প্রতীকী ছবি।
‘মুর্শিদাবাদ’ শব্দটা ফিলাডেলফিয়ার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন শিক্ষিকার কাছে বেশ খটমটে ছিল। তবে নাবালিকার বিয়ে বা নারী পাচারের সমস্যাগুলো অজানা নেই তাঁর। সেই সুবাদেই মুর্শিদাবাদের নারী পাচার ঠেকানোর উদ্যোগের কথা শুনে এগিয়ে আসেন তিনি।
অনেকটা একই ভাবে এগিয়ে এসেছেন মুর্শিদাবাদেরই মেয়ে, অধুনা মুম্বই-প্রবাসী বেসরকারি সংস্থার এক কর্মী। তাঁর দেখাদেখি আমেরিকা-প্রবাসী আর এক বন্ধুও ওই উদ্যোগ সফল করতে তৎপর হয়েছেন।
এ ভাবেই মুর্শিদাবাদে নারী পাচার রুখতে নেট-দুনিয়ায় একজোট হচ্ছে দিল্লি, মুম্বই, ফিলাডেলফিয়া। ইন্টারনেটে গড়ে উঠছে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ বা জনতা-তহবিল। সহায়সম্বলহীন মেয়েদের পাচার হয়ে যাওয়া রুখতে স্বল্পকালীন হোম বা আশ্রয় গড়ার ডাক দিয়েছেন অনাত্মীয় কয়েক জন শুভানুধ্যায়ী। রক্তের আত্মীয়তা নেই ঠিকই। তবে তার থেকেও বেশি যা আছে, তা হলো, সমানুভবের আত্মীয়তা। তাই নিছক শুকনো অনুদান নয়, বিপন্ন মেয়েদের সঙ্গে আত্মিক সংযোগের সেতুতেও বাঁধা পড়ছে মুর্শিদাবাদ।
সরকারি তথ্য বলছে, সাধারণত যে-সব মেয়ে বাল্যবিবাহ ও গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তাঁরাই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাচারকারীর ফাঁদে পা দেন। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বিহারের জামুই আর রাজস্থানের সোয়াই মাধোপুর জেলার ঠিক পরেই রয়েছে মুর্শিদাবাদ। ওই জেলার ৭০ শতাংশ বিয়েই বাল্যবিবাহ।
পাচারের শিকার হতে পারেন, এমন মহিলাদের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের অনুদানে ‘স্বাধার’ হোমের বন্দোবস্ত রয়েছে। তবে রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রোশনী সেনের কথায়, ‘‘এমন হোম আরও দরকার। সরকারি উদ্যোগে পুরো সমস্যার মোকাবিলা করা কঠিন।’’
আরও পড়ুন:নাম যে রেজাউল, ঘর পাননি ভাড়ায়
এই ঘাটতি কিছুটা পূরণ করতেই এগিয়ে এসেছেন দুই বোন, দিল্লিতে কর্মরত নয়না চৌধুরী এবং ফিলাডেলফিয়াবাসী নীলাঞ্জনা চৌধুরী। নয়না বলছিলেন, ‘‘বিপন্ন মেয়েদের ঠিক সময়ে সাহায্য করাটাই জরুরি।’’ অর্থাৎ পারিবারিক সঙ্কটের সময়ে মেয়েটি এবং তাঁর বাচ্চাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে তাঁকে আর পাচার চক্রের ফাঁদে পা দিতে হবে না।
কিছু দিন আগেই বহরমপুর ব্লকে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার একটি মেয়ের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ঝুপড়ি সারিয়ে, তাঁর বাচ্চাদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে মেয়েটির পাশে দাঁড়ান নয়না-নীলাঞ্জনারা। ওই সাহায্যটুকু না-পেলে মেয়েটি তখন হয়তো বড় বিপদে পড়তেন। এই ধরনের মেয়েদের মূল স্রোত থেকে ছিটকে যাওয়া রুখতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মিসিং লিঙ্ক’ নামে একটি উদ্যোগের ডাক দিয়েছেন দুই বোন। একটি ক্রাউড ফান্ডিং সংস্থার মাধ্যমে টাকা তোলা হচ্ছে অনলাইনে।
স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ে কাজ করার সুবাদে বহরমপুরে নয়নার বন্ধু সোমা ভৌমিকের সাংগঠনিক পরিকাঠামো রয়েছে। তা কাজে লাগিয়ে ‘হোম’ বা আশ্রয় পরিচালনা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ‘‘প্রকল্পের কাজে হস্তক্ষেপ না-করলেও নজরদারি অবশ্যই চালাবেন অনুদানদাতারা। কারণ স্থায়ী প্রকল্প ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়,’’ বলেন সোমা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy