মালদহের কালিয়াচকে জাতীয় সড়কের উপরে দুই দুষ্কৃতী দলের মধ্যে বোমা, গুলির লড়াই নিত্য দিনের। এ বার কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে ছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের। গত শুক্রবার কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের একটি চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরেও কোন কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে নানা মহলে। এই বিষয়ে মালদহ ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সভাপতি জয়ন্ত কুন্ডু বলেন, ‘‘এর আগে একাধিকবার চলন্ত গাড়িতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আর ঘটনাগুলি ঘটছে দিনে দুপুরেই। সাধারণ মানুষ চলাফেরা করবে কিভাবে। কালিয়াচকে পুলিশের শাসন বলে কিছু নেই। যার জন্য এমন ঘটনা প্রায় ঘটছে।’’ এই বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘আগ্নেয়াস্ত্র সমেত দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাস ডাকাতির ঘটনায় সঙ্গে তারা জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করারও চেষ্টা চলছে।’’
গত মাস চারেক ধরে লাগাতার কালিয়াচকের নওদা যদুপুর এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বোমা, গুলি নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। দিবালোকেই জাতীয় সড়কেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা রোজকার হয়ে উঠেছে। কালিয়াচক রুটে যাতায়াত সাধারণ মানুষের কাছে ভয়ের হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যের পর ব্যবসায়ীরা মোটর বাইকে করে যাতায়াতের সাহাস পান না। এবার রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসেই হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় সাধারণ মানুষের আতঙ্ক আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। এদিনের ঘটনা নতুন নয় কালিয়াচকে। এর আগেও জাতীয় সড়কে চলন্ত গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। মাস দু’য়েক আগে কালিয়াচকের জালালপুরের কাছে একটি ম্যাজিক গাড়িতে ভর দুপুরেই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মুর্শিদাবাদের চার রেশম ব্যবসায়ী ম্যাজিক গাড়িতে করে সুজাপুর থেকে কালিয়াচকে ফিরছিলেন। সেই সময় যাত্রী সেজে ছয় জনের একটি দল আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে দুই লক্ষ টাকা লুট করে পালায়। ওই ঘটনাতেও কালিয়াচক থানাতে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। তবে গ্রেফতার হয়নি কেউ। গত সেপ্টেম্বর মাসে ইংরেজবাজার শহরে দুই ধুপকাঠি ব্যবসায়ী মোটর বাইকে করে মালদহ ফিরছিলেন। পেছন দিক থেকে দুটি মোটর বাইকে চার দুষ্কৃতী গিয়ে তাদের মারধর করে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করে। থানাতে অভিযোগ হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিন বাঁকুড়া থেকে মালদহগামী দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের একটি বাসে সাত দুষ্কৃতী ডাকাতি চালায়। ওই বাসের তিন যাত্রীর কাছ থেকে মোট ৩৯ হাজার টাকা এবং তিনটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার পরিপেক্ষিতে রাতেই ইংরেজবাজার থানায় বাসের কন্ডাক্টর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন যাত্রীর মধ্যে এক জনের নাম পরিচয় জানা গিয়েছে। কালিয়াচকের হাটখোলার বাসিন্দা আবতাব উদ্দিন। তিনি পেশায় চা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘৩১ হাজার টাকা নিয়ে আমি মালদহ আসছিলাম। কালিয়াচক থেকেই আমি বাসে উঠেছিলাম। চালকের পিছনের সিটে আমি ছিলাম। আচমকা দুষ্কৃতীরা আমার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ চায়। আমি প্রাণ ভয়ে ব্যাগটি দিয়ে দিয়েছিলাম। আর দুইজনের কাছ থেকে নিয়ে পালিয়েছিল। তবে কন্ডাক্টরের কাছ কোন টাকা ছিনতাই হয়নি। ফলে বাসে যাতায়াত করতেও ভয় হচ্ছে এখন।’’
মালদহ বাস ও মিনি বাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নিমাই বিশ্বাস বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের গোলমালের জেরে প্রায়ই ওই রুটে গাড়ি আটকে থাকে। অনেকে কালিয়াচক রুটে গাড়ি চালাতে চান না। এমন ঘটনার পর মানুষ বাসে বসেও যাতায়াত করতে সাহস পাবে না। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দুষ্কৃতীরা কালিয়াচক থেকে উঠেছিল। আর ওই ব্যবসায়ীকে নজর রাখতে পারে। ঘটনায় দু’টি পাইপগান সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই দু’জন ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, তা জানার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দু’জনের ছবি নিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ীকে দেখানো হয়েছে। উনি চিনতে পারেননি। তবে জড়িত থাকতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। আজ, সোমবার ধৃতকে পেশ করা হবে জেলা আদালতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy