শপিংয়ের ফাঁকে একটু বিশ্রামে নাইটরা। ছবি: উৎপল সরকার।
রবিন উথাপ্পা ভাল বাঙালি ডিশের সন্ধান করছেন। তরুণী ভক্তের কাছে জানতে চাইছেন, টিম হোটেলের আশেপাশে কোথায় ভাল বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। চটজলদি উত্তরও এল, “আমার মায়ের হাতের রান্না। বাড়িতে আসুন, মাছের ঝোল-ভাত খাওয়াব!”
‘তেরে বিনা জিন্দেগি সে কোই শিকওয়া...’ গানটা তিনি কতটা বুঝলেন কে জানে। অথচ সেটা সুনীল নারিনকেই উৎসর্গ করা হল। নারিন নির্বিকার, গৌতম গম্ভীরকে দেখা গেল টিমের মারণাস্ত্রের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে।
একগাদা শার্ট আর জিন্স হাতে প্রায় হাবুডুবু খাচ্ছেন মর্নি মর্কেল। দীর্ঘদেহী দক্ষিণ আফ্রিকান পেসারের একজোড়া সাদা জিন্স পছন্দ। কিন্তু মাপ মতো জিন্স খুঁজে পাচ্ছেন না। পেতেই সোজা ছুটলেন ট্রায়াল রুমে।
জীবনে কখনও ইন্টারভিউয়ারের চেয়ারে গম্ভীরকে বসতে হয়েছে কি না, সন্দেহ। বুধবার ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর অনুষ্ঠানে বসতে হল। খুদে ভক্ত সামনে, প্রশ্নকর্তা কেকেআর ক্যাপ্টেন। দক্ষ ক্যুইজমাস্টারের মতো গম্ভীর জিজ্ঞেস করলেন, “বলো তো, আমরা যে বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হলাম, সে বছর পরপর ক’টা ম্যাচ জিতেছিলাম?” ভক্তের সঠিক উত্তর (সাতটা) শুনে বিরল হাসির সঙ্গে স্বগতোক্তি, “পারফেক্ট!”
প্যাট কামিন্স আবার ওই বলটা করতে চান। যেটা মঙ্গলবার ডোয়েন স্মিথকে বিহ্বল করে দিয়েছিল, যা দেখে বিশেষজ্ঞদের কারও কারও মনে হয়েছে, বল অব দ্য টুর্নামেন্ট।
ইউসুফ পাঠান ঠিক করে রেখেছেন, আইপিএল আবার জিতলে সেটা ডেডিকেট করবেন সদ্যোজাত পুত্র আইয়ানকে। এবং তিনি নিশ্চিত, ট্রফিটা আবার কেকেআরের ক্যাবিনেটেই ঢুকছে।
টিম কেকেআরকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন কোণে বুধবার প্রায় সারা দিন দুর্গাপুজোর মতো যে আবহ দেখা গেল, তাতে মনে হবে ইউসুফের কথাটা সামান্য হলেও ভুল। ট্রফিটা ক্যাবিনেটে ঢুকবে নয়, ঢুকে গিয়েছে! বাইপাসের ধারে টিম হোটেলে কচিকাঁচা থেকে তরুণ-তরুণীর চিৎকার যে শব্দব্রহ্মের সৃষ্টি করল, তাকে নিঃসন্দেহে মিনি ইডেন বলে দেওয়া যায়। আবার মধ্য কলকাতার অভিজাত শপিং মহল্লায় আট নাইটকে নিয়ে যে পদপিষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা গেল, তা কোনও চ্যাম্পিয়ন টিমকে নিয়েই হওয়া সম্ভব।
কলকাতা ধরে নিচ্ছে, আমরাই চ্যাম্পিয়ন। প্লে-অফ, ফাইনাল সমস্ত হার্ডল টপকানো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
কেকেআর বলে দিচ্ছে, স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ সবে সম্পন্ন। হার্ডল এখনও বাকি।
বৃহস্পতিবার বিরাট কোহলি-এবি ডে’ভিলিয়ার্স-যুবরাজ সিংহের বিরুদ্ধে প্লে-অফ নিশ্চিত করার ম্যাচে নামবে কেকেআর। লিগ টেবলের যা অবস্থা, তাতে কেকেআর শেষ দুটো ম্যাচ হেরে গেলেও প্লে-অফ আটকানো উচিত নয়। কারণ নেট রান রেটে বাকি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আরসিবি এবং হায়দরাবাদের চেয়ে নাইটরা অনেক এগিয়ে। গম্ভীর বলছিলেন, “আর দুটো ম্যাচ আছে কলকাতায়। ওগুলো জিততে হবে। আরসিবি-টা তো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।”
শহরে এসে গেলেন কোহলি, গেইলরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
দিনভর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলেও বিকেলে দেখা গেল, কেকেআরের কেউ কেউ ইডেনে প্র্যাকটিসে ঢুকছেন। পরপর ম্যাচ খেললে এবং জিতলে খুব বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে যা করতে দেখা যায় না। ইডেনে গিয়ে কেকেআর ড্রেসিংরুম-সংস্কৃতির এমন কিছু দৃষ্টান্ত পাওয়া গেল, যা বাকি টিমের কাছে উদাহরণ হতে পারে। যেমন, সঠিক টিম কম্বিনেশনের স্বার্থে জাক কালিসের মতো সিনিয়রও নাকি অনায়াসে ম্যানেজমেন্টকে বলে দেন, আমাকে আজ খেলিও না। যেমন ‘ওপেন ডোর পলিসি’। যেখানে সবচেয়ে জুনিয়র সদস্যও নির্ভয়ে গম্ভীরকে বলে যেতে পারেন, কী করলে টিমের ভাল হবে। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে প্লে-অফ প্রায় নিশ্চিত করে ফেলার নিগূঢ় রসায়ন? পিচের চরিত্র প্রতিপক্ষের চেয়ে ভাল ‘রিড’ করে সঠিক প্রথম এগারো নামানো। কখনও সাকিব, কখনও ক্রিস লিন, কখনও প্যাট কামিন্স।
আরসিবি ম্যাচ? কেকেআর বলে দিচ্ছে, শুধু যুবি-এবি নয়, আরসিবির গেইল-কোহলিও আছে। মানে প্রতিপক্ষকে যথাযথ সম্মান। কিন্তু সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আইপিএল সেভেনের মরুপর্বে এই আরসিবিকেই ক্লোজ ম্যাচে হারিয়েছে কেকেআর। এ বারও না পারার কারণ নেই। তার উপর টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ের মোমেন্টামও আছে।
বুধবার কেকেআরের সারা দিনের নির্যাস কী দাঁড়াল? উৎসবের আবহেও দৃঢ় সংকল্পের বার্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy