Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ ক্যাম্প মাখড়ায়, আতঙ্ক বহাল

বহিরাগত দুষ্কৃতীদের হামলায় তছনছ হয়ে গিয়েছে গ্রাম। আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে বহু পরিবার। পুলিশ স্রেফ হাত গুটিয়ে থেকেছে। ভরসা জোগায়নি প্রশাসনও। উল্টে যে সব বিরোধী দল গ্রামের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে, দূর থেকেই তাদের আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ১৪৪ ধারা জারি থাকার যুক্তি দেখিয়ে।

অবশেষে বসল মাখড়ায় বসল পুলিশ ক্যাম্প। ছবি: বিশ্বজিত্‌ রায়চৌধুরী

অবশেষে বসল মাখড়ায় বসল পুলিশ ক্যাম্প। ছবি: বিশ্বজিত্‌ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
মাখড়া শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৫১
Share: Save:

বহিরাগত দুষ্কৃতীদের হামলায় তছনছ হয়ে গিয়েছে গ্রাম। আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে বহু পরিবার। পুলিশ স্রেফ হাত গুটিয়ে থেকেছে। ভরসা জোগায়নি প্রশাসনও। উল্টে যে সব বিরোধী দল গ্রামের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে, দূর থেকেই তাদের আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ১৪৪ ধারা জারি থাকার যুক্তি দেখিয়ে।

তাই সোমবারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অন্তত ৫০ ঘণ্টা পরে এলাকায় পুলিশ দেখে ক্ষোভ আরও বেড়ে গেল মাখড়াবাসীর। বুধবার বিকেলে মাখড়া গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ল জেলা পুলিশ। তার পরে চলল ‘রুট মার্চ’ও। এ সব অবশ্য গ্রামবাসীদের বিন্দুমাত্র ভরসা জোগাতে পারেনি। বরং তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলছেন, “সে দিন ওরাই তো দুষ্কৃতীদের নিরাপত্তা দিয়েছিল। দূর থেকে গ্রামে হামলা হতে দেখছিল। কিন্তু এক পা-ও এগোয়নি। আর আজ ওরা এসেছে আমাদের নিরাপত্তা দিতে? এটা প্রহসন নয়তো কী!”

এ দিন কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং বিজেপি-র প্রতিনিধিদল পরপর মাখড়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। বিস্তর তর্কাতকির পরেও মাখড়া থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে হাঁসড়ায় ওই প্রতিনিধিদলকে আটকে দেয় পুলিশ। বিকেলে চারটের পরে বোলপুরের সিআই চন্দ্রশেখর দাসের নেতৃত্বে র্যাফ ও কমব্যাট বাহিনী হাঁসড়া স্কুল মোড় ছেড়ে মাখড়া গ্রামে ঢোকে। ওই সময় পুলিশের গাড়ি গ্রামে ঢুকতে দেখে কোনও কোনও গ্রামবাসী নতুন করে ভয় পেয়ে যান। তাঁরা ভাবতে শুরু করেন, পুলিশ বুঝি এই ধরপাকড় শুরু করবে! যদিও সে রকম কিছু ঘটেনি। এর পরে পুলিশের চারটি গাড়ি গিয়ে থামে দক্ষিণপাড়ায় ক্যানালের কাছে। একে একে পুলিশকর্মীরা নিজেদের তল্পিতল্পা নিয়ে নামতে থাকেন। তাঁদের গন্তব্য কোথায়, দেখার জন্য নিরাপদ দূরত্ব থেকে মাপতে থাকেন বাসিন্দারা। দক্ষিণপাড়া মসজিদের সামান্য আগে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢোকে পুলিশ বাহিনী। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ডেকে কথা বলেন বোলপুর থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর। প্রধান শিক্ষক শেখ ফজলুল হক স্কুলের তিনটি ক্লাসঘর খুলে দেন। সেখানেই অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ে পুলিশ।

প্রাথমিক ভয় কাটিয়ে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা তথা বোলপুর সেচ বিভাগের কর্মী শেখ সিরাজুল হক-সহ কিছু গ্রামবাসী পুলিশ ক্যাম্পে সিআই-এর সঙ্গে কিছু দেখা করতে আসেন। এর পরে রুট মার্চ। মোজাম্মেল ও তৌসিফের গ্রামের উত্তর দিকে একপ্রান্তে থাকা গোর দেওয়ার স্থানটিও দেখে আসেন।

আতঙ্কে ছুটি ঘোষণা হাঁসড়া হাইস্কুলে। বসে রয়েছেন
শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ছবি: বিশ্বজিত্‌ রায়চৌধুরী

গ্রামবাসীদের ভয় অবশ্য কাটছে না। যাচ্ছে না পুলিশের প্রতি ক্ষোভও। সামসুন্নেহা বিবি, মঞ্জিলা বিবি থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া রোশনি খাতুনরা বলেন, “এখন আর পুলিশ এসে কী হবে! ইতিমধ্যেই তো গ্রামের অনেকেয আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে।” উত্তরপাড়ার জিয়ারুল ইসলাম, গুলাম কুদ্দুস বা মাঝপাড়ার মসলিমা বিবিদের ক্ষোভ, “ভাঙচুর, মারধর, লুঠতরাজ, শ্লীলতাহানি, বোমা-গুলির লড়াইএ সবই সে দিন হল পুলিশের সামনে। এমনকী, জেলা পুলিশের কর্তারাও গ্রামের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় কোনও পুলিশের টিকি দেখা গেল না গ্রাম! আমরা অনেকে প্রাণ বাঁচাতে পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছি। যে যেমন ভাবে পেরেছি পালিয়েছি। অথচ ঘটনার দু’দিন পরে অস্থায়ী ক্যাম্প করা হচ্ছে। এই পুলিশ আমাদের কী নিরাপত্তা দেবে?”

তবে, শুধুই মাখড়া নয়, সোমবারের সংঘর্ষে আতঙ্ক ছড়িয়েছে আশপাশের এলাকাতেও। লাগোয়া হাঁসড়া উচ্চ বিদ্যালয় খোলা থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের নগণ্য উপস্থিতির জন্য পঠনপাঠন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানালেন অপূর্বকুমার চক্রবর্তী। মাখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা আতঙ্কে রয়েছেন। স্কুলের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে একটু সময় তো লাগবেই।”

আপাতত অবশ্য ওই স্কুলে পুলিশ থাকছে। মাখড়ার পাহারায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police camp makhra panic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE