Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়

টিএমসিপির হুমকি নিয়ে অভিযোগ

ফি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ‘বহিরাগতদের’ উস্কানির তত্ত্ব তুলেছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা উপাচার্যের কাছে টিএমসিপি-র সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকি, শাসানির লিখিত অভিযোগ জমা দিল।

রতনলাল হাংলু

রতনলাল হাংলু

সৌমিত্র সিকদার
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

ফি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ‘বহিরাগতদের’ উস্কানির তত্ত্ব তুলেছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা উপাচার্যের কাছে টিএমসিপি-র সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকি, শাসানির লিখিত অভিযোগ জমা দিল। তাতে নাম রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-পড়ুয়া তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ মণ্ডল-সহ পাঁচজনের।

উপাচার্যের কাছে দায়ের করা অভিযোগে সই করেছেন স্নাতকোত্তরের প্রায় দু’শো পড়ুয়া। চিঠিতে তাঁরা জানিয়েছেন, হস্টেলে গিয়ে হুমকি দিয়েছে টিএমসিপি-র বাইকবাহিনী। রবিবার রাত এগারোটা নাগাদ দু’টি মোটর বাইকে প্রসেনজিতের সঙ্গে ওয়াসিম আক্রম, সঞ্জীব ভক্ত, বাবলু ভক্ত, সম্রাট পাল এসে তাঁদের শাসায়। এক আবাসিকের কথায়, ‘‘ওরা বলে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা যেন আন্দোলন চালিয়ে যাই।’’ প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর করতেও বলে প্রসেনজিৎ ও তাঁর সঙ্গীরা। কথা না শুনলে পরিণাম ভাল হবে না, এই বলে হুমকি দেওয়া হয় ছাত্রদের।

অভিযুক্ত প্রসেনজিতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘একেবারেই মিথ্যে অভিযোগ।’’ এ দিকে, আবাসিকদের তরফে অভিযোগ হাতে পেয়েই উপাচার্য রতনলাল হাংলু পুলিশে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে উপাচার্যের দাবি, ‘‘প্রসেনজিৎ ছাড়া বাকি চারজনই বহিরাগত।’’

এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকছে এমন আমাকে কেউ জানায়নি। তবে সত্যিই যদি বহিরগতদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

উপাচার্য অবশ্য গত বৃহস্পতিবারই অভিযোগ করেছিলেন, বুধবার সারারাত ফি কমানোর দাবি যারা তাঁকে ঘেরাও করে, তাদের অনেকেই বহিরাগত। বাইরের উস্কানিতেই ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশ তাঁর সঙ্গে আলোচনায় না বসে ঘেরাওয়ের পথ নেয়, দাবি করেন তিনি। এর প্রতিবাদে তিনি রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগ পত্রও পাঠান গত বৃহস্পতিবার।

আবাসিক ছাত্রদের এই অভিযোগ উপাচার্যের ‘বহিরাগত তত্ত্বকেই’ মান্যতা দিল, মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে। সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র অভিযোগ, ‘‘তাগিদটা আসলে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের। তাঁরাই দলের ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে, পড়ুয়াদের শিখণ্ডি করে, আর্থিক মুনাফার আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে চাইছে।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের খবর, ফি বৃদ্ধি নিয়ে ছাত্রদের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে উপাচার্যের উপর পদত্যাগের জন্য চাপ তৈরি করতে চেয়েছিল টিএমসিপি-র একাংশ। কিন্তু শনিবারই ফি কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা ঘোষণা করা হয় সোমবার। তাই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ ‘স্যার আমাদের আপনাকে প্রয়োজন’, ‘আমাদের ভুল বুঝবেন না’ এমন নানা বার্তা লেখা পোস্টার লিখে অবস্থানে বসে শ’পাঁচেক পড়ুয়া। এদেরই অনেকে গত সপ্তাহে ফি কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল, জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা। এ দিন এঁদেরই প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ জানায়।

বিক্ষুব্ধ ছাত্রেরা অবস্থান পাল্টালেন কেন? তাঁদের যুক্তি, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ফি অনেকটাই কমিয়ে দেওয়ায় আমরা খুশি। আর কোনও আন্দোলনের প্রয়োজন নেই।’’ তাঁদের বক্তব্য, ২০১২ সালের শেষ দিকে উপাচার্য হিসেবে কল্যাণীর দায়িত্ব নিয়ে রতনলাল হাংলু যে ভাবে কড়া হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উন্নয়নের কাজ শুরু করেছেন, তিনি চলে গেলে তা ব্যাহত হবে। ভুল বার্তাও যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রেরা নতুন করে আর আন্দোলনে যাবে না বুঝেই টিএমসিপি আসরে নামে বলে ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ। এক আবাসিকের কথায়, ‘‘প্রথম থেকেই টিএমসিপি আমাদের আন্দোলনে ঢুকেতে চেয়েছিল। কিন্তু, আমরা আন্দোলনে রাজনৈতিক রং আনতে চাইনি।’’

তা হলে কি ছাত্রদের দাবি মেনে ইস্তফা প্রত্যাহার করবেন উপাচার্য? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাংলু বলেন, ‘‘ছাত্র, শিক্ষকেরা চাইছেন আমি থাকি। কিন্তু, এখন আমার থাকা না-থাকা আমার উপরে নির্ভর করছে না। রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছি। তিনি যা বলবেন, সেটাই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE