ছাতার তলায়। মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
দেবীর আসতে এখনও কয়েক দিন বাকি। কিন্তু অসুর হাজির। মহিষাসুর নয়। মেঘাসুর। মহিষাসুর বধে দেবীর কোনও ঝক্কি নেই। কিন্তু মেঘাসুর তাঁর পথ পিছল করে তুলবে কি না, সেটাই ভাবাচ্ছে মঙ্গলবারের বৃষ্টি।
সময় মেনে বর্ষা বিদায় নিলে দেবীর আগমনের পথ সুগম হয়। সাধারণ ভাবে দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়ার নির্ধারিত তারিখ ৮ অক্টোবর। আর পুজো এ বার অক্টোবরের শেষার্ধে। তাই মহোৎসবে বৃষ্টির ভয় থাকবে না বলে ধরেই নিয়েছিলেন পুজোর উদ্যোক্তারা। সেই ভাবনা থেকেই এ বার মণ্ডপ অনেকটা খোলামেলা। কিন্তু প্রকৃতি যে এ ভাবে উল্টো পথে হেঁটে বাগড়া দেবে, সেটা কেউ ভাবেনি। এ দিন হঠাৎ হানায় সেই নিশ্চিন্তি ভাসিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি।
কলকাতায় পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে গিয়েছে। মহালয়ায় চক্ষুদানের পরে প্রতিমা নিয়ে আসার কাজও শুরু হয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। এত দিন গোটা মণ্ডপ ঢাকা ছিল বৃষ্টির ভয়ে। উদ্বোধনের ঘণ্টা বেজে যাওয়ায় শুরু হয়েছিল সেই ঢাকনা খোলার পালা।
কিন্তু আবহাওয়া যে বেঁকে বসেছে, এ দিনের বৃষ্টি তারই ইঙ্গিত। যাঁরা মণ্ডপের ঢাকা অংশ এখনও খোলেননি, হঠাৎ-বৃষ্টির হুমকিতে তাঁরা আর এগোনোর সাহস পাননি। কেউ কেউ মণ্ডপে প্রতিমা আনার দিন পিছিয়ে দিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বৃষ্টির হামলা থেকে প্রতিমা বাঁচাতে আবার টেনে দেওয়া হয়েছে পলিথিনের আবরণ। আলিপুর হাওয়া অফিসে ঘনঘন ফোন করছেন উদ্যোক্তারা। ক’দিন বৃষ্টি হবে? কেমন হবে তার দাপট? হাল্কা না মাঝারি? এমনই সব প্রশ্নে আবহবিদদের দিনভর ব্যস্ত রেখেছেন উদ্যোক্তারা।
আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়ে দিয়েছে, দেবীপক্ষে ঘূর্ণাবর্তকে বাহন করে উপকূল এলাকায় হানা দিয়েছে মেঘাসুর। ওই ঘূর্ণাবর্তের জেরে পরিমণ্ডলে ঢুকছে প্রচুর মেঘ। সেই মেঘ থেকে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আগামী দু’দিন হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, ওই ঘূর্ণাবর্তই দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায়ের লগ্ন পিছিয়ে দিয়েছে। ওই ঘূর্ণাবর্ত যত দিন সক্রিয় থাকবে, বর্ষা তত দিন থেকে যাবে দক্ষিণবঙ্গে। বর্ষার বিদায় এ বার বিলম্বিত হওয়ার তেমন কারণ ছিল না বলেই আবহবিদদের মত। তাঁরা জানাচ্ছেন, এ বছর কয়েকটি রাজ্যে অনাবৃষ্টির পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও পশ্চিমবঙ্গ ভরপুর বৃষ্টি পেয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম থেকে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে বাংলায়। মাঝখানে ক’টা দিন বৃষ্টি না-হলেও সেপ্টেম্বরে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ অক্ষরেখা ফের বৃষ্টি নামায় রাজ্যে। অক্টোবরে এসে ক্ষান্ত হয় বর্ষা। পুজোর উদ্যোক্তারা ভেবেছিলেন, বর্ষার ভরা মরসুমে দক্ষিণবঙ্গে যা বৃষ্টি হওয়ার কথা, এ বার তার থেকে অনেকটা বেশিই হয়ে গিয়েছে। তাই মহোৎসবের সময়টায় আর ভোগাবে না বৃষ্টি। এক উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘৮ অক্টোবর বর্ষার বিদায়। আর পুজো এ বার ২০ তারিখে। তাই আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, বৃষ্টির ভয় বিশেষ থাকবে না। কিন্তু এমন সময়ে বর্ষা আবার নিজমূর্তি ধরল যে, আমাদের অবস্থা ঘাটে এসে তরী ডোবার মতো।’’
আলিপুর হাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, দিন দশেক ধরে আবহাওয়ার একটা পরিবর্তন ঘটছিল। ভোরে শিশির পড়ছে। বাতাসের গতিপথ বদলাতে শুরু করেছিল একটু একটু করে। পাশাপাশি অতিরিক্ত আর্দ্রতা অন্য কিছুর সঙ্কেত দিচ্ছিল। কয়েক দিন আগে মায়ানমার উপকূলে তৈরি একটি নিম্নচাপের প্রভাবে সেখানে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে তার কোনও প্রত্যক্ষ প্রভাব এখানে পড়েনি। এ তল্লাটে দিন দুই আগেও আবহাওয়ায় কোনও অস্বাভাবিকতাও ছিল না। সোমবার বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলকুচন্দ্র দেবনাথ।
ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব ক’দিন থাকবে?
গোকুলবাবু বললেন, ‘‘ঘূর্ণাবর্তটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যে-অবস্থায় ছিল, তাতে আমরা আরও তিন দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছি। তিন দিনের মাথায় সেটি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কথা। তবু ঘূর্ণাবর্তটির গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তার চতুর্দিকে বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি কেমন থাকে, তার উপরেই নির্ভর করছে সব কিছু।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy