Advertisement
১১ মে ২০২৪

অঙ্কুর-কাণ্ডেও হুঁশ নেই হাসপাতালের

নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়ে হাত বাদ গিয়েছে রানিগঞ্জের বল্লভপুরের বাসিন্দা অঙ্কুর সীটের। বুধবার ওই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার-সহ শিশু বিভাগে অঙ্কুরের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মোট ছ’জন ডাক্তার-নার্সকে শো-কজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।

চিকিৎসক না আসায় প্রসূতি বিভাগের সামনে ক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

চিকিৎসক না আসায় প্রসূতি বিভাগের সামনে ক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৫
Share: Save:

নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়ে হাত বাদ গিয়েছে রানিগঞ্জের বল্লভপুরের বাসিন্দা অঙ্কুর সীটের। বুধবার ওই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার-সহ শিশু বিভাগে অঙ্কুরের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মোট ছ’জন ডাক্তার-নার্সকে শো-কজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও অপরাধ প্রমাণের পর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়ে যাতে কোনও রকম টালবাহানা না হয়, তার জন্যও স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বৃহস্পতিবারেও আসানসোল জেলা হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের টনক নড়েনি বলেই অভিযোগ রোগীর পরিজনদের।

প্রথমেই যাওয়া গেল হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে। মহীশিলার এক বাসিন্দা পেটে ব্যথা নিয়ে সার্জিক্যাল বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। ওই রোগীর আত্মীয় প্রবীর চৌধুরির অভিযোগ, বুধবার রাতে তাঁর আত্মীয়কে স্যালাইন দিতে আসেন হাসপাতালের এক কর্মী। অভিযোগ, ওই রোগীর শিরা খুঁজতে গিয়ে সূচের খোঁচায় ঝরঝর করে রক্ত বের হতে থাকে। রক্তে ভিজে যায় বিছানার চাদর। অভিযোগ, নার্সদের কাছে সে কথা বলতে গিয়ে জোটে মুখঝামটা— ‘‘ও সব ডাক্তার বুঝে নেবেন।’’ এরপরই প্রবীরবাবু তাঁর শ্যালককে জেলা হাসপাতাল থেকে নিয়ে চলে যান। বারাবনির জামগ্রাম থেকে অসুস্থ মা’কে নিয়ে এসেছেন বাবন রজক। আপাতত বাবনবাবুর মা হাসপাতালে আইসিইউ-তে ভর্তি রয়েছেন। বাবনবাবুর অভিযোগ, ‘‘মায়ের অবস্থা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে ডাক্তারবাবু থেকে নার্স, কেউই কথা বলতে চান না।’’ শিশু বিভাগে নাতিকে ভর্তি করিয়েছেন জামুড়িয়ার বাসিন্দা কল্পনা গড়াই। তাঁর ক্ষোভ, উপযুক্ত চিকিৎসা মিলছে না। নার্সদের কাছে নাতির অসুস্থতার কথা বলতে গিয়েও লাভ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই হাসপাতাল ছেড়ে বাইরে বেশি খরচে চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানা গেল। বিনয় দে নামে এক রোগী বলেন, ‘‘দিনে এক বার চিকিৎসকের দেখা মেলে। ভাবছি বাইরে গিয়ে অন্য কোনও চিকিৎসককে দেখাবো।’’

বৃহস্পতিবার, সকাল সাড়ে ১০টা। হাসপাতালের বহির্বিভাগ। গুটিকয় চিকিৎসক ছাড়া খাঁ খাঁ করছে ডাক্তারবাবুদের চেয়ার। অথচ উপচে পড়ছে রোগীর ভিড়। যেমন শল্য বিভাগের সামনে দেখা গেল, প্রায় জনা পঁচিশ রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। অথচ চিকিৎসকের দেখা নেই। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন তুলসি বন্দিযোপাধ্যায় নামে এক বছর সত্তরের বৃদ্ধ। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এতক্ষণ ধরে বসে আছি। শুনছি ১১টার আগে চিকিৎসক আসবেন না।’’ দাঁতের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন তীর্থেন্দু সরকার নামে এক জন। ঘণ্টা দু’য়েক ঠাই বসেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি বলে জানান তীর্থেন্দুবাবু। স্নায়ু বিভাগের সামনে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বসে রয়েছেন পুরুলিয়ার মধুকুণ্ডার বাসিন্দা ভারতী গরাই।

প্রসূতি, অস্থি-সহ প্রায় সবকটি বিভাগেই ভোগান্তির ছবিটা একই রকম বলে দেখা গেল।

ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতাল হিসেবে উন্নীত করা হয়। শহরবাসীর আশা ছিল, এর পরে অবস্থার বদল হবে। কিন্তু অঙ্কুরের ঘটনা ফের জেলা হাসপাতালের দৈন্য দশাটাকেই প্রকট করল বলে মনে করছেন শহরবাসীর একটা বড় অংশ। তবে চিকিৎসায় গাফিলতি ও রোগীর পরিজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ নতুন নয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। এর আগে পরিষেবা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনেও অভিযোগ করা হয়েছে।

তার পরেও জেলা হাসপাতাল তিমিরেই। যদিও হাসপাতাল সুপার নিখিলচন্দ্র দাসের দাবি, ‘‘যে কোনও অভিযোগ এলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE