Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

জোট-ভাবনায় দুই শিবিরেই কাঁটা কেরল

বাংলা থেকে দাবি জোরালো। কিন্তু দক্ষিণের সাগর পাড় থেকে ভেসে আসছে অন্য সুর! জোট-ভাবনায় পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে রাহুল গাঁধী দিল্লিতে বৈঠকে বসার আগে বাম ও কংগ্রেস, দুই শিবিরেই অস্বস্তির কাঁটা হয়ে উঠেছে কেরল!

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৬
Share: Save:

বাংলা থেকে দাবি জোরালো। কিন্তু দক্ষিণের সাগর পাড় থেকে ভেসে আসছে অন্য সুর! জোট-ভাবনায় পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে রাহুল গাঁধী দিল্লিতে বৈঠকে বসার আগে বাম ও কংগ্রেস, দুই শিবিরেই অস্বস্তির কাঁটা হয়ে উঠেছে কেরল!

সোলার প্যানেল এবং বার— জোড়া কেলেঙ্কারির ধাক্কায় আপাতত জেরবার কেরলের উম্মেন চান্ডির সরকার। বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ সরকারকে বিপাকে পেয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছে বামেদের ফ্রন্ট এলডিএফ। পুলিশের লাঠি, কাঁদানে গ্যাস চলছে বাম বিক্ষোভকারীদের উপরে। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী চান্ডি সাময়িক স্বস্তি পেলেও তাঁর সরকারের অর্থমন্ত্রী কে এম মানি এবং আবগারি মন্ত্রী কে বাবুকে পদত্যাগপত্র লিখে জমা দিতে হয়েছে। যদিও বিরোধীদের কাছে নতিস্বীকার হয়ে যাবে বুঝে চান্ডি দুই মন্ত্রীকেই আপাতত কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। এরই মধ্যে আবার ইউডিএফের শরিক আরএসপি-র বিধায়ক কোভুর কুঞ্জুমন ইস্তফা দিয়ে বাম শিবিরে ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন!

বিপর্যস্ত ইউডিএফ নেতৃত্ব এখন অভিযোগ করছেন, সৌর কেলেঙ্কারির প্রধান অভিযোগকারিণী সরিতা নায়ার এবং ‘বার লবি’র সঙ্গে যোগসাজশে সিপিএম চান্ডি সরকারের বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’ করছে! পাল্টা তদন্তের দাবি তুলছেন তাঁরা। এবং এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ বা অন্যত্র বামেদের সঙ্গে বোঝাপড়া হলে তাঁদের রাজ্যে ভুল বার্তা যাবে বলে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক মুকুল ওয়াসনিকের কাছে দরবার করছেন চান্ডি, রমেশ চেন্নিথালারা। আবার একই মনোভাব কেরলের বাম শিবিরেরও! সে রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, বিধানসভা ভোটে এ বার এলডিএফের জয়ের সম্ভাবনা যথেষ্ট। দু’মাস আগে পঞ্চায়েত ও পুরভোটেই তার ইঙ্গিত মিলেছে। একের পর এক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ইউডিএফ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তুঙ্গে রেখেই ভোটে যেতে চায় সিপিএম। এমতাবস্থায় কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলায় বন্ধুত্বের বিপদ আছে বলে পিনারাই বিজয়নদেরও আশঙ্কা।

দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বই এখন নিজেদের দলের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চালাচ্ছেন। আলাদা রাজ্যে পরিস্থিতি ভিন্ন এবং সেই অনুযায়ীই নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করতে হবে, এই যুক্তি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নেতাদের তাঁরা কতটা বোঝাতে পারবেন, তার উপরেই নির্ভর করবে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘ইউপিএ-১ সরকারকে আমরা যখন সমর্থন করছিলাম, তখনও ২০০৬ সালে কংগ্রেসকে হারিয়েই কেরলে ক্ষমতায় এসেছিল এলডিএফ। সুতরাং, এই সমস্যার মোকাবিলা আগেও হয়েছে।’’

বাংলার কংগ্রেস নেতাদের সিংহভাগ অবশ্য তৃণমূলকে রুখতে বামেদের সঙ্গে যাওয়ার যুক্তিই আজ, সোমবার রাহুলের সামনে পেশ করতে তৈরি হচ্ছেন। বিগত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবে মুলায়ম সিংহ যাদবদের কাছে দৌড়েছিলেন এবং শেষে ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে’ তাঁকে ভোট দিয়েছিল তৃণমূল, সেই প্রসঙ্গও তুলতে চান বঙ্গ কংগ্রেস নেতারা। তার আগে রবিবার দমদমে কংগ্রেসের প্রাক্-নির্বাচনী রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবে দেখানো হয়েছে, বারেবারে তাদের কাছ থেকে সমর্থন নিয়েও কংগ্রেসকে কী ভাবে ভেঙেছে তৃণমূল! সম্মেলনে ছিলেন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। দমদমের সম্মেলনে কারও সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁতের বিরুদ্ধে প্রস্তাব হলেও মনোজবাবুর জেলা মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস বিধায়কেরা বামেদের হাত ধরার পক্ষেই মত দিয়েছেন দলীয় বৈঠকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE