Advertisement
১১ মে ২০২৪

প্রকল্প ঘোষণার পরে কিছুটা সময় তো দিতেই হয়

সম্প্রতি চার দিনের সফরে দার্জিলিঙে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সরকারি কর্মসূচির ফাঁকে কখনও গ্লেনারিজ, কখনও লালকুঠির থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, আবার ঘুম থেকে টাইগার হিলে হেঁটে যাওয়ার সময়ে বা ফেরার সময়ে গাড়িতে বসেও উত্তরবঙ্গের সাত জেলা নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন কিশোর সাহাকে।সম্প্রতি চার দিনের সফরে দার্জিলিঙে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সরকারি কর্মসূচির ফাঁকে কখনও গ্লেনারিজ, কখনও লালকুঠির থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, আবার ঘুম থেকে টাইগার হিলে হেঁটে যাওয়ার সময়ে বা ফেরার সময়ে গাড়িতে বসেও উত্তরবঙ্গের সাত জেলা নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন কিশোর সাহাকে।

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

প্রশ্ন: আপনার দার্জিলিঙে আসার সুবর্ণজয়ন্তী শীঘ্রই হয়ে যাবে!

মুখ্যমন্ত্রী: ভুল। আমি দার্জিলিঙে আরও বেশি বার এসেছি। রেলমন্ত্রী থাকার সময় থেকে ধরলে কমপক্ষে পঁয়ষট্টি বার দার্জিলিঙে আসা হয়ে গেল।

প্রশ্ন: এত বার যাতায়াত করছেন। উন্নয়নের কাজ কতটা হচ্ছে?

মুখ্যমন্ত্রী: আমি তো অনেক কাজ করেছি।

প্রশ্ন: আপনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বালুরঘাটে নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র হবে বলে ঘোষণা হয়। চার বছরে সেই কেন্দ্র হল না।

মুখ্যমন্ত্রী: একটা প্রকল্প ঘোষণার পরে ডিপিআর (ডিটেলড প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি করে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে কাজ করাতে হয়। কিছুটা সময় তো দিতেই হয়। নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার কাজ এগিয়েছে। গৌতমকে বলেছি, চলতি বছরেই কাজ শেষ করে উদ্বোধনের প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

প্রশ্ন: পাশের জেলা মালদহে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। তবুও স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বহু অভিযোগ। গাফিলতিতে শিশু মৃত্যু নিয়েও মাঝেমধ্যেই হইচই হয়।

মুখ্যমন্ত্রী: এটা ঠিক আমরা যখন ক্ষমতাসীন হই, তার পরে কিছু দিন মালদহে পর পর শিশু মৃত্যু নিয়ে হইচই হয়। এখন তেমন অভিযোগ প্রায় ওঠেই না। কারণ, আমরা মালদহ শুধু নয়, বেশির ভাগ বড় হাসপাতালে নিও নেটাল চাইল্ড কেয়ার ইউনিট চালু করেছি। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, সরকারি হাসপাতালে শিশুমৃত্যু কমেছে। সরকারি হাসপাতালে প্রসবের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন: তা সত্ত্বেও তো নানা অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে। বিশেষত, প্রসূতি, সদ্যোজাতদের পরিষেবার ব্যাপারে।

মুখ্যমন্ত্রী: মালদহের মেডিক্যাল কলেজে বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে বহু প্রসূতি ভর্তি হন। আমরা সমীক্ষায় দেখেছি, ওই সব এলাকার দরিদ্র পরিবারের প্রসূতিরা যে সব শিশুর জন্ম দেন, তাদের ওজন আশঙ্কাজনক ভাবে কম। ৪০০ গ্রাম ওজনের শিশুও জন্মেছে। তাদের বাঁচাতে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতালকে। তবু চেষ্টা হয়। যে রাজ্যেরই প্রসূতি হন, ফিরিয়ে দিতে পারি না।

প্রশ্ন: উত্তর দিনাজপুরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জন্য ন’তলা ভবন হচ্ছে। কিন্তু জেলার দমকলের কাছে যা সিঁড়ি রয়েছে তাতে দোতলার বেশি ওঠা যায় না।

মুখ্যমন্ত্রী: দমকলের ব্যাপারটা টেকনিক্যাল। টেকনিক্যাল কমিটি হাসপাতাল তৈরির আগে ব্যবস্থা করবে। হাসপাতাল তাড়াতাড়ি চালুর চেষ্টা চলছে। রায়গঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেছিলাম। সেটা চালু হয়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন: রাজ্য মহিলা কমিশনে উত্তরবঙ্গের এক জন প্রতিনিধিও নেই কেন?

মুখ্যমন্ত্রী: আমরা আসার পরে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েক জন প্রতিনিধি ছিলেন। এই মুহূর্তে নেই। তবে এখনই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। (গাড়িতে বসেই মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয়ে ফোন করে নির্দেশ দিলেন, জরুরি ভিত্তিতে উত্তরবঙ্গ থেকে যোগ্য এক জনকে বাছাই করে সদস্য করতে হবে।) কিছুক্ষণ পরে বললেন, কার্শিয়াঙের প্রাক্তন বিধায়ক শান্তা ছেত্রীকে মহিলা কমিশনের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। শীঘ্রই তাঁর কাছে সরকারি ভাবে চিঠি পাঠানো হবে।

লালকুঠির অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে ঘুমের কিছুটা দূর থেকে টাইগার হিলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে

প্রশ্ন: উত্তরবঙ্গের পর্যটন বিকাশের কাজে গতি কতটা আনা গিয়েছে?

মুখ্যমন্ত্রী: অনেক কাজ হয়েছে। লামাহাটা আগে কী ছিল? আর এখন কী হয়েছে? আমি কাজ ফেলে রাখা পছন্দ করি না। নিজে গিয়ে তদারকি করি। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে গিয়েও হেঁটে ঘুরে দেখি।

প্রশ্ন: তা হলে টাইগার হিলের পথে যা বলে গিয়েছিলেন তার কতটা দেখতে পাচ্ছেন?

(মুখ্যমন্ত্রী দুটি জায়গা দেখাতে দাঁড়ালেন। অদূরে বনবস্তির দিকে দেখালেন। পরিত্যক্ত ডাকবাংলো দেখালেন। উঁচু জায়গায় হেলিপ্যাড তৈরির জায়গাও দেখালেন।)

মুখ্যমন্ত্রী: আমি বলেছিলাম, কংক্রিটের জঙ্গল নয়, লামাহাটার ধাঁচে কটেজ করতে হবে। জায়গা দেখিয়েছিলাম। ডাকবাংলোটা সারাতে বলেছিলাম। কাজ এগোয়নি।

(সেখানে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবকে নির্দেশ দেন পর্যটন সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। ফোনের সংযোগ মেলামাত্র সেটি হাতে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ‘‘আপনি তাড়াতাড়ি এসে টাইগার হিলের আশপাশের কাজগুলি করে ফেলুন। জমি নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে জটিলতার যুক্তি আমি শুনব না। ওটা মিটিয়ে দ্রত কাজটা করে ফেলুন।’’)

টাইগার হিল থেকে গাড়িতে ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী

প্রশ্ন: আচ্ছা, কোচবিহারে ছিটমহল বিনিময় পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পরে সেখান থেকে রাজ্যসভায় একজনকে সাংসদ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পাঠানোর তোড়জোড় চলছে। অতীতে উত্তরবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় সাংসদ ছিল। এখন রাজ্যসভায় উত্তরবঙ্গ থেকে প্রতিনিধি নেই কেন, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

মুখ্যমন্ত্রী: সব কিছু কোটায় হয় না। উত্তরবঙ্গের জন্য আমি যা করেছি ও করছি, অতীতে কেউ করেনি। এত বার নিজে এসে সব কাজ যাতে ঠিকঠাক হয় সে সব দেখছি। কোচবিহারে বিমানবন্দর চালুর জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বহু কোটি টাকা দিয়ে রেখেছি। তবুও কাজ এগোয় না। ছিটমহল করে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে কোচবিহার, রায়গঞ্জে। শিলিগুড়ির কাছে গজলডোবায় বড় পর্যটন প্রকল্প হচ্ছে। শিলিগুড়ির গা ঘেঁষে হচ্ছে সাফারি পার্ক। তার পরেও কোটার প্রশ্ন তোলাটা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, কোটার ভিত্তিতে সব চলতে পারে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE