Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রত্যাশিত ছিল, বিতাড়িত হয়েও মেজাজে হুমায়ুন

ঢাউস মোবাইল দু’টো পালা করে বেজেই চলেছে। কোনওটা ধরছেন, কোনওটা বা আংটি বোঝাই আঙুলের চাপে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সাইলেন্ট মোডে। জামার হাতায় বোতাম লাগানোর ফাঁকে বলছেন, “লোকে কত প্রত্যাশা নিয়ে ফোন করছেন বলুন তো, একটাই কথা, ‘দল ছাড়লে বলবেন দাদা, আমরাও সঙ্গে আছি।”

একলা চলো রে...। বুধবার রাতে নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়ার পর হুমায়ুন কবীর। বৃহস্পতিবার বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

একলা চলো রে...। বুধবার রাতে নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়ার পর হুমায়ুন কবীর। বৃহস্পতিবার বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

ঢাউস মোবাইল দু’টো পালা করে বেজেই চলেছে।

কোনওটা ধরছেন, কোনওটা বা আংটি বোঝাই আঙুলের চাপে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সাইলেন্ট মোডে।

জামার হাতায় বোতাম লাগানোর ফাঁকে বলছেন, “লোকে কত প্রত্যাশা নিয়ে ফোন করছেন বলুন তো, একটাই কথা, ‘দল ছাড়লে বলবেন দাদা, আমরাও সঙ্গে আছি।”

অনুগামীদের সেই প্রত্যাশায় অবশ্য এখনই সাড়া দিচ্ছেন না। তবে দলনেত্রী এবং তাঁর আড়াই বছরের পুরনো দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় তাঁকে যে শাস্তির মুখে পড়তে হবে, বুধবার রাতেই তা ‘প্রত্যাশা’ করেছিলেন হুমায়ুন কবীর।

বৃহস্পতিবার বহরমপুরের পর্যটন আবাসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি বলছেন, “এ আর নতুন কী! এ তো প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত।” কেন?

তার একটা ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল নেতা, “গত লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরে দলীয় প্রার্থীর (ইন্দ্রনীল সেন) পরাজয়ের পর প্রতি পদক্ষেপে আমাকে অপমানিত করা হয়েছে। দলীয় কর্মসূচিতে না-ডেকে, কোনও দায়িত্ব না দিয়ে যে ভাবে নিষ্ক্রিয় করে রেখে দেওয়া হয়েছিল, তা এক রকম বহিষ্কারেরই সামিল ছিল। তাই এ বার মুখ খুললেই যে বহিষ্কার করা হবে, জানতাম।”

দল তাঁকে সরিয়ে দেওয়ায় অবশ্য পূর্বঘোষিত ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’-এর পথে হাঁটছেন না তিনি। বরং জোর গলায় জানাচ্ছেন, দিন কয়েকের মধ্যেই মুর্শিদাবাদ জুড়ে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে অন্তত ১০টি কর্মিসভা করবেন তিনি। দোলের পরে বহরমপুরে একটি গণ কনভেনশন করারও ইচ্ছে আছে তাঁর। তিনি বলছেন, “তার পর ঠিক করব, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হব কি না।”

গত মঙ্গলবার তাঁকে ‘শো-কজ’ করেছিল দল। তার জেরে, ক্ষুব্ধ হুমায়ুন বুধবার তোপ দেগেছিলেন, নিজের ভাইপোকে ‘রাজা বানানোর’ চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলনেত্রীর পাশাপাশি তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী ইন্দ্রনীল সেনকেও বিঁধতে কসুর করেননি তিনি। অভিযোগ ছিল মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার সার্টিফিকেট তুলে ধরে মুর্শিদাবাদ জেলায় রীতিমতো তোলাবাজির কারবার খুলে বসেছেন ওই গায়ক-নেতা।

মুখ খোলার ‘শাস্তি’ স্বরূপ ওই রাতেই হুমায়ুনের নিরাপত্তাকর্মী প্রত্যাহারের আদেশ জারি করেছিল সরকার।

ফলে তিন দিনের মধ্যেই, শো কজ, নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার এবং এ দিন সকালে ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে বিদ্রোহী নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বৃত্ত সম্পূর্ণ করল তৃণমূল।

তবে, নিরাপত্তাকর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের জবাব দিতে আদালতে যাচ্ছেন হুমায়ুন।

২০০৭-এ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের নির্দেশে সর্বক্ষণের জন্য এক জন সরকারি নিরাপত্তাকর্মী বরাদ্দ হয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুনের জন্য। গত বুধবার রাতে সেই নিরাপত্তারক্ষীদেরই তুলে নেওয়ায় প্রাক্তন ওই মন্ত্রীর প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারের সমালোচনা করায় ওই দিন রাতেই আমার সরকারি নিরাপত্তাকর্মী প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু, নিরাপত্তা দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করা মানে আদালতকে অগ্রাহ্য করা, তা কি করতে পারে সরকার?”

এ ব্যাপারে দিন কয়েকের মধ্যেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন তিনি। তবে, এই রক্ষী প্রত্যাহার প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকরের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, “নিরাপত্তাকর্মী দেওয়া, বা প্রত্যাহার করা পুলিশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা প্রয়োজন মনে করলে তা দিতে বা তুলে নিতে পারি।”

নিরাপত্তাকর্মী প্রত্যাহারের পরে হুমায়ুনের আশঙ্কা, এ বার তাঁকে ‘খুন’ করা কিংবা ‘মিথ্যা মামলায়’ ফাঁসিয়ে গ্রেফতারও করা হতে পারে। হুমায়ুন বলেন, “আমাকে খুন করার চক্রান্ত করেছে সরকার। নিরাপত্তাকর্মী তুলে নেওয়া তার প্রথম ধাপ।” তাঁর অভিযোগ, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি ‘মিথ্যা’ মামলা রুজু করেছিল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ও সেই পথেই হাঁটছেন বলে তাঁর দাবি। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ‘অন্যায়ের’ প্রতিবাদ করায় তাঁর এবং ছেলে গোলাম নবি আজাদের বিরুদ্ধে চারটি ‘মিথ্যে’ মামলা করা হয়েছে। তবে পিছিয়ে আসার বান্দা তিনি নন জানিয়ে হুমায়ুন বলছেন, “আমি তৃণমূলের বা সরকারের কোনও অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করব। গ্রেফতার করলে করুক। প্রতিবাদ বন্ধ থাকবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

humayun kabir bahrampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE