Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিধি ভেঙে যত্রতত্র হাম্প, বাড়ছে দুর্ঘটনা

রাতে শ্বশুরের অসুস্থতার খবর পেয়ে স্ত্রীকে মোটরসাইকেলের পিছনে বসিয়ে হাওড়া-আমতা রোড ধরে মাজু যাচ্ছিলেন মাঝবয়সী অশোক সাঁপুই। মধ্য সন্তোষপুর এলাকায় তাঁর গতি আচমকাই কমে গেল। বাইকের আলোয় তিনি দেখেন, কংক্রিটের ইলেকট্রিক পোস্ট রাস্তায় ফেলে তৈরি হয়েছে প্রায় ছ’ইঞ্চি উঁচু স্পিড ব্রেকার (হাম্প)। তা পেরোতে গিয়ে বাইক থেকে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙে যায় অশোকবাবুর স্ত্রীর।

শমীক ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

রাতে শ্বশুরের অসুস্থতার খবর পেয়ে স্ত্রীকে মোটরসাইকেলের পিছনে বসিয়ে হাওড়া-আমতা রোড ধরে মাজু যাচ্ছিলেন মাঝবয়সী অশোক সাঁপুই। মধ্য সন্তোষপুর এলাকায় তাঁর গতি আচমকাই কমে গেল। বাইকের আলোয় তিনি দেখেন, কংক্রিটের ইলেকট্রিক পোস্ট রাস্তায় ফেলে তৈরি হয়েছে প্রায় ছ’ইঞ্চি উঁচু স্পিড ব্রেকার (হাম্প)। তা পেরোতে গিয়ে বাইক থেকে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙে যায় অশোকবাবুর স্ত্রীর।

রাজ্য ট্রাফিক পুলিশ এবং পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা বলছেন, শুধু হাওড়া নয়, রাজ্য জুড়ে প্রায় রোজই কোনও না কোনও রাস্তায় যত্রতত্র এই ধরনের হাম্প তৈরি করা হচ্ছে। ফলে কেবল ছোট-বড় দুর্ঘটনাই ঘটছে না, যানবাহনের যন্ত্রাংশের ক্ষতিও হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, কখনও হাম্প তৈরি হচ্ছে দুর্ঘটনার পরে, কখনও দুর্ঘটনার আশঙ্কায়। স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের সুবিধার্থে অস্থায়ী বাসস্টপ হিসেবেও তা তৈরি করছেন স্থানীয়েরা। পূর্ত দফতরের প্রাক্তন এক কর্তা জানান, রাজ্য বা জাতীয় সড়কে যত্রতত্র হাম্প করা যায় না। ‘ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস’-এর নির্দেশিকা মেনে তা করতে হয়। হাম্প তৈরি করা যায়: ১। দুর্ঘটনাপ্রবণ রাস্তায় ২। ছোট রাস্তা যেখানে বড় রাস্তায় এসে মিশছে এবং যেখানে গতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি ৩। ঘন বসতি এলাকা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় -হাসপাতালের সামনে ৪। অস্থায়ী ভাবে রাস্তা ঘোরাতে ৫। নড়বড়ে সেতু, কালভার্টের সামনে ৬। রেলের লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে ৭। তীক্ষ্ন বাঁকের মুখে।

কিন্তু গত কয়েক বছরে নিয়ম না মেনে আন্তঃজেলা রাস্তাগুলিতে প্রচুর হাম্প তৈরি হয়েছে। ওই অফিসারের অভিযোগ, রাজ্যের প্রায় প্রতি জেলায় দুর্ঘটনার অজুহাত দেখিয়ে যত্রতত্র হাম্প তৈরি করছেন স্থানীয়েরা। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন পূর্ত দফতরের কর্মীদের উপরে চাপ দিচ্ছে হাম্প তৈরি করতে।

পূর্ত দফতরের আর এক কর্তা জানান, কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে বলা হয়। রাস্তায় হাম্প তৈরির দাবিতে অবরোধ করেন বাসিন্দারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই হাম্প তৈরির অনুমতি দিতে হয়। অনুমতি আদায় করে স্থানীয়েরাও নিজেদের মতো হাম্প তৈরি করে ফেলছেন রাস্তা জুড়ে।

পূর্ত দফতর জানায়, রাজ্যে বেআইনি হাম্পের কোনও হিসেব নেই। তা ভাঙতে হলে জেলার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা যেতে পারে। তিনি তা ভাঙার নির্দেশ দেবেন। কখনও পূর্ত দফতরের কর্মীরা নিজেরাই তা ভাঙেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, হাম্প ভাঙলে স্থানীয়েরা ফের তা তৈরি করে নিচ্ছেন। বেআইনি হাম্প পরিদর্শনের মতো পরিকাঠামো নেই পূর্ত দফতরের।

রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্তা বলেন, “দিল্লিতে হাম্প তৈরি করতে প্রথমে লিখিত আবেদন জানাতে হয় ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশের (ট্রাফিক) কাছে। বিষয়টি তাঁর দফতরের বিবেচনাধীন হলে পাঠানো হয় স্পিড ব্রেকার কমিটিতে। কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় হাম্প বসানো বা তা ভাঙার ক্ষেত্রে। কিন্তু এ রাজ্যে সেই নিয়ম চালু হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

samik gosh kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE