Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

ডানা রুখল কুয়াশা

সমস্যাটা তৈরি হয় প্রতি বছরই। সমাধানের রাস্তাও অজানা নয় কর্তাদের। তবু সেই সমাধান হয় না। ফলে, বছর-বছর শীতের শুরুতে কুয়াশার জেরে বাগডোগরায় বিমান বাতিলের ঘটনায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।

সোমবার সকালের শিলিগুড়ি শহর। বেলা পর্যন্ত আকাশ ছিল এমনই। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

সোমবার সকালের শিলিগুড়ি শহর। বেলা পর্যন্ত আকাশ ছিল এমনই। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

সমস্যাটা তৈরি হয় প্রতি বছরই। সমাধানের রাস্তাও অজানা নয় কর্তাদের। তবু সেই সমাধান হয় না। ফলে, বছর-বছর শীতের শুরুতে কুয়াশার জেরে বাগডোগরায় বিমান বাতিলের ঘটনায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।

যেমন সোমবার হল। এ দিন ১৩টির মধ্যে ১২টি উড়ানই বাতিল হওয়ায় কেন এখানে এখনও ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) বসানো হল না, ফের সেই প্রশ্ন তুললেন অনেক যাত্রী।

গত শনিবারও খারাপ আবহাওয়ার জন্য দু’টি বিমান বাতিল হয়েছিল। এ দিন দিল্লির ৬টি, কলকাতার টি এবং গুয়াহাটির দু’টি বিমান বাতিল হয়। দুপুরে ঘণ্টাখানেক আবহাওয়া ভাল থাকায় শুধু ভুটানের পারো থেকে বাগডোগরা হয়ে ব্যাঙ্ককের আন্তর্জাতিক বিমানটি চলেছে। ১২টি উড়ান বাতিলের জেরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার যাত্রী সমস্যায় পড়েন। দিল্লি, বাগডোগরা, গুয়াহাটি থেকে যাত্রীরা যেমন আসতে পারেননি, তেমনই এ দিক থেকেও যেতে পারেননি। সন্ধ্যায় দিল্লির শেষ বিমানটি বাতিলের পরে স্থানীয় যাত্রীরা বাড়ি ফিরে যান। বাকিরা হোটেল, গেস্ট হাউসে থেকে গিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার বিভিন্ন উড়ানে তাঁদের যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে বিমান সংস্থাগুলি।

বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এ দিন বাতিল হওয়া বিমানগুলির মধ্যে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানও। দিল্লি থেকে বাগডোগরার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল সেটি। কিন্তু বিহারের কাটিহারে আসার পরে বাগডোগরায় নামা সম্ভব নয় বুঝে পাইলট বিমানটি কলকাতা নিয়ে যান। যাত্রীদের মধ্যে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়ালের প্রধান সচিব রবিন্দর সিংহের দিল্লি থেকে বাগডোগরা আসার কথা ছিল। তিনি আসতে পারেনি। এ ছাড়া আজ, মঙ্গলবার দুপুরের বিমানে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি ব্যক্তিগত সফরে উত্তরবঙ্গে এসেছেন। এ রকম আবহাওয়া থাকলে তিনি যেতে পারবেন কি না, সে নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন অফিসারেরা।

বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধির্কতা রাকেশ সহায় বলেন, ‘‘সকাল থেকে আবহাওয়া বিমুখ ছিল। বিমান ওঠানামার জন্য নির্দিষ্ট দৃশ্যমানতা ছিলই না। মাঝে ঘণ্টাখানেক আবাহওয়া পরিষ্কার থাকায় শুধু একটি আন্তর্জাতিক বিমান চলেছে। বাকি ১২টি বাতিল হয়েছে।’’ বিমানবন্দর এটিসি সূত্রের খবর, সাধারণ বিমান ওঠানামার জন্য পাইলটদের বাগডোগরার মতো বিমানবন্দরে ২১০০ মিটার দৃশ্যমানতার প্রয়োজন হয়। সকাল থেকে যা ছিল ১০০০ মিটারের আশপাশে।

দুপুর ১২টার পরে ঘণ্টাখানেকের জন্য আবহওয়া ভাল হলে দৃশ্যমানতা ১৫০০-১৭০০ মিটারের কাছাকাছি হয়। ভুটানের পারো-ব্যাঙ্কক বিমানটির নির্দিষ্ট সময় সকাল সাড়ে ১০টা হলেও সেটি পারোতেই অপেক্ষা করছিল। পারো থেকে বাগডোগরা ২০ মিনিট উড়ান সময় হওয়ায় বিমানটি বাগডোগরায় এসে কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যাঙ্ককের উদ্দেশে রওনা হয়। পরে ফের দৃশ্যমানতা কমে ১০০০ মিটারে ঠেকায় আকাশ থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ঘুরে যায়। বাকিগুলি বিমানবন্দর থেকে ওড়েইনি।

দুই মেয়ে নিয়ে দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল কালিম্পঙের বাসিন্দা পূর্ণমায়া রাইয়ের। ছোট মেয়ে সেখানে পড়াশোনা করেন। বিমান বাতিল হওয়ায় রাতে তাঁদের শিলিগুড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে উঠতে হয়। পূর্ণমায়াদেবী বলেন, ‘‘বিমান যাবে কি না নিশ্চিত করে সংস্থাটি বলতে পারছিল না। তাই বসেছিলাম। শেষে বলা হয়, বিমান বাতিল।’’ দার্জিলিঙের বাসিন্দা কিসান লোহার ব্যক্তিগত কাজে কলকাতা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সাত সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে শিলিগুড়ি এসেছিলাম। এখন আবার রাতে হোটেলে থাকতে হবে। টাকাও খরচ হল, কাজও এক দিন পিছিয়ে গেল।’’ একমাত্র এয়ার ইন্ডিয়া রাতে শহরের বিভিন্ন হোটেলে প্রায় ১২০ জন যাত্রীকে রেখেছে। কাল সকাল থেকে অন্য বিমানে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তবে আইএলএস থাকলে এই ভোগান্তি হত না। কারণ, এই প্রযুক্তিতে ৩৫০ মিটার দৃশ্যমানতাতেও বিমান নামতে পারে। তাই বাগডোগরায় এই প্রযুক্তি চালু করা হলে, শীতের মরসুমে বিমান বাতিলের সম্ভাবনা প্রায় দূর হয়ে যাবে। চালু করা যাবে রাতে বিমান ওঠানামাও।

এই পরিস্থিতিতে বাগডোগরায় আইএলএস পদ্ধতি কেন দ্রুত বসানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বহু যাত্রী। বহু যাত্রীকে এ দিন বলতে শোনা যায়, বছর বছর এই সমস্যা চললেও এখানে রাতের বিমান তো বটেই, আইএলএস পরিকাঠামো কেন বসানো হচ্ছে না তা তাঁরা বুঝছেন না। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, আইএলএসের পরিকাঠামোর জন্য প্রায় ২১ একর জমির প্রয়োজন। যার জন্য প্রায় এক দশক ধরে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি ১.৬ একর বাদ দিয়ে বাকি জমি খালি করানো হয়েছে। ওই সামান্য জমিতে বসে থাকা বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনাও মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, আশা করা যাচ্ছে ৫ মাসের মধ্যে জমিটি পুরো হাতে আসবে। তার পরে তাতে আইএলএস বসাতে আরও মাস ছয়েক লাগবে। আগামী শীতে পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁদের ধারণা। বিমানবন্দর অধিকর্তাও জানান, আইএলএস বসানোর জন্য জমি অধিগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। আর কিছু দিনের মধ্যে সমস্যা মিটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE