Advertisement
১১ মে ২০২৪

দক্ষ কর্মীদের এ বার প্রশাসক হওয়ার পাঠ, উদ্যোগী রাজ্য

তড়িঘড়ি কাউকে দায়িত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দিয়ে পরে আক্ষেপ করার নজির এ রাজ্যে অজস্র। শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল কর্মীকে প্রশাসনিক পদে বসিয়ে বহু ক্ষেত্রেই কাঙ্খিত ফল মেলেনি। কেন এক জন দক্ষ কর্মী প্রশাসনিক কাজ সামলাতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ঠোক্কর খান, সে নিয়ে আলোচনা হয় বিস্তর। কিন্তু সমাধানসূত্র বেরোয় না।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৪
Share: Save:

তড়িঘড়ি কাউকে দায়িত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দিয়ে পরে আক্ষেপ করার নজির এ রাজ্যে অজস্র। শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল কর্মীকে প্রশাসনিক পদে বসিয়ে বহু ক্ষেত্রেই কাঙ্খিত ফল মেলেনি। কেন এক জন দক্ষ কর্মী প্রশাসনিক কাজ সামলাতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ঠোক্কর খান, সে নিয়ে আলোচনা হয় বিস্তর। কিন্তু সমাধানসূত্র বেরোয় না।

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এমন হামেশাই ঘটে। কোনও দক্ষ চিকিৎসককে সুপারের পদে বসিয়ে হাসপাতালের উন্নয়ন চেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ওই পদে যাওয়ার পরে তিনি কোনও কাজই ঠিক ভাবে করতে পারছেন না। একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। বার বার ঠেকে শিখে তাই এ বার দক্ষ কর্মীকে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে গড়ে তোলার রূপরেখা তৈরি করছে রাজ্য সরকার। এ জন্য দেশ-বিদেশের ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, দক্ষ প্রশাসক গড়ার জন্য রাজ্যে পৃথক একটি কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রশাসনিক কাজে সফল হতে ঠিক কোন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে আরও ঘষামাজা করা দরকার, তারই খুঁটিনাটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ওই কেন্দ্রে।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, এ রাজ্যে ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা-কেন্দ্র রয়েছে ঠিকই। কিন্তু কর্মী থেকে প্রশাসক হয়ে ওঠার এমন প্রতিষ্ঠান এখনও সে ভাবে নেই। এ বার তাঁরা সেই কাজেই হাত দেওয়ার কথা ভাবছেন। ইতিমধ্যেই বিদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁদের প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-এর বার্ষিক সম্মেলনে দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের সামনেও বিষয়টি তোলা হবে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সাধারণ ‘টিম ম্যান’ থেকে নেতা হয়ে ওঠা যেমন কঠিন, কর্মী থেকে প্রশাসক হয়ে ওঠাটাও তেমনই কঠিন। সকলকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষ কিছু গুণ থাকা দরকার। তা সব ক্ষেত্রে সহজাত নয়। এটা তৈরি করে নিতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেই। এমন প্রতিষ্ঠান তৈরি হলে স্বাস্থ্য দফতরই বোধহয় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।”

কর্পোরেট জগতে ‘এগ্জিকিউটিভ কোচিং’-এর ধারণা আগেই চালু হয়েছে। সরকারি দফতরের ক্ষেত্রে তেমন হলে তা রাজ্যের কর্মসংস্কৃতিতেও অনেকটাই বদল আনতে পারবে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের। ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ বীর্যেন্দু গুপ্তের কথায়, “একে বলে পিপল্স ম্যানেজমেন্ট। কর্মী থেকে রাতারাতি প্রশাসক হয়ে উঠলে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না, তাঁর ভূমিকাটা কী হবে। কতটা কাজ তিনি নিজে করবেন, কতটা অন্যদের দিয়ে করাতে হবে, কী ভাবে সব কিছুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে সেটা বোঝা খুব জরুরি। তাই এ ধরনের প্রশিক্ষণ খুব কাজে দেবে।”

বীর্যেন্দুবাবু বলেন, “সিঙ্গাপুরে গিয়ে দেখেছিলাম ওখানে ডাক্তারদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু তো চিকিৎসা নয়, রোগীর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কী ভাবে কথা বলতে হবে, রোগ সম্পর্কে কী ভাবে রোগীকে বোঝাতে হবে, হাসপাতালের বিল নিয়ে সমস্যা হলে কী ভূমিকা নিতে হবে, সবই শেখানো হয়।”

ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পেশাদারিত্ব সব ক্ষেত্রেই জরুরি। কিন্তু সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব না থাকাটাই বহু ক্ষেত্রে নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সেই ধারণায় একটা বদল দরকার।

পার্থবাবু জানান, তাঁদের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এই প্রশিক্ষণ নিতে কর্মীদের দেশের বাইরেও পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সে ক্ষেত্রে খরচ একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। তাই সব দিক বিবেচনা করেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, “প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন বাইরের অধ্যাপকরাও এসে পড়ান, এখানেও তেমন ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি বিদেশে গিয়ে অল্প দিনের জন্য হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হবে। সর্বাধিক দেড় বছরের প্রশিক্ষণ হবে।”

তবে এ ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণ কারা দিচ্ছেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বীর্যেন্দুবাবুর কথায়, “বিশ্ব মানের কোনও প্রতিষ্ঠান খুলতে গেলে কে সেটা চালাবেন, শিক্ষক কারা তা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাই অবশ্যই চাইব সে ক্ষেত্রে যেন কোনও আপস করা না হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE