—নিজস্ব চিত্র।
আন্দুল রাজবাড়ির দেবত্র সম্পত্তি নষ্ট করার ব্যাপারে মঙ্গলবার অভিযোগ দায়ের হল সাঁকরাইল থানায়। অভিযোগ, শাসক দল প্রভাবিত স্থানীয় একটি ক্লাব দেবত্র সম্পত্তির নানা অংশ দখল করার চেষ্টা করছে।
১৮৩০ সালে রাজা রামনারায়ণ রায় এই রাজবাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। চলে ১৮৩৪ পর্যন্ত। বাড়ির সামনে কেবল মাঝের অংশে গোটা ১২ স্তম্ভ, এক একটি প্রায় ৬০ ফুট উঁচু। এটিকে বলে নাচঘর। এই অংশে, একতলায় একটি বড় হলঘর একটি ক্লাব ব্যবহার করতে শুরু করে। আন্দুল রাজবাড়ির অন্যতম শরিক অরুণাভ মিত্র এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘অংশটি দেবত্র সম্পত্তি। বার বার বলেও ওই জায়গা খালি করানো যায়নি। ক’দিন আগে ক্লাবের কিছু ছেলে উপরের ছাদের একাংশ জোর করে ভেঙে দিয়েছে। এ দিন থানায় ডায়েরি করেছি।’’
সাঁকরাইল থানার এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘মিত্র পরিবারের কিছু শরিকের সঙ্গে ওই ক্লাবের দীর্ঘ দিন ধরে মন কষাকষি চলছে। এটা তারই জের। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ অভিযুক্ত আন্দুল স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ক্লাবঘরের জায়গা খালি করার প্রশ্ন উঠছে কী ভাবে? ১১০ বছর আগে ওই রাজপরিবারের শরিকরাই স্থানীয় ছেলেদের খেলা ও সাংস্কৃতিক কাজের জন্য ক্লাবটি তৈরি করিয়েছিলেন। আমাদের বেআইনি দাবি করে ১৯৬২-তে এক শরিক আদালতে যান। ১৯৬৫-তে আদালত আমাদের পক্ষেই রায় দিয়েছে।’’
উল্লিখিত ক্লাবটির পাশে নাচঘরের ভিতরে এককালে ছিল ২০টি বাহারি স্তম্ভ। উপর থেকে ঝুলত সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। নামী বাঈজি, নর্তকীদের মজলিস লেগেই থাকত। এর দু’পাশে তিন তলা ভবনের দু’টি অংশ। প্রতিটি তল প্রায় ২০ ফুট উঁচু। গোটা অংশ সংস্কার ও সংরক্ষণ করে পর্যটনকেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কী ভাবে হবে এই কাজ, তার রূপরেখা তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছে অর্থ। এই অবস্থায় ছাদ ভাঙলেন কেন? অশোকবাবুর জবাব, ‘‘উপরের পরিত্যক্ত অংশ থেকে ক্লাবে জল পড়ছিল। এ অবস্থায় যেখান দিয়ে জল পড়ছিল কিছু ছেলে সেই অংশ ভাঙতে বাধ্য হয়।’’
অকুস্থলে গিয়ে দেখা গেল, রাজবাড়ির নাচঘর ভেঙে চৌচির। উপরের খোলা ছাদ দিয়ে সরাসরি নীচে বৃষ্টির জল পড়ে। চারপাশ আগাছায় ভরা। সামনের প্রায় তিন বিঘা আয়তনের খোলা মাঠের অধিকারেও যেন থাবা বসিয়েছে অন্যরা। তা নিয়ে সঙ্গত ক্ষোভ রাজবাড়ির অন্যতম মালিক অরুণাভ মিত্রের। তিনি বলেন, “আমরা সংস্কার-সংরক্ষণের প্রস্তাবে সায় দিয়েছি। প্রশাসনিক অফিসারেরা কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছেন।” সংরক্ষণে পারদর্শী আইআইটি-র অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারও এসেছিলেন।
অরুণাভবাবুর অভিযোগ, রাজবাড়ির সামনের মাঠটি দেবত্র। সেটিও ক্লাব দখল করেছে। এ ব্যাপারে অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘আদালত রায় দিয়েছে, বছরে ৩৬৪ দিন আমরা ওখানে খেলতে পারব। বাকি একটা দিন শিবঠাকুর, গোপালজী ও অন্নপূর্ণার প্রতি ভক্তি জানাতে খালি রাখা হবে।’’ ক্লাবটির সঙ্গে শাসক দলের একাংশের অভিযোগ তুলে অরুণাভবাবু বলেন, ‘‘আমিও তৃণমূল কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সমর্থক। বাম আমলেই এই অঞ্চলে আমি তৃণমূল সংগঠন তৈরির কাজ শুরু করেছিলাম।’’ অন্য দিকে অশোকবাবু এ কথার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘সব দলের কর্মী-সমর্থকরাই এতে আছেন। রাজবাড়ির দু’জন শরিকও এই ক্লাবের পরিচালনমণ্ডলীতে থাকতে পারেন। ক্লাবটির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy