অশোক মিত্র
বামেদের নানা ভুলভ্রান্তির তিনি বরাবরের কড়া সমালোচক। সেই অশোক মিত্রের কণ্ঠেই এ বার কঠোর ভর্ৎসনা শোনা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বস্তুত, যে ভাবে তিনি মমতার দল ও সরকারের সমালোচনা করেছেন, তীক্ষ্মতায় তা ছাপিয়ে গিয়েছে ইদানীং কালে সিপিএম নেতাদের বক্তব্যকেও!
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে সরাসরি ‘আঁস্তাকুড়-নিবাসী নেত্রী’ বলে তুলোধোনা করেছেন বাম জমানার প্রথম অর্থমন্ত্রী। মমতার আমলে রাজ্য জুড়ে ‘গুণ্ডাশাহি ও দুর্নীতি-শাহি’ গড়ে উঠেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, সমাজবিরোধীরা সরকারে গিয়ে বসলে যা হওয়ার, পশ্চিমবঙ্গে এখন তা-ই হচ্ছে! তৃণমূলের রাজত্বকে সমাজবিরোধীদের সরকার বলে প্রথম কটাক্ষ করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্য চালানোর নীতি ও বহু সিদ্ধান্তের প্রশ্নে বুদ্ধবাবুর সমালোচক হলেও তাঁর ওই মূল্যায়নের সঙ্গে মিলেই গিয়েছে অশোকবাবুর মত। এবং তাঁর এই আক্রমণে ঈষৎ হতভম্বই হয়ে গিয়েছে তৃণমূল! সারদা-কাণ্ডের সময় বাম জমানার ঘাড়ে দোষ চাপাতে গিয়ে তৃণমূল নেতারা বারবার বলেছেন, বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমা আটকাতে সরকারি স্তরে যতটুকু পদক্ষেপ করার, করেছিলেন অশোকবাবুই। সেই অশোকবাবুর দিক থেকেই এ বার প্রবল আক্রমণ আসায় পাল্টা বলতে গিয়েও সাবধানী হতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে!
আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, প্রসেনজিৎ বসুদের ‘গণমঞ্চে’র তরফে মঙ্গলবার সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী কনভেনশন উদ্বোধনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অশোকবাবুকে। অসুস্থ শরীরে মৌলালি যুব কেন্দ্রে আসতে পারেননি তিনি। বাড়ি থেকেই ভিডিও-বার্তায় তিনি বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা, একটি দলের হাল ধরে আছেন আস্তাকুঁড়-নিবাসী এক নেত্রী! এই দলের মুখোশ খুলে দেওয়াই এখন প্রধান দায়িত্ব।” তাঁর আরও বক্তব্য, “সমাজবিরোধীরা যদি সরকার গঠন করে, তার মধ্যে নানা অন্তর্বিরোধ থাকে। এখানেও তা-ই হচ্ছে। গুণ্ডাশাহি, দুর্নীতি-শাহি চলছে। প্রতিনিয়ত নানা অন্যায় হচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর নির্দিষ্ট কোনও মন্তব্য বা কাজের কথা অশোকবাবু উল্লেখ করেননি ঠিকই। কিন্তু একের পর ঘটনায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে নিজের দিশাহীনতা প্রকট করে তুলছেন এবং ভাষায় বেলাগাম হয়ে পড়ছেন, সাম্প্রতিক সে সব প্রসঙ্গের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন প্রবীণ বাম নেতা।
যার প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “অশোকবাবু বিদ্বান মানুষ। তাঁর নামের সঙ্গে এমন কথা শোভনীয় নয়!” পার্থবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, “তিনি যাঁদের সমকক্ষ, সেই জ্যোতি বসুরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে নানা উক্তি করেছিলেন। বাংলার মানুষ কিন্তু জননেত্রী মমতার পাশে থেকেছেন। অশোকবাবুর এই মন্তব্যের জবাবও মানুষ দেবেন!” সিঙ্গুর-পর্ব থেকে চিট ফান্ড, নানা প্রশ্নে অশোকবাবু যে বামেদের সমালোচনা করেছিলেন, তা-ও উল্লেখ করেছেন পার্থবাবু।
বামফ্রন্ট সরকারের শেষ দিকের কিছু ভুলের জন্যই মানুষ যে পরিবর্তন এনেছিলেন, সে কথা কিন্তু এ দিনও উল্লেখ করেছেন অশোকবাবু। তবে প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা হিসাবে তাঁর আহ্বান, রাজ্যে এই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে বিকল্প হিসাবে ফের উঠে আসার জন্য সক্রিয় হোক বামেরাই। এবং এই সূত্রেই বিজেপি-কে রেয়াত করেননি অশোকবাবু। তাঁর কথায়, “তাদের (তৃণমূল) জায়গা নেবে কে? আপাতত বামপন্থীরা একটু ইতস্তত, একটু কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হিন্দুত্বের ভেকধারী কিছু শক্তি এখানে এগিয়ে আসছে। বামপন্থীদের কাছে নিবেদন, নিজেদের নিহিত শক্তিকে পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে।” পাশাপাশিই অশোকবাবুর পরামর্শ, “বামপন্থীদের পবিত্র, বিশুদ্ধ থাকতে হবে। পরাশ্রয়ী হলে চলবে না। যে দলের দুরাচারের (ইঙ্গিত কংগ্রেসকে) জন্য বিজেপি গোটা দেশে প্রাধান্য বিস্তারের সুযোগ পেয়েছিল, তাদের সঙ্গে সাময়িক হাত মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রোখার ভাবনা অলীক স্বপ্ন!” কনভেনশনে রেজ্জাকেরা এ দিন বিজেপি-কে সাম্প্রদায়িক বলার পাশাপাশি তৃণমূলকেও ‘মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা’র দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। রেজ্জাক জানিয়েছেন, ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সভার প্রতিবাদে জমায়েত করবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy