Advertisement
০৭ মে ২০২৪

এটা রাজ্যের বিধানসভা নয়, বললেন ক্ষিপ্ত রুডি

আগামী কাল নয়াদিল্লিতে পা রাখছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঠিক আগে সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির তীব্র বাদানুবাদে আজ ফের তেতে উঠল সংসদ। লোকসভার জিরো আওয়ারে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছয়, সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডি তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দিকে আঙুল তুলে বলেই ফেলেন “এটা পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা পাননি! ভারতের সংসদ এটা!”

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৪
Share: Save:

আগামী কাল নয়াদিল্লিতে পা রাখছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঠিক আগে সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির তীব্র বাদানুবাদে আজ ফের তেতে উঠল সংসদ। লোকসভার জিরো আওয়ারে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছয়, সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডি তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দিকে আঙুল তুলে বলেই ফেলেন “এটা পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা পাননি! ভারতের সংসদ এটা!”

সংসদ শুরু হওয়ার আগে মূল দরজার সামনে তৃণমূল সাংসদদের কেন্দ্র-বিরোধী ধর্না এখন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্লোগান মূলত এক হলেও, আঙ্গিকে নানা বৈচিত্র দেখাচ্ছেন তৃণমূল সাংসদরা। কালো ছাতা, লাল ডায়েরি, কালো শাল, চটের ব্যাগ, মুখে ঠুলি তালিকাটি অভিনব। যা দেখে আজ কলকাতায় সিপিএমের জনসভায় রাজ্যের বিরোধী নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ব্যঙ্গ করে বলেছেন, “মনে হচ্ছে দিল্লিতে ওঁরা দলের কফিন বইছেন! সবাই কালো পোশাক, কালো চাদর, মুখে কালো ঠুলি!” আজ সকালে অবশ্য কোনও নাটক ছাড়াই তৃণমূল সাংসদেরা স্লোগান দিয়েছেন। মূল অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর কেন্দ্রের আঘাত।

লোকসভা শুরু হওয়া মাত্র তৃণমূল সাংসদরা ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে থাকেন। পনেরো মিনিট চিৎকার করার পর কিছু ক্ষণের জন্য কক্ষত্যাগ করেন তাঁরা। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্যের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া, সিবিআইকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা, যোজনা কমিশন বন্ধ করে দেওয়ার মতো বিষয়গুলির প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূল নেতা সৌগত রায় স্পিকারের কাছে আজ মুলতুবি প্রস্তাবও জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু এক সঙ্গে এতগুলি বিষয় নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনা যায় না বলে স্পিকার তা খারিজ করে দেন। তবে এর মধ্যে একটি বিষয় জিরো আওয়ারে তোলার অনুমতি পান সৌগতবাবু।

কিন্তু জিরো আওয়ার শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই অন্য তরজায় জড়িয়ে পড়েন দুই দলের নেতারা। সূত্রপাত অবশ্য কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের বক্তব্যে। তিনি গত কাল সিডনি সন্ত্রাসে আটকে পড়া দুই পণবন্দির প্রসঙ্গ তুলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে বিবৃতি চান। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বা সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু দু’জনের কেউই লোকসভায় ছিলেন না। জবাব দিতে ওঠেন সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডি। তিনি দু’লাইন বলতে না বলতেই উঠে দাঁড়ান সৌগতবাবু। তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেন, “এই বিষয়টি বিদেশমন্ত্রীর এক্তিয়ারে পড়ে। আপনি কেন এর উত্তর দিচ্ছেন?” জবাবে রুডি উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “আমি সরকারের মন্ত্রী। উত্তর দেওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। আপনি আমাকে বাধা দেওয়ার কে?” এর পর তৃণমূল এবং বিজেপি উভয় বেঞ্চ থেকেই হট্টগোল শুরু হয়। তারই মধ্যে রুডি স্পিকারের দিকে তাকিয়ে বার বার বলতে থাকেন, “উনি কে? বাধা দিচ্ছেন কেন?” স্পিকার এক বার বলেন, “সৌগতবাবু এটা ঠিক নয়। আপনি বসুন।” কিন্তু তাতে পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় রুডি ফের বলতে থাকেন, “সৌগত রায় আপনার সমস্যাটা কী? ম্যাডাম স্পিকার, এটা এদের অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। আমি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছি।”

তৃণমূলের হয়ে এ দিন আবার ব্যাট করতে নামেন কংগ্রেসের খাড়্গে! কলরবের মধ্যেই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “এক জন লোকসভার সদস্যকে মন্ত্রী চ্যালেঞ্জ করতে পারেন না। উনি কেন এই উত্তর দিচ্ছেন, সেটুকু জানাতে পারেন। কিন্তু এক জন সদস্যকে বলতে পারেন না, আপনি কে।” খাড়্গের সমর্থন পেয়ে আরও তেড়েফুঁড়ে ওঠেন তৃণমূল নেত্ৃত্ব। টেবিল চাপড়ে সমর্থন করার পর দাঁড়িয়ে উঠে চিৎকার করতে থাকেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুলতান আহমেদ, সৌমিত্র খান, অনুপম হাজরা-রা। পাল্লা দিয়ে গলা তুলে রুডি বলতে থাকেন, “আমি যদি সরকারের ভূমিকার কথা বলতে চাই, তৃণমূলের সমস্যাটা কোথায়? এত ঔদ্ধত্য কীসের? এটা পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা পাননি, ভারতের সংসদ এটা।”

এর পর স্পিকারের অনুমতিক্রমে সৌগত রায় বলতে থাকেন, “সারদা নিয়ে সিবিআই তদন্তের নামে আসলে তৃণমূলকে দুর্বল করার চক্রান্ত করছে বিজেপি। সম্প্রতি রাজ্যের এক মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” এই পর্যন্ত বলার পর আবার তীব্র চিৎকার ওঠে বিজেপি বেঞ্চ থেকে। সৌগত রায় বলে যেতেই থাকেন, কিন্তু তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে তৃণমূল সদস্যরা কক্ষত্যাগ করেন। পরে সৌগতবাবু বলেন, “এরা আগেও মাইক বন্ধ করে আমাদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। আজও তাই হল। এটা চরম অগণতান্ত্রিক। এর বিরুদ্ধে প্রত্যেক দলেরই প্রতিবাদ করা উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE