Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইডির সওয়ালের জবাব লিখে এলেন অর্পিতা

তিনি বলেছিলেন, নিজের কেন্দ্রে ভোট মিটে যাওয়ার পরের দিনই হাজিরা দেবেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর সামনে। কথা রাখলেন অর্পিতা ঘোষ। বৃহস্পতিবারই ভোট হয়েছে বালুরঘাটে। আর শুক্রবার সল্টলেকে ইডি-র অফিসে হাজির হয়ে আড়াই ঘণ্টা ধরে তদন্তকারীদের নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর হাতে লিখে জমা দিয়ে আসতে হয়েছে তাঁকে।

জামিন মিললেও মিলল না জামিনদার। অগত্যা তাই জেলের পথে সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালি সেন। (পাশে) ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন সুদীপ্ত-পুত্র শুভজিৎ সেন।  ছবি: রণজিৎ নন্দী ও শৌভিক দে।

জামিন মিললেও মিলল না জামিনদার। অগত্যা তাই জেলের পথে সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালি সেন। (পাশে) ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন সুদীপ্ত-পুত্র শুভজিৎ সেন। ছবি: রণজিৎ নন্দী ও শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৮
Share: Save:

তিনি বলেছিলেন, নিজের কেন্দ্রে ভোট মিটে যাওয়ার পরের দিনই হাজিরা দেবেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর সামনে। কথা রাখলেন অর্পিতা ঘোষ। বৃহস্পতিবারই ভোট হয়েছে বালুরঘাটে। আর শুক্রবার সল্টলেকে ইডি-র অফিসে হাজির হয়ে আড়াই ঘণ্টা ধরে তদন্তকারীদের নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর হাতে লিখে জমা দিয়ে আসতে হয়েছে তাঁকে।

ইডি যে তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে, সে কথা দিন কয়েক আগে বালুরঘাটে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেই জানিয়েছিলেন অর্পিতা। বলেছিলেন, সারদার অধীনস্থ একটি চ্যানেলের কার্যনির্বাহী সম্পাদক ছিলেন তিনি। চ্যানেলের সহকর্মীদের হয়ে সারদা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআর তিনি করেছিলেন বলেও সে দিন দাবি করেন তৃণমূলের নাট্যকর্মী-প্রার্থী। ইডি সূত্রের খবর, ওই চ্যানেলের আর্থিক হিসেব-নিকেশ ও সম্প্রচার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অর্পিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, ওই সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র তাঁর কাছে রয়েছে কি না। কিন্তু অর্পিতা জানিয়েছেন, সেই তথ্য তাঁর কাছে নেই। প্রসঙ্গত, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালি (এ দিন যাঁর জামিন মঞ্জুর হলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে মুক্তি পাননি) ও ছেলে শুভজিৎকে গ্রেফতার করার দিন কয়েক পরেই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। সারদার মালিকানায় থাকা একটি পত্রিকার হিসেব-নিকেশ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর কাছে।

ইডি-র দফতরে এ দিন অর্পিতা আসেন বিকেল চারটে নাগাদ। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে বেরিয়ে জানান যে, ইডি-র তদন্তকারীদের তিনি বলেছেন, ওই চ্যানেলে তিনি চাকরি করতেন। চ্যানেলটির হিসেব-নিকেশের কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই। অর্পিতার কথায়, “ইডি-র অফিসারেরা আমায় সব প্রশ্নের উত্তর লিখে দিতে বলেন। অনেক দিন হাতে লেখার অভ্যাস নেই। সেই কারণে বেরোতে দেরি হল।”

শুক্রবার অবশ্য ইডি-র দফতরের বাইরেও প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্পিতা। প্রসঙ্গ, গাড়ি। হাওড়া স্টেশনে নেমে এ দিন যে গাড়িটিতে চড়ে অর্পিতা ইডি অফিসে আসেন, তার কাচে ‘নবান্ন মেন গেট’ লেখা একটি পার্কিং স্টিকার সাঁটা ছিল। এর ঠিক উপরেই ছিল ‘পরিবহণ দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার’ লেখা আরও একটি স্টিকার। কেন তিনি এমন স্টিকার সাঁটা গাড়িতে এলেন, সেই প্রশ্ন করা হলে অবশ্য কিছু বলতে চাননি তৃণমূল প্রার্থী।

পরিবহণ দফতরের স্টিকার দেওয়া এই গাড়িতেই ইডি-র দফতরে গিয়েছিলেন অর্পিতা ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

এ দিনই ইডি-র হেফাজত থেকে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয় সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী ও ছেলেকে। পিয়ালি সেনের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর হলেও বিচারকের নির্দেশ মতো স্থাবর কোনও সম্পত্তির ‘বন্ড’ জমা দিতে না পারায় এ দিন মুক্তি পাননি তিনি।

তাঁকে জেল হেফাজতেই পাঠানো হয়। পিয়ালির আইনজীবী সমীর দাস জানান, ওই বন্ড জোগাড়ের চেষ্টা চলছে।

বৃহস্পতিবার পিয়ালিকে সঙ্গে নিয়ে সল্টলেকের একটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেখান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল সুদীপ্তের পারিবারিক অ্যালবামের বেশ কিছু ফটোগ্রাফ। বৃহস্পতিবার রাতেই সেই ছবিগুলির কয়েকটি নিয়ে পিয়ালিকে জেরা করেছিলেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রের খবর, ওই ছবিগুলির মধ্যে সুদীপ্তের সঙ্গে রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং এক মহিলা আইনজীবীর ছবিও ছিল। বছরখানেক আগে ওই মহিলা আইনজীবীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যু নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মন্ত্রীটিও।

ইডি-র তদন্তকারীরা ওই মহিলা আইনজীবী ও মন্ত্রীর ছবি দেখিয়ে পিয়ালির কাছে জানতে চান, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ওই দু’জনের কী সম্পর্ক ছিল? ইডি-র দাবি, পিয়ালি তাদের জানিয়েছেন, ওই মহিলাকে সারদা গোষ্ঠীর আইনি উপদেষ্টা করা হয়েছিল। মন্ত্রীও তাঁদের পরিবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাকতেন। ওই মন্ত্রী অবশ্য বারবারই দাবি করেছেন, তিনি সুদীপ্তের স্ত্রী পিয়ালিকে চিনতেনই না। ছবি ছাড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ইডি-র এক অফিসার এ দিন জানান, বছর দুয়েক আগে রাজ্যের একটি চলচ্চিত্র উৎসবে স্পনশরশিপ বাবদ ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন সুদীপ্ত। সেই স্পনশরশিপের নথিও ইডি-র হাতে এসেছে বলে সূত্রের দাবি।

এ দিন ইডি-র আইনজীবীরা পিয়ালির জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেননি। বিচারক জামিন মঞ্জুর করে জানান, প্রয়োজন হলেই পিয়ালিকে তদন্তকারীদের কাছে হাজির হতে হবে। ইডি-র অনুমতি ছাড়া তিনি অন্যত্র যেতে পারবেন না।

তবে শুভজিতের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি। আইনজীবীরা জানান, শুভজিতের নামে-বেনামে থাকা আরও অনেক সম্পত্তির হদিস এখনও মেলেনি। তিনি জামিন পেলে ওই সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া কঠিন হবে। ইডি-র এই বক্তব্য শোনার পরে শুভজিৎকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arpita ghosh ed saradha case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE