Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জেদের জোরে পাথর ঠেলেই বৈতরণী পার

কলেজের অধিকর্তার বকুনি খেয়ে চারতলার জানলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে কোমায় চলে গিয়েছিল রাজু। রাজু মানে ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর রাজু রস্তোগি। বন্ধুদের চেষ্টা আর নিজের মনের জোরে ভর করে হুইলচেয়ারে চেপে শেষ পর্যন্ত চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিল সে। পেয়েওছিল সেই চাকরি। ছায়াছবির বাইরেও যে রাজুদের অস্তিত্ব রয়েছে, বুধবার আইসিএসই-র ফল বেরোনোর পরে তা প্রমাণ করে দিল সায়ন্তনী, পোর্সিয়া, অসীমারা। ৯৭-৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে ওরা মেধা-তালিকার প্রথম সারিতে জায়গা করে নিতে পারেনি ঠিকই

সাফল্যের তালিকা ক্যামেরাবন্দি। কলকাতার এক স্কুলে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

সাফল্যের তালিকা ক্যামেরাবন্দি। কলকাতার এক স্কুলে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

কলেজের অধিকর্তার বকুনি খেয়ে চারতলার জানলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে কোমায় চলে গিয়েছিল রাজু। রাজু মানে ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর রাজু রস্তোগি। বন্ধুদের চেষ্টা আর নিজের মনের জোরে ভর করে হুইলচেয়ারে চেপে শেষ পর্যন্ত চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিল সে। পেয়েওছিল সেই চাকরি।

ছায়াছবির বাইরেও যে রাজুদের অস্তিত্ব রয়েছে, বুধবার আইসিএসই-র ফল বেরোনোর পরে তা প্রমাণ করে দিল সায়ন্তনী, পোর্সিয়া, অসীমারা। ৯৭-৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে ওরা মেধা-তালিকার প্রথম সারিতে জায়গা করে নিতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু যা পেরেছে, বহু মেধাবীর পক্ষেও তার নাগাল পাওয়া কঠিন।

ছায়াছবির রাজুর কাহিনির সঙ্গে ক্যালকাটা গার্লসের সায়ন্তনী পালের বৃত্তান্তের মিলও আছে কিছুটা। রাজু চারতলার জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল। আর সায়ন্তনী অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে গিয়েছিল সিঁড়ি থেকে। তখন তার সপ্তম শ্রেণি। স্নায়ুতন্ত্রে চোট পাওয়ায় ধীরে ধীরে কোমর থেকে পা পর্যন্ত অসাড় হয়ে গেল। বাবা-মা ভেবেছিলেন, স্কুলে গিয়ে মেয়ের পড়াশোনা আর হয়তো হবে না। কিন্তু একরত্তি মেয়ের নাছোড় জেদের কাছে হার মানে শারীরিক অক্ষমতা।

টানা ফিজিওথেরাপির পরে এক সময় বাঁ পায়ে কিছুটা সাড় ফিরে আসে। আর তাতেই ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সায়ন্তনী। হাঁটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সোজা রাখতে ‘ক্যালিপার’ জাতীয় কিছু পরে নিতে হয়।

আর দু’হাতে লাঠি। এ ভাবেই হাঁটে সে। এ বারের আইসিএসই-তে তার নম্বর ৭৬.৮ শতাংশ।

কিন্তু এই নম্বরে খুশি নয় সায়ন্তনী। ৮০ শতাংশেরও বেশি নম্বর আশা করেছিল। তবে নম্বরের থেকে অনেক বড় পরীক্ষা যে-হেতু পার করেছে সে, তাই তার বাবা সনৎ পাল গর্ব গোপন করছেন না। বললেন, “ও-ভাবে হাঁটাচলা করতে হয় বলে অনেক সময় বন্ধুরা মজা করেছে ওকে নিয়ে। ক্লাসেও ঘনিষ্ঠ বন্ধু তেমন ছিল না। তাই অনেক সময় স্কুলে যেতে চাইত না। তবে বাড়িতে পড়ায় ছেদ পড়েনি।” মেয়ের ভাল ফলের জন্য স্কুল-কর্তৃপক্ষকেও কৃতিত্ব দিচ্ছেন পেশায় ব্যবসায়ী সনৎবাবু।

সায়ন্তনীর মতো অন্য ধাতুতে গড়া মেথডিস্ট স্কুল অব ডানকুনির ছাত্রী অসীমা রিজভিও। কথা বলা ও শোনার সমস্যা বলতে গেলে তার জন্মগত। মেয়ের সমস্যার কথা বুঝতে পেরে প্রথমে মুষড়ে পড়েছিলেন অসীমার বাড়ির লোকজন। তবে দমে যাননি। চিকিৎসা চলতে থাকে। পাশাপাশি স্কুলেও ভর্তি করা হয় অসীমাকে। কিন্তু সেখানে অসীমা হয়ে দাঁড়ায় সহপাঠীদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। দাদা অমর রিজভির কথায়, “একে তো বলতে-শুনতে-বুঝতে সমস্যা হয়। তার উপরে কানে শোনার কৃত্রিম যন্ত্র লাগিয়ে অসীমা যখন স্কুলে যেত, আছড়ে পড়ত বন্ধুদের কৌতূহলী দৃষ্টি। ওকে নিয়ে হাসিঠাট্টাও করত তারা। তবে অসীমা দমে যায়নি।” বুধবার লখনউয়ে দিদার কাছে বসে ঘনঘন ঘড়ি দেখেছে অসীমা। বেলা ৩টেয় ওয়েবসাইট দেখে জানতে পারে, ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। অসীমা উচ্ছ্বসিত। এবং অবশ্যই তার পরিবারও।

ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের পোর্সিয়া দত্তের কাহিনি সায়ন্তনী বা অসীমার থেকে একটু অন্য রকম। পরীক্ষা শুরুর ঠিক আগে মাকে হারায় সে। পরীক্ষার মুখেই এত বড় বিপর্যয়েও কান্না সামলে আইসিএসই-তে ৮৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছে পোর্সিয়া। তবে আরও একটু ভাল ফলের আশা ছিল তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

icse result
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE