মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাল দিল্লিতে আসছেন। ঠিক হয়েছে, বিজেপি ও শরিকদের আনা প্রস্তাবের ভিত্তিতে এ দিনই সারদা কাণ্ড নিয়ে আলোচনা হবে লোকসভায়। স্পষ্টতই তৃণমূলকে একঘরে করে দিয়ে বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরাতে সারদা প্রসঙ্গকে এখন অস্ত্র করছে বিজেপি শিবির।
হাতে চারটে মাত্র দিন। সংসদের চলতি অধিবেশনের এই শেষ ক’টা দিনের মধ্যেই বিমা, কয়লাখনি নিলাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে হবে সরকারকে। অথচ বিরোধীরা তা হতে দিতে নারাজ। বিরোধীদের হট্টগোলে সরকার আজ রাজ্যসভায় বিমা বিল পেশ করতে পারেনি। কাল আবার সেই চেষ্টা হবে। কিন্তু বিমা বিল ঠেকাতে বিরোধীরা যে রকম এককাট্টা হয়ে সংসদে হট্টগোল করছেন, তাতে কাজটা মোটেই সহজ হবে না, সেটা সরকারের কাছে স্পষ্ট।
এই অবস্থায় তৃণমূল নেত্রী দিল্লিতে পা রাখার এক দিন আগে বিজেপি ও শরিক দলগুলির মোট ২৭ জন সাংসদ লোকসভায় সারদা-কাণ্ড নিয়ে আলোচনার নোটিস জমা দেন স্পিকারের কাছে। তা গৃহীতও হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, সারদা এমন একটি প্রসঙ্গ, যা নিয়ে কোনও দলই মমতার পাশে দাঁড়াবে না। গত কাল ঠিক সেটাই দেখা গিয়েছে সংসদে।
তবে সারদা প্রশ্নে তৃণমূলকে একঘরে করতে পারলেই যে সব বাধা ঘুচবে তা নয়। বিরোধীদের মুড স্পষ্ট, ধর্মান্তরণ বিষয়ে সংসদ, বিশেষ করে রাজ্যসভা তারা চলতে দেবে না। আর সেখানেই আটকে রয়েছে বিমা, কয়লা খনি নিলাম সংক্রান্ত-সহ বিভিন্ন বিল। ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ যাতে সারদার মতো আর কোনও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সর্বস্বান্ত না হয়, সে জন্য কোম্পানি বিষয়ক আইনে পরিবর্তন এনে এ দিন লোকসভায় একটি বিল নিয়ে এসেছে সরকার। অবৈধ ভাবে টাকা তোলা হলে কঠোর শাস্তির জন্য এখানে প্রস্তাব রাখা হয়েছে ।
এ নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ দিন বলেন, “লোকসভা ঠিকঠাকই চলছে। রাজ্যসভায় বিরোধীরা সংখ্যায় বেশি। সে জন্যই তাঁরা সেখানে হট্টগোল বাধাচ্ছেন। ধর্মান্তরণের প্রসঙ্গটা তো স্রেফ ছুতো। আসলে সংস্কার রুখতেই এককাট্টা হয়েছে তৃণমূল-সিপিএম।” তবু প্রধানমন্ত্রী আজ দলের সাংসদদের সতর্ক করে দিয়েছেন, বিক্ষিপ্ত কথাবার্তা বলে কেউ যেন সরকারের উন্নয়ন যজ্ঞ ভেস্তে না দেন। কেউ যেন লক্ষ্মণরেখা না পেরোন। কিন্তু বন্ধ ঘরে মোদীর এই সতর্কবাণীতে মোটেই আশ্বস্ত নন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, বিজেপি কোথাও ধর্মান্তরণের চেষ্টা করবে না। ভবিষ্যতে তেমন ঘটনা ঘটলে দায়ী হবেন প্রধানমন্ত্রীই।
মোদী যদি সত্যিই এমন প্রতিশ্রুতি দেন সংসদে? সে সম্ভাবনা উড়িয়ে কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য মধুসূদন মিস্ত্রীর মন্তব্য, “ধুস! প্রধানমন্ত্রীর সাড়ে তিনশো কিলোগ্রামের ইগো! তা বিসর্জন দিয়ে থোড়াই আসবেন প্রতিশ্রুতি দিতে। তা ছাড়া বিভাজনের এই খেলা মোদী রাজনৈতিক অঙ্ক কষেই করছেন। মুখে উন্নয়নের মুখোশ পরে।” বামেদেরও বক্তব্য, ঝাড়খণ্ড নির্বাচনের সময় হিন্দু-খ্রিস্টান মেরুকরণের লক্ষ্যে বিজেপি সুচিন্তিত ভাবে ধর্মান্তরণের হাওয়া তুলছে।
বিমা-সহ অন্য বিলগুলি তবে পাশ হবে কী করে? বিমা বিল যদি ভোটাভুটিতে হেরেও যায় তাতেও লাভ সরকারের। যৌথ অধিবেশন ডেকে তখন বিলটি পাশ করানো যাবে। কিন্তু কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা ভোটাভুটি পর্যন্ত এগোতেই দিতে নারাজ। পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে তাই আজ থেকেই সারদা-কাণ্ড নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ মমতাকে আক্রমণ করে বলেছেন, “কেন নিজেকে বিজেপির চক্রান্তের শিকার হিসেবে মেলে ধরছেন? মদন মিত্র মুখ খুললে কী হবে, সেই ভয় থেকেই কি পাল্টা প্রচার করছেন?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy