Advertisement
০৫ মে ২০২৪

নাসিরুল্লাই সোহেল, জানাল খালিদ

যে হাত কাটা নাসিরুল্লা, সেই সোহেল মাহফুজ। বাংলা ভাইয়ের ফাঁসির পরে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এই কট্টর জঙ্গি জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পায়। এই সোহেল মাহফুজই ২০০৬ থেকে মুর্শিদাবাদ-মালদহ-নদিয়া জুড়ে গড়ে ওঠা জেএমবি-র ‘৬৫তম শাখা’র প্রধান হিসেবে কাজ করে এসেছে।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হচ্ছে আলিমা বিবিকে। মহিলা পুলিশকর্মীর কোলে আলিমার সন্তান (বাঁ দিকে)। কলকাতা বিমানবন্দরে খালিদ মহম্মদ।  ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক ও নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হচ্ছে আলিমা বিবিকে। মহিলা পুলিশকর্মীর কোলে আলিমার সন্তান (বাঁ দিকে)। কলকাতা বিমানবন্দরে খালিদ মহম্মদ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক ও নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

যে হাত কাটা নাসিরুল্লা, সেই সোহেল মাহফুজ। বাংলা ভাইয়ের ফাঁসির পরে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এই কট্টর জঙ্গি জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পায়। এই সোহেল মাহফুজই ২০০৬ থেকে মুর্শিদাবাদ-মালদহ-নদিয়া জুড়ে গড়ে ওঠা জেএমবি-র ‘৬৫তম শাখা’র প্রধান হিসেবে কাজ করে এসেছে। হায়দরাবাদ থেকে ধরা পড়া রোহিঙ্গা জঙ্গি খালিদ মহম্মদকে জেরা করে এই নতুন তথ্য এসেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে।

সোহেল মাহফুজকে আগে থেকেই খুঁজছে এনআইএ। খুঁজছে হাত কাটা নাসিরুল্লাকেও। কিন্তু দু’জনেই যে একই লোক, সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি আদতে মায়ানমারের নাগরিক খালিদের কাছ থেকে জানতে পারল গোয়েন্দারা।

খালিদ জানিয়েছে, বছর দুয়েক আগে জেএমবি-র পশ্চিমবঙ্গ শাখাটিকে ঢেলে সাজা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গোয়েন্দাদের নজরদারি বেড়ে় যাওয়ায় বিস্ফোরক তৈরির কারখানার একটা অংশ সরিয়ে আনা হয় বর্ধমানে। সে সময়েই সোহেলের বদলে জেএমবি-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান বা ‘আমির’ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় সাজিদ ওরফে শেখ রহমতুল্লাকে।

ডিজি শারদ কুমারের নেতৃত্বে এনআইএ-র একটি প্রতিনিধি দল এখন ঢাকায় বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে বসে তথ্য বিনিময় করছেন। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জেএমবি-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাইদুর রহমান ২০১০ সালে ধরা পড়ার পরে জেরায় জানায়, সোহেল মাহফুজের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র একটি শাখা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় তাদের ৬৪টি শাখা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শাখাটি তাই তাদের ৬৫তম শাখা। সাইদুর দাবি করেছিল, সে দলে নরমপন্থী হিসেবে পরিচিত। পুলিশ তাকে ধরার পরে সোহেল মাহফুজের মতো কট্টর জঙ্গিরা জেএমবি-র নেতৃত্বে চলে আসবে। তাতে এই সংগঠনটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। সাড়ে পাঁচ ফুটের রোগাসোগা চেহারা খালিদ মহম্মদের। দেখে বোঝার উপায় নেই তার হাত ধরেই বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছে এ রাজ্য তথা দেশের পাঁচ-পাঁচটি দল। হায়দরাবাদ থেকে ধৃত খালিদ ও অন্য সাত জনকে বৃহস্পতিবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খানের এজলাসে হাজির করা হয়েছিল।

আদালতে হাজির হওয়ার পরে চোখেমুখে কোনও অভিব্যক্তি ছিল না খালিদের। এক গাল দাড়ি, প্রায় সাদা ফুল শার্ট ও কালচে ময়লা প্যান্ট পরে সারা ক্ষণ বিচারকের দিকে তাকিয়ে ছিল সে। তার হয়ে কোনও আইনজীবী ছিল না। তাই সরকারি কৌঁসুলির কথাই মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করে গিয়েছে খালিদ। আড়াই ঘণ্টার বিচারপর্বের শেষে পুলিশ যখন কোর্ট লকআপে তার মুখে কালো কাপড় জড়িয়ে দিল, তখনও সে নির্বিকার।

আদতে মায়নমারের বাসিন্দা খালিদ মহম্মদকে ১৭ নভেম্বর হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। সেখানকার আদালতে তাকে একপ্রস্ত হাজির করানোর পরে বৃহস্পতিবার দুপুরেই তাকে নিয়ে কলকাতায় পৌঁছন তদন্তকারীরা।

প্রাথমিক জেরায় খালিদ জানিয়েছে, পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান তাকে বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়। তরল রাসায়নিক ব্যবহার করে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক তৈরিতে সে সিদ্ধহস্ত। নেতৃত্বের নির্দেশে ভারতের নানা জায়গায় গড়ে ওঠা জঙ্গি শাখাগুলিকে সে এই বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়। গত এক বছরে মুর্শিদাবাদে এসে সে যেমন প্রশিক্ষণ দিয়ে গিয়েছে, তেমনই ভারতের আরও চারটি জায়গায় সে এই কাজ করেছে। কোন পাঁচটি দলকে খালিদ ওই প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, তা তাকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

গোয়েন্দারা বলছেন, সিমি ও জেএমবি-সহ উপমহাদেশের অধিকাংশ ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার সদস্য। আল কায়দার সর্বোচ্চ নেতা আয়মান আল জওয়াহিরি সম্প্রতি ভিডিও বার্তায় ভারতে তাদের শাখা তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন। এনআইএ মনে করছে, মায়ানমারের আরাকানে জঙ্গি-শিবির চালানো খালিদ আসলে জঙ্গিদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথাতেই ভারতে প্রশিক্ষণ দিতে এসেছে। মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে ২০১৩ সালে এ দেশে ঢোকে খালিদ। প্রথমে ডেরা বাঁধে হায়দরাবাদে। সেখানে তার ভোটার কার্ড, আধার কার্ডও তৈরি করানো হয়।

এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ আদালতে জানান, খালিদের কাছ থেকে প্রচুর নথি মিলেছে। সেই সব নথির ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য যাচাই করার জন্য খালিদকে আরও জেরা করা দরকার। খালিদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা দরকার ধৃত সাজিদ ও আমজাদকে। বিচারক ওই তিন জনকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। রাজিয়া বিবি, হাসেম মোল্লা, জিয়াউল হক, আলিমা বিবি ও আব্দুল হাকিমকে জেল হেফাজতে পাঠানোর আবেদন জানানো হয়েছিল এনআইএ-য়ের পক্ষ থেকে। বিচারক ওই পাঁচজনকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

খাগড়াগড় কাণ্ডে পলাতক অভিযুক্ত রেজাউল করিমের মুর্শিদাবাদের খোদারামপুর ভূতবাগানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এ দিন ১২৫টি সিম কার্ড উদ্ধার করেছেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার ওই তল্লাশির সময় মিলেছে বেশ কিছু কাগজপত্রও। এ দিনও রেজাউলের বাবা, ভাই ও এক সহপাঠীকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা।

এ দিন নানুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি স্টুডিও মালিক বাবলু সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। বাবলুবাবুর স্টুডিও থেকে কম্পিউটরের সিপিইউ বাজেয়াপ্ত করা হয়। এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে কীর্ণাহারে বোরহান শেখ নামে এক জনের ভুয়ো ভোটার কার্ড উদ্ধার হয় ধৃত সাজিদের কাছ থেকে। গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই কার্ড নানুরের ওই স্টুডিও থেকেই তৈরি করা হয়েছিল। এর পরে খুজুটিপাড়ার একটি কাঠমিল থেকে একটি ল্যাপটপও বাজেয়াপ্ত করেছে গোয়েন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

khagragarh blast NIA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE