Advertisement
১১ মে ২০২৪
স্মার্ট সিটি নিয়ে মত বাবুলের

রাজনীতির গেরোয় ব্রাত্য শিলিগুড়ি

রাজ্য সরকার নামই পাঠায়নি, তা-ই স্মার্ট সিটির তালিকায় ঠাঁই হয়নি শিলিগুড়ির। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব পরিষ্কারই স্বীকার করে নিয়েছেন, স্মার্ট সিটি করার জন্য রাজ্য সরকার যে তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছিল, তাতে শিলিগুড়ির নাম ছিল না। তিনি জানান, স্মার্ট সিটি হওয়ার জন্য অন্তত ৩০০ একর ফাঁকা জমি থাকা দরকার। সেটা শিলিগুড়ি মূল শহরের মধ্যে নেই। এই অবস্থায়, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের উপরে চাপ বাড়াতে আসরে নেমেছেন শিলিগুড়ির মেয়র তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শিলিগুড়ি ও আসানসোল শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০২:০০
Share: Save:

রাজ্য সরকার নামই পাঠায়নি, তা-ই স্মার্ট সিটির তালিকায় ঠাঁই হয়নি শিলিগুড়ির।

বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব পরিষ্কারই স্বীকার করে নিয়েছেন, স্মার্ট সিটি করার জন্য রাজ্য সরকার যে তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছিল, তাতে শিলিগুড়ির নাম ছিল না। তিনি জানান, স্মার্ট সিটি হওয়ার জন্য অন্তত ৩০০ একর ফাঁকা জমি থাকা দরকার। সেটা শিলিগুড়ি মূল শহরের মধ্যে নেই। এই অবস্থায়, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের উপরে চাপ বাড়াতে আসরে নেমেছেন শিলিগুড়ির মেয়র তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজ্য শিলিগুড়িকে বঞ্চনা করতে চায় বলেই এমন ঘটনা ঘটেছে। অশোকবাবুর দাবি, শিলিগুড়ির নাম পাঠালে তা বিবেচনা হওয়ার সুযোগ বেশি ছিল। বিজেপির দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ারও দাবি, রাজ্য শিলিগুড়ির নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রকে পাঠায়নি বলেই এমন হয়েছে।

উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি নয়, শিল্প-শহর আসানসোলকেও তালিকায় রাখেনি রাজ্য সরকার।

কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় স্বয়ং আসানসোলের সাংসদ। তিনি বলছেন, ‘‘মাস দুয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আবেদন করেছিলাম, আসানসোল এবং শিলিগুড়ি যেন রাজ্যের তালিকায় ঠাঁই পায়।’’ সরকার সে কথা রাখেনি। মন্ত্রীর দাবি, ‘ব্রাত্য’ উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই শিলিগুড়ি পাড়ি দিলেও তা যে লোক দেখানো স্মার্ট সিটির তালিকায় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘রাজনীতি’কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে বাবুলের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আসানসোলের সাংসদ আমি। শিলিগুড়িও সিপিএমের দখলে সে কথা মনে রেখে রাজ্যসরকার রাজনীতিকেই প্রাধান্য দিয়েছে বলে সবাই মনে করছেন। আমিও সে ইঙ্গিতই পাচ্ছি।’’

বিজেপি-র দাবি, আসানসোলের সাংসদ বাবুল, দার্জিলিংও তাদেরই দখলে তার প্রবেশ পথ শিলিগুড়িকেও তাই তালিকার বাইরে রাখাই শ্রেয় মনে করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী দাবি করেছেন, রাজ্য থেকে ১০টা নাম গিয়েছিল। তার মধ্যে শিলিগুড়ি লাগোয়া ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, জয়গাঁর নামও ছিল। রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও দাবি করেছেন, ‘‘স্মার্ট সিটির প্রয়োজনে যে শর্তগুলি ছিল তা মেনেই ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও তাই বেশ কয়েকটি শহরকে তালিকায় রাখা যায়নি।’’

বাবুলের পাল্টা দাবি, দুর্গাপুর যথেষ্ট ‘পরিকল্পিত শহর’। তাকে নতুন করে স্মার্ট সিটির তকমা দেওয়ার কোনও মানে হয় না। তাঁর দাবি, ‘‘নিউটাউন কিং‌বা সল্টলেকও সদঅয় গড়ে ওঠা পরিকল্পিত শহর যথেষ্ট স্মার্ট। তবুও ওই শহরগুলি উন্নত নগরায়ণের সুবিধা পাবে অথচ শিলিগুড়ি কিংবা আসানসোল পাবে না, ভাবতেই অবাক লাগছে।’’

তবে হাল ছাড়তে রাজি নয় শিলিগুড়ি সহ লাগোয়া এলাকার বণিক সংগঠনগুলি। সম্প্রতি দিল্লিতে স্মার্ট সিটি বিষয়ে এক সেমিনার হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধিরাও। সেমিনারে জানানো হয়, যে শহরগুলি স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় আসবে সেখানে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অন্তত হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরপূর্ব ভারতের অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র শিলিগুড়ির সেই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ বণিকমহল। উত্তরপূর্ব ভারতের মধ্যে সিকিমের নামচি সহ গুয়াহাটি, শিলং, ইম্ফল কেন্দ্রের স্মার্ট সিটির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন বণিকসভার তরফে দাবি করা হয়েছে, যে ‘যোগ্যতা’র নিরিখে এই শহরগুলির নাম তালিকায় ঢুকেছে, শিলিগুড়িরও ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।

বণিক সংগঠন সিআইআইয়ের দাবি, সে কারণেই ফের আরেকটি প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে শিলিগুড়িতে স্মার্ট সিটির তালিকায় ঢোকানোর দাবি জানানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। আগামী মাস থেকেই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বাজেট প্রস্তুতির আলোচনা শুরু হবে। সেখানেও শিলিগুড়ির নাম স্মার্ট সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ফোসিন।

কেন্দ্রের ক্ষমতায় এনডিএ সরকার আসার পরেই, স্মার্ট সিটি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়। দেশের যে শহরগুলি এই প্রকল্পে থাকবে সেগুলির পরিকাঠামো, যোগাযোগ, নিকাশি, যানবাহন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যতে কেন্দ্রীয় সরকার বিনিয়োগ করবে। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারও বরাদ্দ করবে বলে জানানো হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থাকেও সংশ্লিষ্ট শহরগুলিতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে স্মার্ট সিটি প্রকল্পে। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন রাজ্য সরকারের তরফে শহরের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের নগরোন্নয়ন দফতরের তরফেও পৃথক সমীক্ষা করা হয় বলে জানানো হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ বণিক সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘জনসংখ্যা থেকে রাজস্ব আদায় যে কোনও নিরিখেই শিলিগুড়ির স্মার্টসিটির তালিকায় ঢোকার কথা। তা কেন হল না, সেটাই আশ্চর্যের। আগামী মাস থেকেই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বাজেট আলোচনা শুরু হবে। আলোচনায় আমাদের প্রধান প্রস্তাব হবে শিলিগুড়িকে স্মার্ট সিটির তালিকায় আনা।’’ স্মার্ট সিটি প্রকল্প ঘোষণার পরেই, শিলিগুড়ির অর্ন্তভুক্তি চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল বলে সিআইআই জানিয়েছে। সংগঠনের উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান নরেশ অগ্রবাল বলেন, ‘‘নামচি, গুয়াহাটি স্মার্ট সিটি হয়েছে। শিলিগুড়ি শহর কেন বাদ পড়ল সেটাই বুঝতে পারলাম না। রাজনীতি নয়, শিলিগুড়ি শহরের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের এক হয়ে সওয়াল করা প্রয়োজন।’’

যোগাযোগ পরিকাঠামোর দিক থেকেও শিলিগুড়ির এই প্রকল্পে স্থান পাওয়া উচিত ছিল বলে দাবি করেছেন সিআইআইএর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রবীর শীল। তিনি বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে থেকে পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। একাধিক আর্ন্তজাতিক এবং জাতীয় সড়কের সংযোগস্থল যে শহর, তা স্মার্ট সিটি থেকে বাদ পড়ার কারণ-ই বোধগম্য হচ্ছে না। সিআইআইয়ের তরফে আগেই এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE