Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

তাইকেন্ডো চ্যাম্পিয়ন ছন্দা হাল ছাড়বেন না, আশায় রয়েছেন তাঁর ক্যাম্পের ছাত্রছাত্রীরা

তাইকেন্ডোতে বহু বার তাঁর কিকের জোরে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন প্রতিপক্ষ। সব আশঙ্কা উড়িয়ে জীবনযুদ্ধে সেভাবেই প্রকৃতিকে হারিয়ে আবার ফিরে আসবেন ছন্দা গায়েন। ছন্দার তাইকেন্ডো ক্লাসের বিভিন্ন ছাত্রছাত্রী ও কোচ ইন্দ্রনীল গুপ্তের আশা এমনই। ছন্দা গায়েনকে তুখোড় পর্বত অভিযাত্রী হিসেবেই চেনে গোটা ভারত। কিন্তু মার্শাল আর্টের অন্যতম বিভাগ তাইকেন্ডোতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ছন্দাকে অনেকেই চেনে না।

ছন্দা গায়েনের ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি।

ছন্দা গায়েনের ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

তাইকেন্ডোতে বহু বার তাঁর কিকের জোরে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন প্রতিপক্ষ। সব আশঙ্কা উড়িয়ে জীবনযুদ্ধে সেভাবেই প্রকৃতিকে হারিয়ে আবার ফিরে আসবেন ছন্দা গায়েন। ছন্দার তাইকেন্ডো ক্লাসের বিভিন্ন ছাত্রছাত্রী ও কোচ ইন্দ্রনীল গুপ্তের আশা এমনই।

ছন্দা গায়েনকে তুখোড় পর্বত অভিযাত্রী হিসেবেই চেনে গোটা ভারত। কিন্তু মার্শাল আর্টের অন্যতম বিভাগ তাইকেন্ডোতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ছন্দাকে অনেকেই চেনে না। যদিও খুব ছোট থেকেই এই স্বল্প পরিচিত খেলায় নিয়মিত অনুশীলন করত ছন্দা। তাইকেন্ডোর বিভিন্ন স্তরের জাতীয় প্রতিযোগিতায় যোগ গিয়ে পেয়েছে অনেক পদক। ছন্দার কোচ ইন্দ্রনীলবাবু জানান, আশির দশকের শেষ দিকে তাঁরা হাওড়ার িবধুভূষণ বালিকা বিদ্যালয়ে তাইকেন্ডো শেখানোর ক্যাম্প করছিলেন। ছন্দা তখন ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। অন্যান্য ছাত্রীদের সঙ্গেই ওই ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিল সে। পরে বাছাই ছাত্রীদের নিয়ে পরবর্তী ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছিল ছন্দা। তারপরে তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় ৩০টি জাতীয় স্তরের তাইকেন্ডো প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে অর্ধেকের বেশি প্রতিযোগিতা থেকেই সোনা নিয়ে এসেছিল এই ডানপিঠে মেয়েটি। পেয়েছিল ব্ল্যাক বেল্ট। এরপরে বাড়িতে তাইকেন্ডো শেখাতে শুরু করে ছন্দা। গত বছরের ডিসেম্বরে হাওড়া ময়দানের কাছে একটি ক্লাবের মাঠে শেষ বার তাইকেন্ডো খেলতে মাঠে নেমেছিল ছন্দা। ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, “এভারেস্ট জয়ের পরে ওঁর সময় পাওয়া খুব মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। তাই ওঁর অনেক ছাত্রছাত্রীকেই শেখানোর ভার আমার উপর দিয়েছিলন ছন্দা।”

পাহাড়ে চড়ার দিকে মন দেওয়ায় তাইকেন্ডোতে আগের মতো সময় দিতে পারত না ছন্দা। কিন্তু তারপরেও তাঁর বাড়ির তাইকেন্ডো ক্লাসে কোনও ছেদ পড়েনি। ছন্দার অন্যতম ছাত্রী সঙ্গীতা সেনাপতি ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ছন্দার কাছে তাইকেন্ডো শিখছে। হাওড়ার চামরাইলের বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সঙ্গীতার সঙ্গে ছন্দার শেষ কথা হয় গত শুক্রবার। সঙ্গীতা জানায়, “কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের জন্য গত কয়েক মাস ছন্দাদি খুব ব্যস্ত ছিল। তাই দিদির বাড়িতে জুনিয়র ছেলেমেয়েদের আমিই প্র্যাকটিস করাতাম। দিদি যখন বাড়িতে থাকতেন দেখিয়ে দিতেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের কয়েক দিন আগে আমার সঙ্গে দিদির শেষবার দেখা হয়েছিল। তখন আমি ওনার বাড়িতেই প্র্যাকটিস করাচ্ছিলাম। আমার কাছে এগিয়ে বললেন সব ঠিক আছে তো?” সঙ্গীতার বিশ্বাস, “ছন্দাদি আমাদের লড়তে শিখিয়েছেন।আমি একশো ভাগ নিশ্চিত উনি ফিরে আসবেনই।”

ছন্দার তাইকেন্ডো ক্লাসের ছাত্রছাত্রী সৌভিক, অন্বেষারা জানাচ্ছেন, শুধু টেকনিক শেখানোই নয়, ছাত্রছাত্রীদের আপদে বিপদেও সব সময় পাশে থেকেছেন ছন্দা। কখনও চেঁচিয়ে কথা বলতেন না তিনি। প্র্যাকটিস শেষে অনেক সময় ছাত্রীদের নিজে মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি দিয়ে আসতেন ছন্দা। কেউ আর্থিক সমস্যায় পড়লে তাকে যেমন সাহায্য করেছেন, তেমনই অনেকের ব্যক্তিগত সমস্যারও সমাধান করে দিয়েছেন তিনি। জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যাওয়ার আগে নিজের বাড়িতে এনে রাখতেন ছাত্রছাত্রীদের। সেখানে চলত খাওয়া দাওয়া ও ঘুমানো। রাজ্যের বাইরে গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাঁর সব সময় খেয়াল থাকত।

তাইকেন্ডো ফাইটাররা সহজে হাল ছাড়ে না। এই আশাতেই বুক বাঁধছে সবাই। ফেসবুকে উপচে পড়ছে ছন্দার জন্য প্রার্থনা। সেখানে এক হয়ে গিয়েছে বাঙালীর ফুটবল আবেগ। ‘মোহনবাগান ফ্যান্টাসী’র নামক ফেসবুক কমিউনিটির পক্ষ থেকে যেমন ছন্দার শুভ কামনা করে পোস্ট করা হয়েছে, তেমনই পোস্ট এসেছে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের থেকেও। ছন্দার জন্য প্রার্থনা করে হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য স্তরে তাইকেন্ডোতে প্রতিনিধিত্ব করে ছন্দা হাওড়া জেলাকে সমৃদ্ধ করেছে। যদিও তাইকেন্ডো খেলাটি আমাদের সংস্থার অর্ন্তভূত নয়, তবুও ছন্দা আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। ছন্দা এত তাড়াতাড়ি হেরে যেতে পারে না। ও সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসবেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

taikondo chhanda gayen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE