কলকাতায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের (আমেরিকান সেন্টার) সামনে জঙ্গি হামলার মূল চক্রী আফতাব আনসারির মৃত্যুদণ্ড রদ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ঘটনায় আফতাবের মূল সঙ্গী জামিলউদ্দিন নাসিরের ফাঁসিও মকুব হয়ে গেল।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক এবং বিচারপতি ফকির মহম্মদ ইব্রাহিম কালিফুল্লার বেঞ্চ আফতাবের প্রাণদণ্ডের সাজা কমিয়ে তাকে আজীবন জেলে বন্দি রাখার নির্দেশ দেয়। নাসিরের জন্য বরাদ্দ তিরিশ বছরের কারাবাস, ইতিমধ্যে যার ১২ বছর কেটে গিয়েছে। আফতাব, জামালুদ্দিন দু’জনেরই ঠিকানা আপাতত কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল। প্রসঙ্গত, ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণে দোষী সাব্যস্ত ইয়াকুব মেমনের প্রাণভিক্ষার আবেদন সম্প্রতি খারিজ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তটি গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্র সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা এ বার ঠিক করবে, নাগপুর জেলে বন্দি ইয়াকুবকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে কবে।
২০০২-এর ২২ জানুয়ারিতে কলকাতার আমেরিকান সেন্টারের সামনে ওই হানাদারিতে পাঁচ পুলিশকর্মী মারা যান। আহত হয়েছিলেন অন্তত কুড়ি জন। ঘটনার পরে পরে দুবাই থেকে কলকাতার সংবাদপত্র দফতরে ফোন করে জনৈক ফারহান আহমেদ দাবি করেছিলেন, হামলাটি চালিয়েছে আসিফ রেজা খান কম্যান্ডো ফোর্স। কলকাতা পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, ২০০১-এর জুলাইয়ে খাদিম-কর্তাকে অপহরণের পিছনে আসল মস্তিষ্ক যার ছিল বলে অভিযোগ, সেই আফতাব আনসারিরই হাত রয়েছে এতে। পরের দিন, অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারি আফতাব দুবাই পুলিশের জালে পড়ে। তাকে ভারতে ফেরানো হয়।
শুরু হয় বিচারপর্ব। আফতাব, নাসির-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে খুন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, ষড়যন্ত্র-সহ বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনে কলকাতা গোয়েন্দা-পুলিশ। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের বিশেষ আদালতে প্রায় ছ’মাস ধরে বিচার চলে। শুনানি শেষে বিশেষ আদালত সাত জনকেই ফাঁসির সাজা শোনায়। পরে হাইকোর্ট আফতাব-নাসিরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও বাকি পাঁচ জনের মধ্যে তিন অভিযুক্তের সাজা সাত বছরের কারাবাসে কমিয়ে আনে। দু’জনকে খালাস করে দেয়।
ফিরে দেখা। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন
আর এ দিন সুপ্রিম কোর্ট শেষমেশ আফতাব ও নাসিরের মৃত্যুদণ্ডও রদ করে দিল। দুই অভিযুক্তের হয়ে এ দিন সর্বোচ্চ আদালতে সওয়াল করেছিলেন নিতিয়া রাধাকৃষ্ণণ। অন্য দিকে রাজ্যর তরফে ছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল সিদ্ধার্থ লুথরা। সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনে যদিও পুলিশের কপালে ভাঁজ বেড়েছে। কেন?
লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, “আফতাবের মতো লোক জেলে চুপচাপ বসে থাকার পাত্র নয়। সব সময়ে পালানোর মতলবে থাকবে। এমনকী, জেলে জঙ্গি কাজ-কারবারের ছক কষাও বিচিত্র নয়।” সুতরাং এক মুহূর্তের জন্যও যাতে আফতাবের উপরে নজরদারি শিথিল না হয়, জেল-কর্তৃপক্ষকে সে সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এ ব্যাপারে কলকাতার পুলিশকর্তারা এ দিন কারা-অফিসারদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।
প্রেসিডেন্সি জেলের যে বিশেষ সেলে আফতাব রয়েছে, দু’বছর আগে সেখানে বসেই সে দিব্যি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। ‘প্রোফাইল’-এ ছিল গাঢ় নীল টি-শার্ট, সাদা ট্র্যাক প্যান্ট, রিমলেশ চশমা পরিহিত ছবি, যা খুঁটিয়ে দেখে গোয়েন্দাদের অনুমান, সেটি ‘সেলফি’ নয়, অন্য কারও তোলা। আফতাব বেশ ক’বার নিজের প্রোফাইল ছবি বদলেওছে। গোয়েন্দারা তখনই সন্দেহ করেছিলেন, জেলে আফতাবকে বিবিধ অবৈধ কার্যকলাপে সাহায্য করার লোক মজুত। পরে জানা যায়, আফতাব আনসারির ফেসবুকের সব ছবিই স্মার্ট ফোনে তোলা। শুধু তা-ই নয়, ২০১২-র সেপ্টেম্বরে বৈদ্যুতিন নজরদারি (ইলেকট্রনিক্স সারভেইল্যান্স) মারফত জানা যায়, প্রেসিডেন্সি জেল থেকে মোবাইলে পাকিস্তানের করাচির একটি মোবাইল নম্বরে নিয়মিত কথা বলছে আফতাব। পুলিশের দাবি, স্ত্রী ছাড়াও অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে তার নিয়মিত ফোনালাপের প্রমাণ আছে।
এ হেন প্রেক্ষাপটেই ঘনিয়েছে সিঁদুরে মেঘ। এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘ফাঁসির দড়ি যখন মাথায় ঝুলছে, তখনও আফতাব জেলে বসে ফেসবুক করেছে! মোবাইলে করাচিতে পরিজনদের সঙ্গে বাতচিৎ চালিয়ে গিয়েছে! এখন আর ফাঁসির ভয় নেই। তাই ও আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে না, গ্যারান্টি কী?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy