কাটানোর পথপ্রদর্শক।
মোহিন্দর অমরনাথ ও গ্যারি কার্স্টেন।
ইশান্ত-কাণ্ডে প্রথমজন দক্ষিণ মেরুতে তো অপরজন উত্তরে।
ফিটনেস সমস্যা থাকলে, তাঁকে নিয়ে যাওয়া কেন? বিশ্বকাপ থেকে ইশান্ত শর্মার ছিটকে যাওয়ার ঘটনায় যখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সারা দেশে, তখন ২০১১-র বিশ্বকাপজয়ী দলের কোচ এই ব্যাপারে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পাশে। বলছেন, “দরকার হলে বা ভবিষ্যতে কম্বিনেশনের প্রয়োজনে পুরো ফিট নয়, এমন প্লেয়ারকে দলে রাখা যেতে পারে।” আর ’৮৩-র প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়কের বক্তব্য, “পুরোপুরি ফিট দল নিয়েই বিশ্বকাপে যাওয়া উচিত। আধা ফিট ক্রিকেটারের বোঝা বহন করার প্রশ্নই ওঠে না।”
তবে বিষয় যখন বিরাট কোহলির ব্যাটিং অর্ডার বা ক্রিকেটারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের উপর নিষেধাজ্ঞা, তখন দু’জনেই আবার একই জায়গায়। শনিবার শহরে এসে সারা দিন এ ভাবেই কাটালেন দুই বিশ্বকাপ জয়ের দুই তারকা গ্যারি কার্স্টেন ও মোহিন্দর অমরনাথ। ‘কভি হাঁ, কভি না’।
কার্স্টেনের স্বীকারোক্তি, “ভাগ্যিস ২০১১-য় আমার দলে সবাই ফিট ছিল। তবে কখনও কখনও ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বা কম্বিনেশনের চাহিদার কথা ভেবে আধা ফিট প্লেয়ারকে রাখতে হয়। এই আশায় যে, সে ঠিক সময়ে ফিট হয়ে উঠবে। লিগ পর্যায়ে এই ফাটকাটা খেলা চলে। কিন্তু নক আউটে কখনও নয়।” মোহিন্দর অবশ্য বলছেন, “পুরো ফিট দল নিয়ে যাওয়া মানে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস থাকা। তা ছাড়া একটা ফিট দলকে নিয়ে ঠিকঠাক পরিকল্পনাও করা যায়। তা ছাড়া যখন ফিট প্লেয়ার রয়েছে, তখন হাফ-ফিট প্লেয়ার নিয়ে যাবই বা কেন?”
বিশ্বকাপ শুরুর সাত দিন আগে দলের তিন প্রধান ক্রিকেটারকে ফিটনেস টেস্ট দিতে হল। এই দল বিশ্বকাপে কী করবে? প্রথম তিনের মধ্যে কেউই রাখছেন না ভারতকে। গত বার যিনি টিম ইন্ডিয়াকে বিশ্বকাপ জয়ের রাস্তা দেখিয়েছিলেন, সেই ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার পর ভারতকে রাখছেন আরও অনেকের সঙ্গে। কার্স্টেন বলেন, “ভারতকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তানের মতো দলের সঙ্গে লড়ে শেষ চারে জায়গা করে নিতে হবে।” মোহিন্দরও এই ব্যাপারে একমত।
গত ছ’বারের বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে এ বারের দলে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল, সচিন তেন্ডুলকর। যাঁর অভাব কিছুটা হলেও বিরাট কোহলি দিয়ে পূর্ণ করার দিকে তাকিয়ে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু তাঁর উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আখেরে ক্ষতি করতে পারে বলেই বিশ্বাস দুই প্রাক্তন তারকার। গ্যারি বলছেন, “কোহলি দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। ও চাপ নিতেও পারে। কিন্তু তাই বলে ওর উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়াটা ঠিক হবে না।” মোহিন্দরের কথায়, “কোহলি, রাহানের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা খুব ভাল, যা অন্যদের কম। তাই ওদের উপর নির্ভরতা বাড়ছে। কিন্তু সব ম্যাচে ওরাই জেতাবে ভাবলে ভুগতে হবে।”
কিন্তু সেই বিরাটের ব্যাটিং অর্ডার নিয়েই তো অনিশ্চয়তা। তিন, না চারে। কোথায় ব্যাট করা উচিত? মোহিন্দরের বক্তব্য, “দলের ভাল ব্যাটসম্যানদের উপরের দিকেই আসা উচিত। আমি তাই চাইব, বিরাটও তিনে নামুক।” দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ শুধু এই মতে সায় দিয়ে বলেন, “আমারও একই মত।”
বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় শিবিরে যে ভাবে চাপ বেড়ে চলেছে তার মধ্যে ক্রিকেটারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের উপর বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেই ভাল হত বলে মনে করেন দু’জনেই। গ্যারি বলছেন, “স্ত্রী-বান্ধবীদের জন্য পারফরম্যান্স খারাপ হয়, এটা মানতে রাজি নই। ১৯৯৬-এ ভারত সফরের আগে আমাদের উপরও একই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। অনেক লড়াই করে ইডেন টেস্টের তিন দিন আগে আমার বান্ধবী (বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ডেবোরা) আসার পর দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করলাম আমি।”
গল্পটা শুনে মোহিন্দর হেসে বললেন, “আমাদের দেশে এমন হয় না বোধহয়!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy