কলকাতা হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারির পরে কিছু ক্ষেত্রে বেআইনি নির্মাণকে বৈধ করার জন্য পুর প্রশাসনের হাতে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার পথে হাঁটতে চায় রাজ্য সরকার।
শুক্রবারই আদালত বলেছে, জরিমানা (রিটেনশন চার্জ) নিয়ে বেআইনি নির্মাণ বৈধ করার কোনও এক্তিয়ার কলকাতা পুরসভার নেই। আর শনিবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে পৌরসংস্থার হাতে প্ল্যান-অতিরিক্ত অনুমোদন (এক্সট্রা স্যাংশন) দেওয়ার ক্ষমতা থাকা দরকার। এর জন্য অবশ্য বর্তমান পুর আইন সংশোধন করতে হবে।”
এই ভাবনার পিছনে যুক্তি হিসেবে মেয়র পারিষদ থেকে পুরসভার শীর্ষ কর্তা অনেকেই বলছেন, সংসারের প্রয়োজনে এ শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই বাড়িতে ছোটখাটো রদবদল করে থাকেন। আদালতের রায়ে তাঁরা বিপাকে পড়বেন। তাঁদের স্বস্তি দিতে তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স জারি করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিকই কিন্তু বলছেন, “শহরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবেই এই রায় কার্যকর করা প্রয়োজন।” তাঁর ব্যাখ্যা, রিটেনশন প্রথার সুযোগ নিয়ে ৫ তলা ভিতের একটা বাড়ি ৮ তলা হয়ে যাচ্ছে। যা বিপজ্জনক। যে কোনও সময় ওই বাড়ি ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
জরিমানা নিয়ে বেআইনি নির্মাণ বৈধ করার কোনও বিধি পুর আইনে না থাকলেও সেই বাম আমল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। এতে এক দিকে যেমন পুরসভার আয় হচ্ছে, তেমনই পকেট ভরছে এক শ্রেণির পুর আধিকারিক এবং রাজনৈতিক নেতার। পুরসভার এক অফিসারের কথায়, “বেআইনি নির্মাণ করার আগে রাজনৈতিক নেতারাই বলে দিচ্ছেন, আগে ভাগে অনুমোদনের দরকার নেই। ফ্লোর বানাতে থাকুন। অনুমোদনের ব্যবস্থা পরে করে দেব।” এক মেয়র পারিষদও বলছেন, “ওই প্রথার ফাঁক গলে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢুকছে কারও কারও পকেটে।”
কলকাতা শহরে বেশ কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা দিয়ে বাড়ি তৈরি করাই যে রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন পুরকর্তাদের অনেকেই। যার প্রমাণ, ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে বিল্ডিং অনুমোদন বাবদ পুরসভার যে ২০০ কোটি টাকা আয় হয়েছিল, তার মধ্যে ৬৫ কোটি টাকাই এসেছিল এই জরিমানা বাবদ। এক মেয়র পারিষদের কথায়, “রায় কার্যকর হলে ওই আয় থাকবে না। ফলে পুরসভার ভাঁড়ারেও টান পড়বে।” সেই কথা ভেবে কেউ কেউ ওই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার পক্ষেও সরব হচ্ছেন।
রাজ্য সরকারের একটা অংশ অবশ্য হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। কারণ, জরিমানার বিনিময়ে বেআইনি নির্মাণকে বৈধ করার পিছনে যে বিবিধ চক্র কাজ করে, সে ব্যাপারে সরকারও অবহিত। আদালতের রায় কার্যকর করা হলে পুর প্রশাসনে স্বচ্ছতা আসে বলেই মনে করছেন রাজ্য সরকারের ওই কর্তারা।
তবে বাড়িতে ছোটখাটো রদবদলের ক্ষেত্রে শহরের সাধারণ বাসিন্দারা যাতে বিপাকে না-পড়েন সে জন্য পুর আইন সংশোধনের পক্ষপাতী নবান্নের একাধিক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy