বিষ-মদে মৃতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেলে এনসেফ্যালাইটিসে মৃতদের আত্মজন তা পাবেন না কেন, আগেই সেই প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার এনসেফ্যালাইটিসে মৃতদের পরিবারকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ওই সংস্থার তরফে আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বুধবার বলেন, “রাজ্য সরকার সময়মতো সতর্ক হয়নি বলেই রোগটা এ ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অবিলম্বে মৃতদের পরিবারকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” ওই আইনজীবীর বক্তব্য, এই মারণ রোগে এত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন যে, অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। সরকারের তরফে এ ব্যাপারে একটি মেডিক্যাল কমিশন গঠন করা দরকার। সরকারি হাসপাতালগুলিতে কী ধরনের চিকিৎসা চলছে, আদালতে তার নথিপত্র পেশ করারও দাবি জানিয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। টিকাকরণের বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া এবং পর্যাপ্ত মশারি সরবরাহ করার দাবিও জানানো হয়েছে।
শুধু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব হয়েছে। যেমন এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। শিলিগুড়িতে রাহুলবাবু জানান, সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। কেন্দ্র সাহায্য করতে চেয়ে রাজ্যকে চিঠিও দিয়েছে। “কিন্তু আত্মসম্মানে লাগবে বলে রাজ্য সেই সাহায্য নিতে চাইছে না। মানুষ মারা যাচ্ছে। অথচ এই পরিস্থিতিতে এমন মনোভাব কেন, বুঝতে পারছি না,” বিস্ময় প্রকাশ করেন রাহুলবাবু। তাঁর বক্তব্য, যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই গরিব। তাঁদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে। এখনও যাঁরা অসুস্থ, তাঁদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ এবং তাঁদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
বিজেপি-র ওই রাজ্য নেতার অভিযোগ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করে বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। আসলে মিথ্যাচার করছে রাজ্য সরকার। তাতে সমস্যা আরও গভীর হচ্ছে। হাসপাতাল-চত্বরেই আবর্জনার স্তূপ বছরের পর বছর জমে থাকছে। ‘রিসাইক্লিং’ পদ্ধতিতে সেগুলি সরানোর বিজ্ঞানসম্মত কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। রোগ প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা না-করে শুয়োর ধরার, শুয়োর কেনার প্রতিযোগিতা করছে রাজ্য! তাতেও বিরাট দুর্নীতি হচ্ছে। সিপিএমের আমলে মুরগি ধরার নাম করে যেমন দুর্নীতি হয়েছিল। “এখন শুয়োর কেনার নাম করে তোলাবাজি চলছে,” অভিযোগ রাহুলবাবুর।
বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, এখন পর্যন্ত রোগ নিয়ন্ত্রণই হয়নি। বিভিন্ন জেলা থেকে রোগীরা প্রতিদিনই আসছেন। মঙ্গলবার ছুটির দিন বলে ফিভার ক্লিনিকও বন্ধ ছিল। হাসপাতালে রোগীর ভিড় বাড়ছে। চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে ফিভার ক্লিনিক বন্ধ থাকবে কেন, প্রশ্ন তুলেছেন রাহুলবাবু।
বিজেপি-র ওই রাজ্য নেতার অভিযোগ ও দাবি প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক রয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও আছে। টাকা দিতে চাইলে মন্ত্রক থেকে দফতরে পাঠানো হোক। তা নিয়ে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দেওয়াটা অর্থহীন।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, রোগীর বাড়ির লোকজনকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। আর ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর মন্তব্য, “রাজ্য সরকার সকলকে বাঁচাতে চায়। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তারা কোনও রকম আপস করছে না। তা সত্ত্বেও কেউ রোগ নিয়ে রাজনীতি করতে আসরে নামলে তা নিয়ে কিছু বলার থাকে না।”
রাজনীতির লোক বলতে শুধু রাহুলবাবুই মাঠে নামেননি। মানস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে কংগ্রেসেরও পাঁচ বিধায়কের একটি দল এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায়। সেখানে চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন মানসবাবু। পরে তিনি জানান, দু’জন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং এক জন সুপারকে সাসপেন্ড করায় চিকিৎসকেরা আতঙ্কে রয়েছেন। ওঁদের বক্তব্য, ওঁরা নিয়মিত রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে সব জানিয়েছেন। কিন্তু এটা তো রাগের সময় নয়। দোষারোপের সময় নয়। এখন চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। “তাই সাসপেনশন তুলে ওঁদের কাজে ফেরানো উচিত। রোগ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পরে পর্যালোচনায় বসা দরকার,” বলেছেন মানসবাবু। তিনি মনে করেন, রাজ্য ও কেন্দ্র মিলে পতঙ্গ-বিশেষজ্ঞ, জীবাণুবিজ্ঞানীদের নিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হলে কাজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy