Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মিছিল এড়াতে লুকোচুরি আরাবুলের সঙ্গে

তাঁর দাপটে বাঘে-গরুতে এক সুরে গান গায়। সোমবারের ‘হোক গর্জন’ মিছিল ‘ফ্লপ’ হওয়ার পরে কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন সেই নেতাই। বলছিলেন, “দু’লক্ষ টাকা খরচ করে তিরিশটা বাস ও দেড়শো ম্যাটাডরে করে লোক এনেছিলাম। না হলে তো মিছিলে লোকই হত না!” তিনি ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক, আরাবুল ইসলাম।

মিছিলে আরাবুল। সোমবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

মিছিলে আরাবুল। সোমবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৩
Share: Save:

তাঁর দাপটে বাঘে-গরুতে এক সুরে গান গায়। সোমবারের ‘হোক গর্জন’ মিছিল ‘ফ্লপ’ হওয়ার পরে কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন সেই নেতাই। বলছিলেন, “দু’লক্ষ টাকা খরচ করে তিরিশটা বাস ও দেড়শো ম্যাটাডরে করে লোক এনেছিলাম। না হলে তো মিছিলে লোকই হত না!”

তিনি ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক, আরাবুল ইসলাম।

বছর দু’য়েক আগে এক কলেজ-শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। পুলিশ ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লাকে মারধরের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কয়েকদিন হাজতবাসও করতে হয়েছিল তাঁকে। ছাত্র হিসেবে কলেজের গণ্ডি পার না করেও ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হওয়ায় দলের একাংশের সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন তিনি। সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে টিএমসিপি-র ডাকা মিছিলের অন্যতম প্রধান চরিত্র ছিলেন সেই আরাবুল ইসলামই।

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা ৪০ মিনিট। বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে দাঁড়িয়ে আরাবুল। জিন্স আর চেক শার্ট পরে ভাঙড় থেকে আনা লোকেদের সামলাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে জনা ছয়েক অনুগামী। মিছিলে তখন সাকুল্যে হাজার পাঁচেক লোক। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আরাবুল বলেন, “যা লোক হয়েছে তার অর্ধেকই তো আমি এনেছি! এই লোক না আনলে তো দেখছি মিছিল খাঁ-খাঁ করত।” একটু থেমে তিনি বলেন, “এতেই প্রায় দু’লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেল। তা হোক। দিদির সম্মান রাখতে হবে তো!”

রবিবার রাত থেকেই মিছিলে লোক আনার জন্য তদারকি শুরু করেছিলেন আরাবুল ও তাঁর ছেলে হাকিবুল। তাঁদের দাবি, ভাঙড়-২ ব্লক থেকে প্রায় তিরিশ বাস ও দেড়শো ম্যাটাডর ভর্তি করে লোক এনেছেন তাঁরা। সোমবার সকাল ১০টা থেকেই ভোজের হাট মোড়ে সার বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল গাড়িগুলি। ভাঙড় কলেজে আসা ছাত্রদের তোলা হচ্ছিল সেই গাড়িগুলিতে। শুধু ছাত্ররাই নয়, গাড়িতে চাপানো হয়েছে দিনমজুর, চর্মনগরীর শ্রমিক, গৃহবধূসকলকেই। মুফ্তে কলকাতা ঘোরার সুযোগ পেয়ে অনেকেই উঠে বসেছেন গাড়িতে। কী জন্য তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা তখনও জানেন না অনেকেই। আরাবুল-হাকিবুল অবশ্য এসেছেন তাঁদের নিজস্ব স্করপিও গাড়িতে। দুপুরে কলকাতা পৌঁছে মিছিলের হাল দেখে অবশ্য আর বেশিক্ষণ দাঁড়াননি আরাবুল। ছেলেকে মিছিলে রেখে গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছেন নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে। হাকিবুল সামলেছেন ভাঙড় কলেজ থেকে আনা ছাত্রদের।

এই ছাত্রদের এক জন নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, “কলেজে আসছিলাম। জোর করে আমাকে গাড়ি তোলা হল। বলা হল, মিছিলে না এলে পরে অসুবিধায় পড়ব।” আর এক ছাত্র বলেন, “জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করে কী লাভ! তাই ইচ্ছে না থাকলেও গাড়িতে উঠে বসেছি।”

তবে ভাঙড় কলেজের ছাত্রদের একটি বড় অংশই যে কৌশলে আরাবুল-হাকিবুলদের ধোঁকা দিয়েছেন, তা বোঝা গিয়েছে গাড়ি নিয়ে তাঁরা কলকাতা রওনা হওয়ার পরে।

কী ভাবে?

মিছিলের গাড়িগুলি রওনা হওয়ার আগে পর্যন্ত ভাঙড় কলেজ ছিল সুনসান। সাড়ে ১১টার পরে গাড়িগুলি রওনা হয়ে যায়। কলেজে কোনও ছাত্র নেই দেখে শিক্ষকরা তখন বাড়ি ফেরার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। এই সময়ে হঠাৎই কলেজে ঢুকতে থাকেন দলে দলে ছাত্রছাত্রী।

হতবাক শিক্ষকদের দেখে অনেকে এক গাল হেসে বলেন, “জোর করে মিছিলে নিয়ে যাবে বলে লুকিয়ে ছিলাম। এ বার আমাদের ক্লাস শুরু করুন।”

যে কলেজকে ছাত্রশূন্য দেখে এসেছিলেন আরাবুল, সেখানে বেলা তিনটে পর্যন্ত দিব্যি ক্লাস করেছেন পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE