ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকায়। বেশ কয়েকজন আক্রান্ত। একাধিক হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিত্সা চলছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর। ওই সূত্র জানিয়েছে, ডেঙ্গি আক্রান্তদের একটা বড় অংশই সবংয়ের বাসিন্দা। পাশাপাশি, শালবনি, জামবনি, কেশপুর, মেদিনীপুরেরও কয়েকজন আক্রান্ত হন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার জেলায় আসেন স্বাস্থ্য দফতরের এক প্রতিনিধি দল। দলটি সবং-সহ একাধিক ব্লক পরিদর্শন করে। ডেঙ্গি নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “মশা বাহিত রোগ নিবারণে কিছু কর্মসূচি চলছে। সব এলাকাতেই স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন।’’
চলতি বছরে জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাটা খুব কম নয়, শতাধিক। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ব্লকের ১০৮ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। দিন কয়েক আগেও সবং, মেদিনীপুর, কেশপুর, খড়্গপুর গ্রামীণের কয়েকজন এই রোগে আক্রান্ত হন। জাপানি এনসেফ্যালাইটিসেও আক্রান্ত হয়েছেন ৬ জন। সম্প্রতি কলকাতার আর জি করে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়। ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাই মশার আঁতুড়ঘর এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছেয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য দাবি, মশা বাহিত রোগ নিবারণে সদর্থক পদক্ষেপই করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় মশা মারার তেল ছড়ানো হচ্ছে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “এই সময় বিভিন্ন রোগই দেখা দেয়। তবে উদ্বেগের কিছু নেই। এলাকায় এলাকায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলছে। আক্রান্তদের সঠিক চিকিত্সা যাতে সময় মতো হয়, তাও দেখা হচ্ছে।”
ডেঙ্গির সাধারণ লক্ষণ কী, কী ভাবে সাবধান থাকতে হয়, সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে তাই জানানো হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের দাবি। দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, আকস্মিক তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা, খাবারে অরুচি, বমিভাব, শ্বাসকষ্ট, বুকে ও বাহুতে হামের মতো গুটি, ফুসকুড়ি, নাক-মুখ-মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, চামড়া ফেটে রক্ত পড়া-এ সবই ডেঙ্গি জ্বরের সাধারণ লক্ষণ। ওই কর্তার পরামর্শ, এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে নিজে থেকে অ্যাসপিরিন বা আইব্রুফেন জাতীয় ওষুধ খাবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সরকারি হাসপাতালের চিকিত্সকদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ঠিকমতো চিকিত্সা না হলে ডেঙ্গি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এবং এই রোগে মৃত্যুও হতে পারে। রোগে প্রতিরোধে ফেলে রাখা পুরনো টায়ারে, ফুলের টবে, অব্যবহৃত পাত্রে জল জমতে না দেওয়া, চৌবাচ্চা, জলের ট্যাঙ্ক, অন্য জলাধারের জল সপ্তাহে একদিন করে পাল্টানো এবং সর্বদা ঢেকে রাখা, ঘরে রাখা ঝুলন্ত জিনিসপত্র বা আসবাবপত্র পরিষ্কার রাখা, বাড়ির চারপাশের পরিবেশ-নর্দমা পরিষ্কার রাখা, শিশুদের গা ঢাকা পোষাক পরানো, রাতের পাশাপাশি দিনের বেলায়ও শিশুদের জন্য মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।
দফতরের এক কর্তা বলেন, “ডেঙ্গি একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। এডিস ইজিপ্টাই নামে একপ্রকার মশা এই জ্বরের বাহক। এই মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। ফলে, সতর্ক থাকতে হবে।’’ ওই কর্তার কথায়, “আমাদের জেলাতে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। মশার জন্ম প্রতিরোধ করা গেলেই এই রোগের প্রকোপ কমবে। ফলে, সকলকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।’’ ডেঙ্গির সঙ্গে চিন্তা বাড়িয়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। এটি ভাইরাস ঘটিত জ্বর। কিউলেক্স জাতীয় মশা এই রোগের বাহক। সাধারণত, ধানের খেতে, ডোবা বা নর্দমার জমে থাকা জলে এই জাতীয় মশা বংশবৃদ্ধি করে। মূলত, গ্রামাঞ্চলে সামাজিক ও আর্থিক ভাবে অনুন্নত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এই রোগের কোনও নির্দিষ্ট প্রতিষেধক নেই। তাই জ্বর হলেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে চিকিত্সকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে চলতি বছর জেলায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর। দফতরের এক কর্তার অবশ্য দাবি, “মানুষ সচেতন হলে তবেই রোগ এড়ানো যাবে। মশা দমনে সব এলাকাতেই অভিযান চালানো হচ্ছে। মশার লার্ভা মারা হচ্ছে। মেদিনীপুর, খড়্গপুরের মতো শহরেও সচেতনতামূলক কর্মসূচি হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy