Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দূষণহীন মডেল-যান, দিল্লি যাচ্ছে দুই পড়ুয়া

গাড়ির দূষণ রোধের মডেল তৈরি করে দিল্লি যাওয়ার ডাক পেল পুরুলিয়ার দুই স্কুল পড়ুয়া। মোটরবাইকের ধোঁয়ার দূষণ রোধক যন্ত্রের মডেল বানিয়ে রাজ্যস্তরের মডেল তৈরির প্রতিযোগিতায় সেরা হয়ে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছে পুরুলিয়ার হুড়া ব্লকের লক্ষ্মণপুর যোগদা সৎসঙ্গ ক্ষীরোদাময়ী বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণির ছাত্র রূপম কুম্ভকার।

রূপম কুম্ভকার ও দেবাঞ্জন দত্ত। — নিজস্ব চিত্র।

রূপম কুম্ভকার ও দেবাঞ্জন দত্ত। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হুড়া ও মানবাজার শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

গাড়ির দূষণ রোধের মডেল তৈরি করে দিল্লি যাওয়ার ডাক পেল পুরুলিয়ার দুই স্কুল পড়ুয়া।

মোটরবাইকের ধোঁয়ার দূষণ রোধক যন্ত্রের মডেল বানিয়ে রাজ্যস্তরের মডেল তৈরির প্রতিযোগিতায় সেরা হয়ে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছে পুরুলিয়ার হুড়া ব্লকের লক্ষ্মণপুর যোগদা সৎসঙ্গ ক্ষীরোদাময়ী বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণির ছাত্র রূপম কুম্ভকার। আর মানবাজার রাধামাধব বিদ্যায়তনের দশম শ্রেণির দেবাঞ্জন দত্ত তৈরি করেছে ‘সোলার হাইব্রিড সাইকেল’। সৌরশক্তির সাহায্যে গিয়ার লাগানো সাইকেল তৈরি করেছে ওই পড়ুয়া। আগামী ২৬-২৮ অক্টোবর দিল্লিতে সারা দেশের স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে তাদের মডেলগুলি প্রদর্শিত হতে চলেছে।

স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে বিজ্ঞান ভাবনা ও সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে স্কুল শিক্ষা দফতর বিজ্ঞান বিষয়ক মডেল গড়ার প্রতিযোগিতা করে থাকে। কলকাতায় গত ২০-২১ অগস্ট বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ৫ম স্টেট লেবেল ইনস্পায়ার অ্যাওয়ার্ড সায়েন্স এগজিবিশন হয়। রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় রাজ্যের ২০টি জেলার মোট ২০০ মডেল যোগ দিয়েছিল। তার মধ্যে এই রাজ্য থেকে ১৫টি মডেল জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তাদের মধ্যে দু’জন এই পুরুলিয়া জেলার।

গত জুলাই মাসের শেষে জেলা শিক্ষা দফতর আয়োজিত জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় যোগদানের সুযোগ পেয়েছিল রূপম। তার মডেলটির পোশাকি নাম ‘পলিউশন কন্ট্রোল ডিভাইস অব মোটর ভেহিক্যাল’ বা মোটরবাইক বা মোটর যানের দূষণ রোধক যন্ত্র। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রহ্লাদ মাহাতো নিজেই রূপমের মডেল তৈরির অন্যতম সহযোগী শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের কথায়, মোটরযানের কথা বলা হলেও ও মূলত মোটরবাইকে লাগানো যন্ত্রটিই দেখানো হয়েছে। কী ভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র? রূপমের কথায়, ‘‘একটি ধাতব সিলিন্ডার যা খানিকটা বোতলের মতো দেখতে অথচ মোটরবাইকের সাইলেন্সরের মধ্যে ঢোকানো থাকবে। এই সিলিন্ডারের ভিতরে একটি ধাতব পাইপ রাখা হচ্ছে যার গায়ে অনেক ছিদ্র থাকবে। সেই পাইপের ভিতরে তামার ও লোহার তৈরি ৩৫ ওয়াটের একটি বৈদ্যুতিক কয়েল রয়েছে, যা ওই ধাতব পাতের সঙ্গে লাগানো থাকবে মোটরবাইকের সাইলেন্সরের ভিতরে। এই ডিভাইসটির মধ্যে দিয়ে যে ধোঁয়া বাইরে বেরোয়, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তাতে দূষণের মাত্রা অনেকটাই কম।’’

প্রধান শিক্ষক প্রহ্লাদবাবু বলেন, মোটরবাইকের ধোঁয়ায় তিনটি গ্যাস থাকে— কার্বন মনোক্সাইড, আনবার্ন অর্থাৎ অদগ্ধ হাইড্রোকার্বন ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড। মোটরবাইকের ইঞ্জিনে পেট্রল পুড়ে এই তিনটি গ্যাসই বাতাসের সঙ্গে মেশে। তার মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড ক্ষতিকর। এই গ্যাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে রক্তের সঙ্গে মিশে একটি যৌগ তৈরি হয়। তাতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’’ তাঁর দাবি, দেখা গিয়েছে এই যন্ত্রের বা ডিভাইসের মধ্যে দিয়ে মোটরবাইকের ধোঁয়া বের হলে তাতে কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা ৭০-৮০ শতাংশ কমে যাচ্ছে, আনবার্ন হাইড্রোকার্বন কমে যাচ্ছে ৯৬ শতাংশ, আর নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা কমে যাচ্ছে ৮০ শতাংশে।

রূপমকে সহায়তা করা বিদ্যাপীঠের আর এক শিক্ষক সন্তোষ সিং পাতর বলেন, ‘‘এই ডিভাইস পরিবেশের জন্য অত্যন্ত বন্ধু হয়ে উঠতে পারে।’’ প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, রারূপমের মডেলটি তার অন্যতম। রূপম বলে, ‘‘জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় নিজের মডেল দেখানোর সুযোগ পেয়ে আমি খুবই গর্বিত। বিচারকদের মডেলটি বুঝিয়ে বলব।’’ রূপমের বাবা উজ্বলময় কুম্ভকার হুড়া থানা এলাকার অর্জুনজোড়া হাইস্কুলের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের উপর আমার আস্থা রয়েছে।’’

মানবাজার রাধামাধব বিদ্যায়তনের দশম শ্রেণির দেবাঞ্জন দত্তর বাবা কুমারেশ দত্ত পুঞ্চার একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। তিনি জানান, ২৫ জুলাই পুরুলিয়ায় জেলাস্তরের প্রতিযোগিতা হয়েছিল। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ১৫৮ জন স্কুল পড়ুয়া তাদের বিজ্ঞান বিষয়ক মডেল নিয়ে এসেছিল। জেলা থেকে তার মধ্যে ১০টি মডেল রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় যায়। তার মধ্যে দেবাঞ্জনের মডেলটি বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছে। দেবাঞ্জন জানায়, গ্রামাঞ্চলে যানবাহন হিসাবে এখনও সাইকেলের বিকল্প নেই। কিন্তু কমবয়সি ও বয়স্ক মানুষেরা খানিকক্ষণ সাইকেল চালানোর পরে হাঁপিয়ে পড়েন। তাদের কষ্ট কমাতে তার মডেলটি কাজের বলে দাবি দেবাঞ্জনের। তার কথায়, ‘‘এই সাইকেলে গিয়ারে একটি মোটর লাগানো হয়েছে। ওই মোটরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি সোলার প্যানেল দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্যাডেল করতে অসুবিধা হলে মোটরের সাহায্যে চাকা আপনি গড়াবে। সাইকেল, সোলার প্যানেল ও মোটর নিয়ে সবশুদ্ধ এই আধুনীক সাইকেলের খরচ ১২ হাজার টাকা।’’ সে জানাচ্ছে, সোলার প্যানেলের দু’বছরের ওয়ারেন্টি রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হলে খরচ আরও কমবে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে উদ্বিগ্ন মহলের কাছে পুরুলিয়ার দুই খুদে বিজ্ঞানীর মডেল কতটা সমাদৃত হয়, সে দিকেই তাকিয়ে সবাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE