বাংলায় এসে প্যাকেজের কথা বলে ২৪ ঘণ্টা আগেই তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ। সেই প্রসঙ্গকেই হাতিয়ার করে এ বার ‘তৃণমূল-বিজেপি-র আঁতাঁতে’র অভিযোগের সুর আরও চড়ালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। রাজনাথের প্যাকেজ ঘোষণায় কার্যত অস্বস্তিতেই পড়েছে তৃণমূল।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-র প্যাকেজের প্রস্তাবকে আমল দিচ্ছেন না। শনিবারই নন্দীগ্রামে দলীয় প্রচার সভা থেকে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, “আমরা কারও কাছে ভিক্ষা চাই না। স্পেশ্যাল প্যাকেজ চাই না।” ওই সভায় তিনি বলেছেন, ‘‘এ বারের ভোট দিল্লি থেকে বাংলার জন্য টাকা ছিনিয়ে আনার ভোট। আমাদের রাজ্য থেকে নিয়ে যাওয়া টাকা কেন্দ্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।” এমনকী, এ দিনও নন্দীগ্রাম, ডায়ন্ডহারবার এবং উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটে দলীয় সভায় কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিএমের সঙ্গে ‘আঁতাত’ হয়েছে বলে ফের অভিযোগ করেন মমতা।
কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের কাছে রাজ্যের ঋণের উপরে সুদ মুকুবের দাবি জানিয়েও কাজ হয়নি বলে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। তাঁর সেই দাবিকে ন্যায়সঙ্গত বলে আগেই মন্তব্য করেছিলেন রাজনাথ। শুক্রবার আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজনাথ ঘোষণা করেছেন, সরকার গড়তে পারলে বিজেপি এ রাজ্যকে সবচেয়ে বড় আর্থিক প্যাকেজ দেবে। দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী যখন রাজ্যে এসে মমতার বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়িয়েছেন, তখন রাজনাথের এই সুর বদল তাৎপর্যপূর্ণ। এত দিন কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএমকে এক বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানাতেন মমতা। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েননি অধীর ও এআইসিসি-র সম্পাদক ও দলে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদ খান।
বহরমপুরে এ দিন অধীর বলেন, “রাজনাথ সিংহ প্রচারে এসে তৃণমূল সরকারকে ঋণ মকুব-সহ বিভিন্ন আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। কারণ, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বিজেপির একটা গোপন আঁতাঁত তৈরি হয়েছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “গত দু’তিন মাস ধরে রাজ্যসভার তৃণমূলের দু’জন প্রভাবশালী সাংসদ ঘনঘন রাজনাথের বাড়িতে যান। আমি রাজনাথের বাসভবনের সিসি টিভির ফুটেজ দেখার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। বিশ্বস্ত সূত্রে আমি জানতে পেরেছি, ক্ষমতায় এলে সারদা কাণ্ড নিয়ে ইডি এবং সিবিআই তদন্ত হবে না বলে ওই বৈঠকে বিজেপির পক্ষ থেকে তৃণমূলকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেন, “আগামী দিনে বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত বা সম্পর্ক রাখতেই হবে তৃণমূলকে। ফলে এই দেওয়া-নেওয়ার খেলা, নরম-গরমের খেলা চলছে। রাজনাথের নরম আর মোদীর গরম। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ইডি এবং সিবিআই তদন্ত আগামী দিনে যাতে না হয় তার প্রতিশ্রুতি দেওয়াসব মিলিয়ে এখনকার রাজনীতির সমীকরণে এক নতুনত্ব আমাদের সকলের কাছে প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে!”
একই ভাবে এ দিন বিকালে বসিরহাটের কংগ্রেস প্রার্থী কাজি আব্দুর রহিম দিলুর সমর্থনে ভেবিয়া চৌমাথায় সভা করতে এসে শাকিলও বলেন, ‘‘৩৪ বছরের সিপিএমের রাজত্বের অবসান চেয়েছিলাম বলেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করেছিলাম। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা তলে তলে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেছেন বলেই তো মোদী বলছেন, একটা লাড্ডু তাঁর হাতে থাকবে, আর অন্যটি থাকবে মমতার হাতে।’’
অধীরের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “চরম মিথ্যাবাদী! চরম মিথ্যাবাদী! চরম মিথ্যাবাদী!” তৃণমূলের মতো একই রকম অস্বস্তিতে পড়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বও। অধীরবাবুদের অভিযোগ ‘মনগড়া’ বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর বক্তব্য, “এই ধরনের রাজনীতি বিজেপি করে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী জনসভায় জানিয়েছেন, সারদা-কাণ্ডে দোষীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy