Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিরোধী পরিসরে বিজেপি, নিজের গড়ে স্বস্তি কংগ্রেসেও

মোদী-হাওয়ার উজানে এ রাজ্যেও গতি পেল বিজেপি। একটি থেকে বেড়ে শুধু দু’টি আসনে জয়ই নয়, তিনটি আসনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল তারা। আবার দেশ জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী ঝড়ের মধ্যেও এ রাজ্যে নিজের গড় অনেকটাই ধরে রাখতে পারল কংগ্রেস। পুরনো ছ’টির মধ্যে চারটি আসন রক্ষা করে রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকল কংগ্রেস।

সুকান্ত সরকার ও দেবারতি সিংহচৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

মোদী-হাওয়ার উজানে এ রাজ্যেও গতি পেল বিজেপি। একটি থেকে বেড়ে শুধু দু’টি আসনে জয়ই নয়, তিনটি আসনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল তারা। আবার দেশ জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী ঝড়ের মধ্যেও এ রাজ্যে নিজের গড় অনেকটাই ধরে রাখতে পারল কংগ্রেস। পুরনো ছ’টির মধ্যে চারটি আসন রক্ষা করে রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকল কংগ্রেস।

ভোটপ্রাপ্তির হিসাবে ৬% থেকে বাড়িয়ে এ বার ১৭%-এ পৌঁছেছে রাজ্যের বিজেপি। আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয় বা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে জোট বেঁধে দার্জিলিং আসনটি সুরিন্দর সিংহ অহলুুওয়ালিয়া জিততে পারেন বলে বিজেপি আশাবাদী ছিলই। বাস্তবে হয়েছেও তা-ই। খাস কলকাতার দু’টি আসন কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণে বামেদের টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। এই ফলের উপরে ভিত গড়েই আগামী বছর কলকাতা পুরসভা-সহ পুর নির্বাচন এবং তার পরের বছর বিধানসভা ভোটে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে উঠে আসার স্বপ্ন দেখছে তারা।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ নিজে উত্তর কলকাতায় জিততে না-পারলেও বাবুলের জয়ে তিনি উদ্বেল। রাহুলবাবুই এক সময় গায়ক-প্রার্থীকে আশ্বস্ত করেছিলেন, খাটতে পারলে আসানসোলের মতো শক্ত আসনেও ফল ভাল হতে বাধ্য। বাবুল তা-ই করে দেখিয়েছেন। শুক্রবার দিনের শেষে নিজের পরাজয়ের দুঃখের মধ্যেও বাবুল বা দলের সাফল্যকে তাই ‘সন্তোষজনক’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন রাহুলবাবু।

রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বাড়িয়ে বিজেপি-র স্বস্তি পাওয়ার আরও কারণ আছে। দক্ষিণ কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে ‘লিড’ পেয়েছেন বিজেপি-র তথাগত রায়! এগিয়ে আছেন রাসবিহারী, বালিগঞ্জেও। আরও কিছু বিধানসভা আসনে লোকসভার ফলের নিরিখেই এগিয়ে থাকবে বিজেপি। কলকাতা উত্তরে রাহুলবাবু তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কঠিন টক্কর দিয়েছেন। মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী বিষ্ণুপদ রায় আছেন দ্বিতীয় স্থানে।

এ বারে বিজেপি গোটা রাজ্যে পেয়েছে প্রায় ৯০ লক্ষ ভোট। সংখ্যাটা ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ছিল ১৯ লক্ষ এবং ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে ২৬ লক্ষ। এ বার প্রায় তিন গুণ ভোট বেড়েছে বলেই বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। আগে ধারণা ছিল, রাজ্যে বিজেপি-র ভোট পাওয়া মানে তা প্রকৃতপক্ষে বাম-বিরোধী ভোটের অংশ। কিন্তু এ বারের ফলাফল দেখিয়ে দিচ্ছে, বাম ভোটেই তারা মূলত গেরুয়া থাবা বসেছে! তবে এই বিপুল ভোটপ্রাপ্তি শুধু মোদী-হাওয়ার সৌজন্যে হয়নি বলে মনে করেন রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব। মোদী-হাওয়ার পাশাপাশি সংগঠনও আগের চেয়ে অনেক বেশি জোরদার হয়েছে বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। তাঁদের এখন লক্ষ্য, আগামী বিধানসভা ভোটে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে লড়তে নামা। রাহুলবাবুর কথায়, “বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস ক্রমশ রাজ্য রাজনীতি থেকে মুছে যাচ্ছে! রাজ্যবাসী আমাদেরই যোগ্য বিকল্প হিসেবে মনে করতে শুরু করেছে।”

উল্টো দিকে, কংগ্রেস রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র হারিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাদের ৬টি আসনের মধ্যে চারটিতেই জয় নিঃসন্দেহে কংগ্রেসের পক্ষে স্বস্তিদায়ক। আসনের নিরিখে বামেদের উপরে কংগ্রেসই এ বার রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে। দেশের সার্বিক ফলের নিরিখে রাজ্যে কংগ্রেসের এই ফলে উচ্ছ্বাস না থাকলেও নিরাশা নেই। তবে ব্যক্তিগত ভাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মনে করেন, ৬টি আসন ধরে রাখতে পারলে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হওয়া যেত।

অধীর নিজে জিতেছেন সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে। রাজ্যের সব প্রার্থীর মধ্যে তাঁর জয়ের ব্যবধানই সব চেয়ে বেশি। অধীরের এই বিরাট জয়ের পাশাপাশি জঙ্গিপুরে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের জয়েও অক্সিজেন পেয়েছে কংগ্রেস। কেননা, ২০১২ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে জঙ্গিপুরের উপনির্বাচনে মাত্র আড়াই হাজার ভোটে জিতেছিলেন অভিজিৎ। তা-ও তৃণমূল তখন প্রার্থী দেয়নি। অথচ এ বার তৃণমূলের প্রার্থীর সঙ্গে মোদী-হওয়ার যৌথ দাপট সামলে ৮ হাজার ভোটে জিতেছেন প্রণব-পুত্র। মুর্শিদাবাদ জেলায় এই জোড়া জয়ের সঙ্গেই মালদহের দু’টি কেন্দ্রে মৌসম বেনজির নূর এবং আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী নিজের দুর্গ ধরে রাখতে পারায় স্বভাবতই স্বস্তিতে কংগ্রেস।

বিকেলে প্রদেশ দফতরে অধীর বলেন, “এই বাংলায় ৩৭ বছর আমরা ক্ষমতায় নেই। তার উপরে তৃণমূলের সন্ত্রাস ঠেকিয়ে যে বুথে বুথে এজেন্ট দিতে পেরেছি, চারটে আসন ধরে রাখতে পেরেছি, সেটাই বড় জয়!” একক ভাবে মোদী-হওয়ায় রুখে দাঁড়ানোর মতো যথেষ্ট সাংগঠনিক শক্তি যে তাঁদের ছিল না, তা স্বীকার করেছেন অধীর। বরাবরই বিশ্বাস করেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করা ছাড়া রাজ্যে কংগ্রেসের উত্থান অসম্ভব। এ বারের মতো মেনেছেন, “মোদী নিজেকে এক জন ভাল সেলসম্যান হিসেবে প্রমাণিত করেছেন। আমরা তাঁর সঙ্গে প্রচারে পেরে উঠিনি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sukanta sarkar debarati singhachowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE