Advertisement
১১ মে ২০২৪

ডেঙ্গিতে ফের মৃত্যু, চাপতে মরিয়া রাজ্য

রোগটি একের পর এক প্রাণ নিচ্ছে খাস কলকাতায়। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনাকে প্রাণপণে ধামাচাপা দেওয়ারই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সামগ্রিক ভাবে বিপদই বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০৬
Share: Save:

রোগটি একের পর এক প্রাণ নিচ্ছে খাস কলকাতায়। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনাকে প্রাণপণে ধামাচাপা দেওয়ারই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সামগ্রিক ভাবে বিপদই বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাঁদের বক্তব্য, আড়াল না-করে বাস্তবকে মেনে নিয়ে রোগটার মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়াই বাঁচার একমাত্র উপায়।

সোমবার সকালে একবালপুরের একটি নার্সিংহোমে পরভিন শাহনওয়াজ নামে ৫০ বছরের এক মহিলার মৃত্যু হয় ডেঙ্গিতে। তাঁর রক্তে ওই মারণ রোগের ভাইরাস এনএস-১ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে।

এটা যে ডেঙ্গি-মৃত্যু, স্বাস্থ্য দফতর যথারীতি আবার তা অস্বীকার করেছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, ডেঙ্গিতে নতুন করে কারও মৃত্যুর খবর তাঁর কাছে নেই। কিন্তু পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা মনে করেছেন, এনএস-১ পজিটিভ ভাইরাস পাওয়ার অর্থ তা ডেঙ্গিই। এক পরজীবী বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ডেঙ্গির বিষয়টি অস্বীকার করেই স্বাস্থ্য দফতর ক্রমাগত বিপদ বাড়াচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে এনএস-১ পজিটিভ এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখেও তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। রাখা হচ্ছে না যথেষ্ট নজরও। ফলে প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা এক ধাক্কায় কমে গিয়ে বা রক্তক্ষরণে মৃত্যু হচ্ছে অনেকেরই।’’

কয়েক দিন ধরে জ্বর হচ্ছিল পরভিনের। ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হন রবিবার। নার্সিংহোমের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে: ‘কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেলিওর ইন কেস অব হেমারেজিক ফিভার উইথ গ্রস থ্রম্বোরিক উইথ মাল্টিঅর্গান ফেলিওর’। তাঁর প্লেটলেটও কমে হয়েছিল ১০ হাজার। এক পরজীবী বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ডেঙ্গি শব্দটা উল্লেখ না-থাকলেও এই হেমারেজিক ফিভার যে ডেঙ্গিই, তা বুঝতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’

এর পরেও ঝেড়ে কাষতে রাজি নয় কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। ওই দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডেথ সার্টিফিকেটে তো ডেঙ্গি বলে উল্লেখ করা হয়নি। তাই এখনই আমরা কিছু বলছি না। সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তবেই এ ব্যাপারে মন্তব্য করব।’’

সম্প্রতি আর জি কর হাসপাতালে ডেঙ্গিতে এক মেডিক্যাল ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মেয়র ও মেয়র-পারিষদের বক্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। ওই ছাত্রী যে ডেঙ্গিতেই মারা যান, প্রথমে (ডেথ সার্টিফিকেটে তার উল্লেখ না-দেখে) তা স্বীকার করতে চাননি তাঁরা। মানিনী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ১৮ বছরের ওই তরুণীর অস্থিমজ্জার অসুখ ছিল। পুরসভার দাবি ছিল, মৃত্যুর কারণ সেটাই। পরে অবশ্য ডেথ সার্টিফিকেট পেয়ে তাঁরা মেনে নেন, ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন মানিনী।

ডেঙ্গির বিষয়টি বারবার অস্বীকার করে কি তা হলে আসল পরিস্থিতি থেকে মুখ ফেরাতে চাইছে পুরসভা?

মানিনী-বিতর্কের পরে মেয়র-পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘যা বলার বলবেন পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বা মুখ্য চিকিৎসক।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ১৩। এই মুহূর্তে মহানগরীর উত্তর ২৪ পরগনা ঘেঁষা জায়গাগুলি— যেমন সল্টলেক, দমদম, সিঁথি ইত্যাদি এলাকাতেই এই রোগের প্রকোপ বেশি। সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকে একই পরিবারের একাধিক লোক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এমনটা হতেই পারে। ঋতু পরিবর্তনের সময় বিভিন্ন বাড়ির জানলা-দরজা বন্ধ থাকে। ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাই মশা ঘরে ঢুকলে সহজে বেরোতে পারে না। সে যে-ক’জনকে কামড়াবে, তাঁদের সকলে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হতে পারেন।

শীত আসতে গড়িমসি করছে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ঠান্ডা-ঠান্ডা ভাব আছে। কিন্তু প্রকৃত শীতের দেখা নেই এখনও। অথচ জব্বর শীতই ডেঙ্গির যম। তাপমাত্রা যত কমবে, কমতে থাকবে ডেঙ্গির জীবাণুর সক্রিয়তা এবং মশার সংখ্যাও কমবে বলে আশায় ছিলেন পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু এখনও শীতের দেখা না-মেলায় পরজীবী বিশেষজ্ঞদের অনেকেই চিন্তিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE