Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মিছিলের বাজি বাড়িতে, প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে খুন

আনুষ্ঠানিক ভারে উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদ দখলের পরে জেলার আনাচকানাচে বিজয় মিছিল বেরিয়েছিল শাসক দলের। চোপড়ার কোটগাছ গ্রামেও সেই উল্লাসে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। বিজয় মিছিলে ফাটানো হচ্ছিল শব্দবাজি। সেই শব্দবাজির একটি উড়ে গিয়েছিল এক গ্রামবাসীর বাড়িতে। অভিযোগ, এই ঘটনার প্রতিবাদ করায়, মিছিল ভুলে মারমুখী ওই তৃণমূল কর্মী-সমথর্কেরা এ বার ‘শাস্তি’ দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বছর পঞ্চান্নর হরিপ্রসাদ রায় নামে ওই গ্রামবাসীর উপরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

আনুষ্ঠানিক ভারে উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদ দখলের পরে জেলার আনাচকানাচে বিজয় মিছিল বেরিয়েছিল শাসক দলের।

চোপড়ার কোটগাছ গ্রামেও সেই উল্লাসে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। বিজয় মিছিলে ফাটানো হচ্ছিল শব্দবাজি। সেই শব্দবাজির একটি উড়ে গিয়েছিল এক গ্রামবাসীর বাড়িতে। অভিযোগ, এই ঘটনার প্রতিবাদ করায়, মিছিল ভুলে মারমুখী ওই তৃণমূল কর্মী-সমথর্কেরা এ বার ‘শাস্তি’ দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বছর পঞ্চান্নর হরিপ্রসাদ রায় নামে ওই গ্রামবাসীর উপরে। হরিপ্রসাদবাবুর পরিবারের দাবি, একদা সিপিএম কর্মী হরিপ্রসাদবাবু এখন রাজনীতি থেকে সরে এসেছিলেন।

গ্রামবাসীদের একাংশের অবশ্য দাবি, ‘পুরনো সিপিএম’ কর্মী হিসেবেই হরিপ্রসাদবাবু উপরে রোষ ছিল শাসক দলের কর্মীদের। তার জেরেই পিটিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁকে। তৃণমূল কর্মীদের প্রহারে আহত হয়েছেন হরিপ্রসাদবাবুর ছেলে ইংরেজও। তাঁকে চোপড়ার দলুয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়েছে। হরিপ্রসাদ নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় সিপিএম-তণমূল সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় গিয়ে পৌঁছয় বড়সড় পুলিশ বাহিনী।

জেলা পরিষদ বামেদের হাতছাড়া হয়েছিল আগেই। সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তা দখল করে তৃণমূল। ওই জেলা পরিষদে কংগ্রেসের ৮ এবং বামফ্রন্টের ৬ সদস্য সম্প্রতি তৃণমূলের ৫ সদস্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সভাধিপতি লাডলি চৌধুরী এবং সহ-সভাধিপতি প্রফুল্লকুমার দেবসিংহের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। ফলে তাঁরা অপসারিত করেন। এ দিন জেলা পরিষদের নতুন সভাধিপতি নির্বাচিত হন সিপিএম ছেড়ে সদ্য শাসক দলে যোগ দেওয়া আলেমা নুরি। সহ-সভাধিপতি হয়েছেন কংগ্রেস-ত্যাগী পূর্ণেন্দু দে।

জেলা সদর থেকে জেলা পরিষদ দখলের খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। কোটগাছ গ্রামেও পটকা ফাটিয়ে শুরু হয় মিছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে বাড়িতে খেতে বসেছিলেন হরিপ্রসাদবাবু। সেই সময়ে মিছিল থেকে একটি বাজি উড়ে এসে পড়ে তাঁর বাড়ির বারান্দায়। খাওয়া ছেড়ে উঠে যান হরিপ্রসাদবাবু। এগিয়ে আসেন তাঁর ছেলেও। সেই সময়ে ছেলেকে মারধর করতে দেখে বাধা দিতে গিয়েছিলেন হরিপ্রসাদবাবু। তিনি তৃণমূল কর্মীদের কাছে জানতে চান, ‘কে ছুড়ল পটকা?’ গ্রামবাসীদের একাংশ অভিযোগ করেন, হরিপ্রসাদবাবুর মুখে ওই প্রশ্ন শুনেই তাঁকে বেধড়ক ভাবে পেটাতে থাকে বিজয় মিছিলের লোকজন। মাটিতে ফেলে হরিপ্রসাদবাবুকে চড়-লাথি-কিল-ঘুঁষি মারতে থাকে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরা। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বেগতিক দেখে এ বার পালায় তৃণমূল সমর্থকরা। পরিবারের লোকজন তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান হরিপ্রসাদবাবু। তাঁর ছেলে ইংরেজ বলেন, “মিছিলটা বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে বাড়ির মধ্যে, টিনের চালের উপরে পটকা ফাটাতে থাকে। প্রতিবাদ করতেই আমাকে আর বাবাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে ওরা।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুবীর বিশ্বাসের দাবি, “বাড়িতে পটকা ফাটানোর প্রতিবাদ করেছিলেন হরিপ্রসাদবাবু। তারই ‘শাস্তি’ পেতে হল তাঁকে।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য অবশ্য অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, “মুকুল রায়ের নির্দেশে এ দিন জেলায় কোথাও কর্মী-সমর্থকরা কোনও বিজয় মিছিল করেননি। ওই গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc chopra kotgach hariprasad roy ingraz roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE