মেয়ের আইয়ানার সঙ্গে গর্বিত পিতা।
‘ব্রেক পয়েন্ট’-এর সামনে লিয়েন্ডার পেজ! অতীতে আরও গুরুতর ‘ম্যাচ পয়েন্ট’-এর সামনে পড়েছিলেন একবার! দু’টো ক্ষেত্রেই টেনিস কোর্টে নয়। বরং তার চেয়েও অনেক কঠিন ‘জীবনের ম্যাচ’-এ! ২০০৩-এ সেই মাথায় মারণ টিউমার-কে জয় করে তার পর একাধিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। চল্লিশ বছরের চিরসবুজ লিয়েন্ডার এ বার ভয়ঙ্কর পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত। তাঁর আট বছরের মেয়ে আইয়ানা-র দায়িত্ব কে নেবেন, কার কাছে থাকবে লিয়েন্ডার পেজ-রিয়া পিল্লাইয়ের একমাত্র সন্তান তা নিয়ে বাবা-মার প্রচণ্ড বিরোধ গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত।
ভারতীয় টেনিস আর বলিউডের দুই সেলিব্রিটির পারস্পরিক মনোমালিন্য এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, লিয়েন্ডার যদি মুম্বই হাইকোর্টে রিয়ার বিরুদ্ধে তিরিশ পাতার অভিযোগনামা পেশ করে চিরকালের জন্য মেয়ে আইয়ানাকে আইনত নিজের কাছে রাখার আবেদন করে থাকেন, তা হলে তার ক’দিনের মধ্যেই বান্দ্রা থানায় রিয়া এফআইআর করে লিয়েন্ডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন যে, তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি ভারতের সর্বকালের সেরা ডাবলস তারকা। বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। তাঁর ল্যাপটপ হ্যাক করে গুরুত্বপূর্ণ নথি লোপাট করা হয়েছে। তাঁর টাকা-গয়না চুরি গিয়েছে।
লিয়েন্ডার-রিয়া থাকেন বান্দ্রার কার্টার রোডে। সোমবারও মুম্বই থেকে লিয়েন্ডারের বাবা ডাক্তার ভেস পেজ মোবাইলে দাবি করলেন, আইয়ানার বাবা-মা একই বাড়িতে থাকছে। তবে দু’জনের সম্পর্ক যে তলানিতে এসে পৌঁছেছে সেটা অস্বীকার করছেন না সিনিয়র পেজ। লিয়েন্ডার তাঁর বিরুদ্ধে আনা রিয়ার যাবতীয় অভিযোগ এ দিন নস্যাৎ করে দিয়েছেন। মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, “আইয়ানা আমার পৃথিবী। যা নিয়ে আমি প্রতি মুহূর্তে গর্ববোধ করি।” সঙ্গে লিয়েন্ডারের দাবি, “আমার বিরুদ্ধে রিয়া পিল্লাইয়ের সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমার আর আমার আইনজীবীর কাছে সমস্ত প্রমাণ রয়েছে।” চলতি মাসের গোড়ায় লিয়েন্ডার আদালতে পিটিশন দাখিল করার পর গত সপ্তাহে তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা এফআইআর করেন রিয়া।
ঘনিষ্ঠমহলে লিয়েন্ডার এমনও বলেছেন যে, আইয়ানাকে সারা জীবনের মতো নিজের কাছে রাখার আইনত অধিকার পেতে তিনি প্রয়োজনে টেনিস খেলাই ছেড়ে দেবেন। মাস কয়েক আগে এআইটিএ-কে চিঠি দিয়ে লিয়েন্ডার জানিয়েছিলেন, তিনি ২০১৪-এ ভারতের হয়ে কোনও টুর্নামেন্টে খেলতে চান না। তার মধ্যে যেমন ডেভিস কাপ আছে, তেমনই আছে আসন্ন এশিয়াড ও কমনওয়েলথ গেমস। তখনই ভারতীয় টেনিসমহলে খবর ছিল যে, পারিবারিক জটিলতার কারণে লিয়েন্ডারের এমন সিদ্ধান্ত। লিয়েন্ডার-রিয়ার বিবাহবিচ্ছেদের কথাও শোনা গিয়েছিল। আবার অনেকে বলে থাকেন, দু’জনের আইনত বিয়ে হয়নি। বছর দশেকের সম্পর্কে একটি কন্যা সন্তান তাঁদের। যে দুটো ব্যাখার কোনওটাই স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই করেননি লিয়েন্ডার-রিয়া। কিন্তু এখন স্পষ্ট যে, দু’জনের মধ্যে ন্যূনতম বনিবনা নেই।
এই অবস্থায় রিয়া যদি পাশে পেয়ে থাকেন বলিউডের নামী পরিচালককে, তা হলে লিয়েন্ডার এ দিন এমন একজনকে পাশে পেয়েছেন যা অভাবনীয়! তিনি মহেশ ভূপতি, লিয়েন্ডারের একদা বহু পেশাদার ডাবলস খেতাবের সঙ্গী, আবার একই সঙ্গে কোর্টের বাইরে তাঁর তীব্র সমালোচক। এমনকী দিন কয়েক আগে পদ্মভূষণ নিতে দিল্লিতে গিয়েও লিয়েন্ডার অভিযোগ করেছিলেন যে, দু’বছর আগে লন্ডন অলিম্পিকে তাঁর ভাল পার্টনার না পাওয়ার পিছনে কলকাঠি নাড়িয়েছিলেন মহেশ। লন্ডন অলিম্পিকটা মহেশের জন্যই তাঁর কাছে দুঃখের হয়ে আছে। কিন্তু এ দিন মহেশ টেনিসমহলকে অবাক করে দিয়ে বলেছেন, “লিয়েন্ডার মোটেই গালাগাল দেওয়ার বা হিংসাত্মক হয়ে ওঠার মতো ছেলে নয়। আমাদের মধ্যে হাজারটা বিষয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু এটা ওর জীবনের ভীষণ আবেগময় একটা বিষয়। এবং লিয়েন্ডারের মতো ছেলে কাউকে, বিশেষ করে যে কিনা ওর পরম প্রিয় একমাত্র মেয়ের মা, তাকে গালাগাল দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে এটা সত্যের থেকে অনেক দূরের ব্যাপার। বিশ্বাস করি না। এ ব্যাপারে আমি লিয়েন্ডারের পাশে আছি। তা ছাড়া, আইয়ানা ওর বাবার খুব কাছের। গত আট বছর প্র্যাকটিস কোর্টে হামেশাই লিয়েন্ডারের সঙ্গে আইয়ানাকে দেখেছি।” করণ জোহর আবার রিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, “রিয়াকে দু’দশক ধরে চিনি। ভীষণ নরম স্বভাবের মিষ্টি মেয়ে। ও এমন কিছু করতেই পারে না।”
মহেশ ও রিয়া।
আসলে কিছু দিন আগে পদ্মভূষণ নিতে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে লিয়েন্ডার যাওয়ার সময় আইয়ানাকে সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। যার ঘোরতর আপত্তি করেন রিয়া। এবং শেষ পর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে পদ্মভূষণ নেওয়া হয়নি লিয়েন্ডারের। তার পরেই প্রচণ্ড অভিমানী হয়ে লিয়েন্ডার মুম্বই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন, আইনত চিরকালের জন্য মেয়ের দায়িত্ব পেতে। যার শুনানি জুন মাসে হওয়ার কথা বলে এ দিন জানালেন ভেস পেজ। এর পর গত সপ্তাহে রানি মুখোপাধ্যায়ের ভাইঝির জন্মদিনের পার্টিতে আইয়ানাকে নিয়ে যান রিয়া। এবং সেখানে মেয়েকে রেখে বান্দ্রার বাড়িতে পোশাক পরিবর্তন করতে এলে তাঁকে লিয়েন্ডারের তরফে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রিয়ার। পুলিশ ডেকে তিনি শেষমেশ বাড়ি ঢোকেন। এবং সেই সময়েও বাড়ির সামনে ‘লিয়েন্ডারের জোগাড় করে রাখা জনাকয়েক গুণ্ডা’ তাঁকে অকথ্য গালিগালাজ করেন বলে এফআইআরে অভিযোগ করেছেন রিয়া। লিয়েন্ডারের আইনজীবী জুলফিকার মেমন আবার পাল্টা রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে, ওই বাড়িতে লিয়েন্ডারের বাবা-মা এলে তাঁরা যে গেস্ট রুমে থাকেন, সেটা মিস্ত্রি ডেকে সারাচ্ছিলেন লিয়েন্ডার। রিয়াই বরং সেই ঘরটাকে তাঁর পুজোর ঘর, এই ‘অন্যায়’ দাবি তুলে সারাইয়ের কাজে বাধা দিয়েছিলেন।
লিয়েন্ডারের অভিযোগ, রিয়ার কাছে থাকলে তাঁর মেয়ের ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকবে না। রিয়া দিনভর ‘কিটি পার্টি’ করে কাটান। এমনকী অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে রিয়ার বিবাহবিচ্ছেদ না-হওয়ার কথা তাঁর কাছে প্রাক্তন মডেল এত দিন লুকিয়ে রেখেছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন লিয়েন্ডার। পাল্টা রিয়া অভিযোগ করেছেন, তিনি সন্তানসম্ভবা হওয়া থেকেই দু’জনের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। লিয়েন্ডার বছরে পঁচিশ-তিরিশ সপ্তাহ বিদেশে খেলতেই ব্যস্ত থাকেন। মেয়েকে দেখভাল করার তাঁর সময় কোথায়?
সব মিলিয়ে লিয়েন্ডার-রিয়া ‘ম্যাচ’ তাই আপাতত ‘ডিউস’ চলছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy