Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাজনীতি থেকে বাঁচাতে স্কুল ছাড়ালেন মেয়ের

আড়াই বছর আগে, গ্রাম ছাড়ার সময়ে সে ছিল সপ্তম শ্রেণি। স্কুলে যেতে আপত্তি তো নয়ই, বরং চাপড়ায় মাসির বাড়িতে, বাপ-মা আর আট ভাই-বোনের সঙ্গে কোনওক্রমে মাথা গোঁজার পরেও গ্রামের সেই স্কুলের দিনগুলো খুব মনে পড়ত তার।

সুস্মিত হালদার
চাপড়া শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০৪:৩৪
Share: Save:

আড়াই বছর আগে, গ্রাম ছাড়ার সময়ে সে ছিল সপ্তম শ্রেণি।

স্কুলে যেতে আপত্তি তো নয়ই, বরং চাপড়ায় মাসির বাড়িতে, বাপ-মা আর আট ভাই-বোনের সঙ্গে কোনওক্রমে মাথা গোঁজার পরেও গ্রামের সেই স্কুলের দিনগুলো খুব মনে পড়ত তার। মেয়েটি বলে, ‘‘বাংলা ক্লাস আর টিফিনে হজমিগুলি এখনও মনে পড়ে।’’ তবে স্কুল ছাড়লে কেন?

সদ্য বিবাহিত মেয়েটি বলছে, ‘‘কী করব, স্কুল থেকে বেরোলেই গেটের মুখে এসে ওরা শাসিয়ে যেত, ‘গ্রামে পা দিলে এ বার নিকেশ করে দেব!’’ আড়াই বছর আগে, এক রাতে চাপড়ার প্রান্তিক গ্রাম ছেড়ে সিপিএম সমর্থক জাহান্দার শেখের পরিবার আশ্রয় নেয় চাপড়া শহরে। জাহান্দার বলেন, ‘‘পালাবদলের পর থেকেই হুমকি চলছিল। ২০১৩ সালে আমার এক ভাই আসাদুলকে খুন করার পরে সপরিবারে গ্রাম ছেড়েছি। আর ফিরতে পারিনি।’’ মেয়ের স্কুল সেই থেকেই বন্ধ। রাজনীতির আঁচ থেকে বাঁচাতে, সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া, মেয়েকে বিয়েও দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ইচ্ছে করেই দূরের গ্রামে বিয়ে দিয়েছি। এখানে থেকে তো ওকে আর পড়াতে পারব না।’’ কেন পারবেন না?

ভোট পর্বে, তৃণমূল নেতাদের ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’ বুঝে নেওয়ার প্রচ্ছন্ন শাসানি থাকলেও, ১৯ মে, ফল প্রকাশের পরেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন— হিংসা বা গণ্ডগোল যেন না হয়। তাঁর কথা মেনে নিয়ে, কোথাও বিরোধীদের দখল হয়ে যাওয়া পার্টি অফিস, কোথাও বা ঘর-ছাড়া জোট সর্মথকদের গ্রামে ফিরিয়ে ছিলেন শাসক দলের নেতারাই।

নদিয়ার চাপড়া সেই সৌজন্য দেখায়নি বলেই অভিযোগ। তৃণমূলের এক জেলা নেতা কবুল করছেন, ‘‘চাপড়ার ওই এলাকাটা কার্যত শাসন করে আসরাফ সেখ। তাঁর দাপটেই সিপিএমের ঘর ছাড়াদের ফেরানো যাচ্ছে না।’’ জাহান্দারের মতো ৫১টি পরিবার তাই ছড়িয়ে রয়েছেন আত্মীয়স্বজনের আশ্রয়ে, বিভিন্ন গ্রামে। সেই সব পরিবারের কারও মেয়ে স্কুল ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ বা চাষ-বাস শিকেয় তুলে চাপড়া শহরে দিনমজুরি করছেন।

কিন্তু, কে এই আসরাফ? স্থানীয় হৃদয়পুর প়ঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী আসরফ, আসাদুল খুনে অভিযুক্ত। আপাতত তিনি আগাম জামিনে মুক্ত। তবে, ২০১৩ থেকেই পুলিশের খাতায় তিনি ফেরার। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘খাতায় কলমে ফেরার হলেও আসরফ যে গ্রামেই রয়েছে তা আমরাও জানি। আমাদের হাত-পা বাঁধা!’’ অথচ, নির্বাচনের দিনেও তাঁকে সপার্ষদ বুথ দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। আসরফ নিজেও বলছেন, ‘‘যারা গ্রামে ঢুকতে পারছে না তারা সমাজবিরোধী। গ্রামের মানুষই তাদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন।’’

স্থানীয় বিধায়ক, তৃণমূলের রুকবানুর রহমান অবশ্য বলছেন, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়, ঘর ছাড়াদের গ্রামে ফিরতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, স্থানীয় নেতাদের তা দেখতে বলা হয়েছে।’’ কিন্তু শুনছে কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Politics School Daughter TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE