শ্যামল সেন কমিশন থেকে বেরিয়ে আসছেন এমপিএস গ্রিনারির মালিক প্রমথনাথ মান্না। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
আমানতকারীদের টাকা নয়ছয়ের পরে সারদা গোষ্ঠী ও সুমঙ্গল সংস্থার কর্ণধারেরা এখন গারদে। তা হলে বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা এমপিএস গ্রিনারির মালিক প্রমথনাথ মান্না এখনও জেলের বাইরে কেন, বিস্ময় প্রকাশ করলেন সারদা কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার সেন।
সারদা-সুমঙ্গলের মতো এমপিএস সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লক্ষাধিক আমানতকারী। এমপিএস-কর্ণধারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে প্রতারণার অভিযোগও করা হয়েছে। মূলত সারদার লগ্নিকারীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্য সরকারের গড়া সেন কমিশন এ দিন এমপিএসের আমানতকারীদের আবেদনের ভিত্তিতে ওই সংস্থার প্রধানকে তলব করেছিল। প্রমথবাবু হাজির হলে শ্যামলবাবু তাঁকে বলেন, “এত সবের পরেও আপনি কী করে বাইরে থাকেন? আপনার তো বাইরে থাকার কথা নয়!” আমানতকারীদের আইনজীবী পরে এ কথা জানিয়ে বলেন, “ওই বক্তব্যের রেশ ধরে প্রমথবাবুকে ‘ভাগ্যবান’ বলেও অভিহিত করেন কমিশনের প্রধান।”
প্রমথবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়ায় পুলিশ-প্রশাসনকে ভর্ৎসনাও করেন শ্যামলবাবু। কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, লিখিত ভাবে তা জানানোর জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কমিশনের তলবে এ দিন হাজির ছিলেন সেবি-র অফিসারেরাও। সেবি-র তরফে কমিশনে জানানো হয়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরেই এমপিএস গ্রিনারিকে টাকা তোলা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না-করে সংস্থাটি গত ৫ জুলাই পর্যন্ত সমানে টাকা তুলে গিয়েছে। কমিশনে উপস্থিত আইনজীবী অরিন্দম দাস জানান, সেবি-র বক্তব্য শুনেই শ্যামলবাবু এমপিএস-কর্ণধারের উদ্দেশে বলেন, “আপনার তো এখন বাইরে থাকার কথাই নয়!”
কমিশন-প্রধানের মন্তব্য শুনে এমপিএসের কর্ণধার অবশ্য নীরবই ছিলেন। সারদা গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে এমপিএস-সহ ওই ধরনের বেশ কয়েকটি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। বহু সংস্থাই ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। অভিযুক্তদের অনেকে পলাতক। মাস ছয়েক পালিয়ে বেড়ানোর পরে সুমঙ্গলের মালিক সুব্রত অধিকারী সম্প্রতি মুম্বইয়ে ধরা পড়েছেন। এই অবস্থায় এমপিএস-প্রধান গারদের বাইরে থাকায় শ্যামলবাবু বিস্মিত।
এমপিএসের আমানতকারীদের আইনজীবী অরিন্দমবাবু জানান, গত এপ্রিলে লেক টাউন থানায় (বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনে) ওই সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। এ দিন পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করে কমিশন। ঠিক সময়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, পুলিশকে তা লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
কী বলছে পুলিশ?
সারদা কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সারদা এবং ওই ধরনের সব সংস্থার তদন্ত করছে সিবিআই। তাই তারা এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কমিশন অবশ্য পুলিশের ওই যুক্তি মানেনি। কমিশনের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট তো এ কথাও বলেছে যে, সারদা কমিশন নিজের মতো কাজ করবে। কমিশন যা চাইবে, পুলিশকে তা দিতে হবে বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে। লেক টাউন থানায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, আগামী ২২ জুলাইয়ের মধ্যে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকে তা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শ্যামলবাবু ছাড়াও এ দিন কমিশনে হাজির ছিলেন কমিশনের অন্য দুই সদস্য অম্লান বসু ও যোগেশ চট্টোপাধ্যায়। কমিশনের প্রশ্নের মুখে এমপিএসের কর্ণধার প্রমথবাবু জানান, আমানতকারীদের কাছ থেকে তাঁরা ১৭০০ কোটি তুলেছেন। ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা উঠতেই প্রমথবাবু টাকা ফেরতের ব্যাপারে অঙ্গীকার করেন। আমানতকারীদের আইনজীবী অরিন্দমবাবু জানান, প্রমথবাবু বলেছেন, তাঁর ২৬০০ কোটি টাকার সম্পত্তি আছে। তা বেচে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করবেন।
সেবি-র মাধ্যমে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এমপিএস-প্রধান কবে কী ভাবে টাকা ফেরত দেবেন, ২২ জুলাইয়ের মধ্যে কমিশনে তা জানাতে হবে। একই সঙ্গে আমানতকারীদের পুরো তালিকা সেবি-র কাছে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy