Advertisement
০৫ মে ২০২৪

তদন্ত কী হবে, গুঞ্জন বিশ্বভারতীতে

কলাভবনের প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতন কাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ভবন ও শীর্ষ কর্তাদের অবিলম্বে অপসারণের দাবি উঠল ফেসবুকে। সেই মর্মে গণস্বাক্ষর চেয়ে নানা সংগঠনের তরফে আবেদনও ওঠে সাইবার দুনিয়ায়। বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীদের অনেক কেই স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে দেখা যায়। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে জটলার চিত্র এ দিনও দিনভর ছিল শান্তিনিকেতনে।

কলাভবন চত্বরে সংবাদমাধ্যম পৌঁছতেই এক দল সিনিয়র ছাত্রছাত্রী কার্যত তেড়ে আসেন। ছবি না তোলার জন্য এ ভাবেই হাত জোড় করে অনুরোধ করতে দেখা যায় এক আধিকারিককে।—নিজস্ব চিত্র।

কলাভবন চত্বরে সংবাদমাধ্যম পৌঁছতেই এক দল সিনিয়র ছাত্রছাত্রী কার্যত তেড়ে আসেন। ছবি না তোলার জন্য এ ভাবেই হাত জোড় করে অনুরোধ করতে দেখা যায় এক আধিকারিককে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৬
Share: Save:

কলাভবনের প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতন কাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ভবন ও শীর্ষ কর্তাদের অবিলম্বে অপসারণের দাবি উঠল ফেসবুকে। সেই মর্মে গণস্বাক্ষর চেয়ে নানা সংগঠনের তরফে আবেদনও ওঠে সাইবার দুনিয়ায়। বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীদের অনেক কেই স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে দেখা যায়। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে জটলার চিত্র এ দিনও দিনভর ছিল শান্তিনিকেতনে।

রবিবার ধৃত তিন ছাত্রের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর ও তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের খবর নিয়েও ছাত্রছাত্রীমহলেও নানা কথা শোনা যায়। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল থেকে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল চোখে পড়ার মতোই। এ দিকে বিশ্বভারতী কান্ডে এবার নড়েচড়ে বসল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও। তাঁরা রবীন্দ্রনাথের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীর যৌন হেনস্থার যে অভিযোগ উঠেছে সে সম্পর্কে বিশ্বভারতীর কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে ইতিমধ্যেই।

রবিবারই, ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সৌরভ নন্দী ধৃত তিন ছাত্রকে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর ফের আদলতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে পুলিশ এ দিন দফায় দফায় অভিযুক্তদের কখনও একসঙ্গে, আবার কখনও আলাদা আলাদা বসিয়ে জেরা করেছে। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বোলপুরের বহিরাগত চতুর্থ অভিযুক্তের অবশ্য এখনও খোঁজ পায়নি তারা। এ দিন বোলপুরে সরকারি আইনজীবী ফিরোজ কুমার পাল বলেন, “শনিবার রাতে তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অন্য বহিরাগত অভিযুক্তকে ধরা ও তদন্তের জন্য তদন্তকারী অফিসার অশোক সিংহ মহাপাত্র তিন ছাত্রের সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের আর্জি জানিয়েছিলেন। এসিজেএম সৌরভ নন্দী তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।”

রবিবার সকাল দশটা নাগাদ বোলপুরের এসিজেএম আদালতে তোলা হয় ধৃত তিন ছাত্রকে। এজলাসে ঢোকার মুখে, রুমাল খুলে ঢোকেন ওই তিন অভিযুক্ত। পৌনে এগারোটা নাগাদ এসিজেএমকে এই মামলা সম্পর্কে জানান সরকারী আইনজীবী ফিরোজ কুমার পাল। বিশ্বভারতীর কলাভবন অধ্যক্ষকে দেওয়া নির্যাতিতা ছাত্রীর লিখিত অভিযোগের বিষয় এবং তার প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতীর ছাত্র পরিচালকের অনুপ্রেরিত চিঠির কথা বলেন তিনি। শনিবার দুপুরে বোলপুর থানায় লিপিবদ্ধ হওয়া অভিযোগের বিশদ জানিয়ে ধৃত তিন ছাত্রের বিরুদ্ধে দেওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধির এক একটি ধারার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এরপর তদন্তকারী অফিসার অশোক সিংহ মহাপাত্রের সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের আর্জির পক্ষে যুক্তি দিয়ে, সাত দিন না হলেও অন্তত পক্ষে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের আর্জি মঞ্জুর করার আবেদন জানান।

তদন্তকারী অফিসার তাঁদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে, বলে অভিযুক্ত তিন ছাত্রের মতামত জানতে চান এসিজেএম। অভিযুক্ত অরিন্দম গিরি ঘটনার প্রথম দিনের বর্ণনা দিতে থাকেন। কলাভবন ও বিশ্বভারতীর বিশাখা কমিটির সঙ্গে তদন্তে সব রকমের সহযোগিতা করার কথা জানিয়ে, নিজেদের নির্দোষও দাবিও করেন। পাশাপাশি তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে বলে বিচারককে জানান। সরকারী আইনজীবী তাঁকে থামিয়ে, ওই ঘটনার দিনের কথা সবিস্তারে না বর্ণনা দিয়ে, বিচারকের প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেন। অভিযুক্তদের দিকে কিছুক্ষণ দেখে, বিচারক পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

এগারোটা নাগাদ বিচারক নিজের আসন থেকে উঠে, আদালত কক্ষ ছেড়ে বের হলে, পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজেদের মুখ ঢেকে আদালত কক্ষ থেকে বাইরে বের হয় অভিযুক্ত তিন ছাত্র। পুলিশ লকআপে যাওয়ার পথে, অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন। অভিযুক্ত অরিন্দম গিরি বলেন, “উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। পাঠভবনের ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ নেই।”

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই, কলাভবনের একাধিক সিনিয়ার ছাত্রছাত্রী বিশেষ ভাবে সক্রিয় হয়েছিল ঘটনা ধামাচাপা দিতে। মিডিয়ার কাজেও তারা বাধা দেয়। তাঁদের অতি সক্রিয়তার কারণ কি এবং তার মুলে বিশ্বভারতীর কোনও কর্মী-অধ্যাপক বা অধ্যাপিকা রয়েছেন কি না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ। ইতি মধ্যেই জনা চারেক ছাত্রছাত্রী নাম জানতে পেরেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলবেন কেসের তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। রবিবার সাপ্তাহিকী ছুটির দিন থাকলেও, ঘটনার তদন্তকারী অফিসার এ দিন বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী এবং কর্মী আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রয়োজনে ডাকা হতে পারে বিশাখা কমিটির সদস্যদেরও।

শনিবার রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ছাত্রীদের একাংশকে বিশ্বভারতীর গৌরপ্রাঙ্গনে আলোচনা করতে দেখা গেছে। এ দিকে শনিবারই রাতে অভিযুক্ত তিন ছাত্র গ্রেফতারের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর, উত্তর- পূর্ব এবং জুনিয়ার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খানিকটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE