Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভয় দেখানো-হুমকি, সুরক্ষা চেয়ে পুলিশকে চিঠি ইডি-র

সব ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর কর্তারা এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ওঁদের অভিযোগ, এক দিকে সারদা-কাণ্ড নিয়ে ইডি’র তদন্তে যখন একের পর এক ‘রোমহর্ষক’ তথ্য উঠে আসছে, তখন সংস্থার তদন্তকারীরা পড়ছেন নানাবিধ চাপের মুখে। এমনকী হুমকি, ভীতি প্রদর্শনও বাদ যাচ্ছে না।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০৩:৩৮
Share: Save:

সব ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর কর্তারা এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।

ওঁদের অভিযোগ, এক দিকে সারদা-কাণ্ড নিয়ে ইডি’র তদন্তে যখন একের পর এক ‘রোমহর্ষক’ তথ্য উঠে আসছে, তখন সংস্থার তদন্তকারীরা পড়ছেন নানাবিধ চাপের মুখে। এমনকী হুমকি, ভীতি প্রদর্শনও বাদ যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় ওঁরা রীতিমতো নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে কলকাতায় ইডি-র আঞ্চলিক অফিস থেকে বার্তা গিয়েছে দিল্লিতে, ডিরেক্টরেটের সদর দফতরে। পাশাপাশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের কাছেও। কী রকম?

ইডি-সূত্রের দাবি, কলকাতায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি অফিসের কাছে বিধাননগর কমিশনারেটের যে থানা, সেই সল্টলেক উত্তর থানায় এ ব্যাপারে তাঁরা অভিযোগ রুজু করেছেন। ইডি-সূত্রের অভিযোগ, সারদা-তদন্তে নিয়োজিত তাঁদের এক মহিলা কর্মীকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এবং এই মুহূর্তে বিশেষ করে তাঁর নিরাপত্তা নিয়েই ইডি’র কর্তারা বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন। এমন অভিযোগ জমা পড়ার খবর বিধাননগর কমিশনারেট-সূত্রেও স্বীকার করা হয়েছে। যদিও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার শুক্রবার তা মানতে চাননি।

সারদা-কেলেঙ্কারি যে রাজনৈতিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গে যথেষ্ট স্পর্শকাতর ঘটনা, ইডি-কর্তারা তা জানতেন গোড়া থেকেই। তাঁদের বক্তব্য: প্রথম ধাপেই রাজ্য পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের সহযোগিতার অভাব টের পাওয়া গিয়েছিল। সারদা সংস্থার বিরুদ্ধে কোথায় কী কী অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা প্রথমে বিস্তারিত ভাবে ইডি-কে জানানো হয়নি। বাধ্য হয়ে ইডি- কে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরে ইডি-র হাতে প্রাথমিক ভাবে আটটি এফআইআরের তথ্য তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। তার পরেই ইডি সারদার সংস্থাগুলির সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করতে শুরু করে। সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কেও জেরা করা হয়। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, ওড়িশাতেও সারদার সম্পত্তি চিহ্নিত করেছে ইডি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪০ কোটি টাকার সম্পত্তি, ৩৯০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তারা চিহ্নিত করে। সুপ্রিম কোর্টেও সারদা-কাণ্ডে সিবিআই-তদন্তের আবেদনের মামলায় এই সব তথ্য জানানো হয়েছে।

ইডি-সূত্রের বক্তব্য, এই সব তদন্তের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু সুদীপ্ত সেনের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পিয়ালি ও প্রথম পক্ষের ছেলে শুভজিৎকে গ্রেফতারের পরেই সমস্যার সূত্রপাত। তা আরও জটিল হয়ে ওঠে লোকসভা ভোটে বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে জেরা করায়। জল্পনা শুরু হয় যে, রাজ্যের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী ও তৃণমূল-ঘনিষ্ঠদেরও জেরা করা হবে। আর তখনই ইডি-র ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে নিশানা করেন। অভিযোগ তোলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইডি-কে ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক শিবিরের পাশাপাশি প্রশাসনিক মহল থেকেও নিচু স্তরের ইডি-অফিসারদের উপরে চাপ সৃষ্টি শুরু হয় বলে অভিযোগ।

এবং এই সূত্রেই এসেছে ওই মহিলা কর্মীর প্রসঙ্গ, যিনি কয়েক দিন আগে সল্টলেকের এফডি ব্লকে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের বন্ধ বাড়িতে ইডি’র তল্লাশি অভিযানে সামিল হয়েছিলেন। সংবাদ মাধ্যমে তাঁর ছবিও প্রকাশিত হয়। ইডি-সূত্রের অভিযোগ: মহিলাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। পরিণাম ভাল হবে না বলে ভয়ও দেখানো হয়েছে। তাঁর সুরক্ষা নিয়ে ডিরেক্টরেটের কর্তৃপক্ষ বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন। ইডি’র কর্মীমহল-সূত্রে জানা গিয়েছে, সারদা-তদন্তে নিয়োজিত বিভিন্ন অফিসার নিজেদের চেয়েও এখন বেশি চিন্তিত বাড়ির লোকের নিরাপত্তা নিয়ে। তাই তাঁরা কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছেন। কলকাতা ও ভুবনেশ্বরে বিভিন্ন তদন্তের কাজে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য সরকারের স্বীকৃতি পেয়েছেন যিনি, কলকাতায় ইডি’র সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর দেবব্রত কর অবশ্য বলেন, “কাজের ক্ষেত্রে এমন সব চাপ আসেই। সে সব নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়।”

বিধাননগরের পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই ইডি’র তরফে একটি চিঠি কমিশনারকে দেওয়া হয়। তাতে কয়েকটি ফোন নম্বর দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওই সব নম্বর থেকে ইডি-অফিসারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, সারদা-তদন্ত ঘিরে রাজ্য পুলিশের সঙ্গেও ইডি-র সংঘাত বেঁধেছে। সল্টলেকের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সুদীপ্ত-পিয়ালির নামে রাখা লকার ইডি বাজেয়াপ্ত করতে যাচ্ছে শুনেই পুলিশ সেটি খুলে ফেলে। অভিযোগ ওঠে, গত এক বছর যাবৎ লকারটি বিধাননগর পুলিশের এক্তিয়ারে থাকলেও তা খোলার উদ্যোগ হয়নি। এ বিষয়ে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপের সিদ্ধান্তও নিয়েছে ইডি।

তবে সারদা-তদন্ত নিয়ে সংঘাত থাকলেও নিরাপত্তার প্রশ্নে রাজ্য পুলিশ ‘পেশাদারি মনোভাব’ দেখাবে বলে ইডি আশা করছে। “আশা করি, রাজ্য পুলিশ এ ব্যাপারে অন্তত আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।” —মন্তব্য ইডি-র এক শীর্ষ কর্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha case premangshu chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE