Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লগ্নি সংস্থার অনুষ্ঠানে ভিডিও নিয়ে ফের অস্বস্তিতে বস্ত্রমন্ত্রী

সারদাকে সিমেন্ট কারখানা বেচে আগেই ঝামেলায় জড়িয়েছেন রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরটের (ইডি) জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাঁকে। মন্ত্রিত্ব থেকে তাঁর অপসারণের দাবিও তুলেছে বিরোধীরা। এই ঘটনার রেশ কাটার আগেই নতুন করে সামনে এসেছে অন্য এক বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে বস্ত্রমন্ত্রীর যোগ দেওয়ার ভিডিও ফুটেজ।

সারদা-কাণ্ডের পরেই ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় বিষ্ণুপুরে কবরডাঙা এলাকার নিউল্যান্ড সংস্থার এই হাসপাতালের।—নিজস্ব চিত্র।

সারদা-কাণ্ডের পরেই ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় বিষ্ণুপুরে কবরডাঙা এলাকার নিউল্যান্ড সংস্থার এই হাসপাতালের।—নিজস্ব চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৫০
Share: Save:

সারদাকে সিমেন্ট কারখানা বেচে আগেই ঝামেলায় জড়িয়েছেন রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরটের (ইডি) জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাঁকে। মন্ত্রিত্ব থেকে তাঁর অপসারণের দাবিও তুলেছে বিরোধীরা। এই ঘটনার রেশ কাটার আগেই নতুন করে সামনে এসেছে অন্য এক বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে বস্ত্রমন্ত্রীর যোগ দেওয়ার ভিডিও ফুটেজ। যার জেরে ফের বিতর্কের মুখে শ্যামবাবু।

ওই ফুটেজে নিউল্যান্ড নামে অর্থলগ্নি সংস্থার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে দেখা যাচ্ছে শ্যামবাবুকে। ভিডিও ফুটেজে এ-ও দেখা যাচ্ছে, নিজের বক্তৃতায় সংস্থাটির কাজের সুনাম করে সাধারণ মানুষকে সেখানে অর্থলগ্নি করতে উৎসাহিতও করছেন শ্যামবাবু। ২০১৩ সালে সারদা-কাণ্ডের পরে ঝাঁপ বন্ধ করে দেয় এই সংস্থাও। খোঁজ নেই সংস্থার কর্ণধারের। সারদা নিয়ে ইডি এবং সিবিআইয়ের জোড়া তদন্তের মধ্যেই ওই ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসায় নতুন করে অস্বস্তিতে বিষ্ণুপুরের তৃণমূল বিধায়ক শ্যামাপ্রসাদবাবু। ওই সংস্থায় টাকা রাখতে উৎসাহিত করার অভিযোগ অবশ্য মিথ্যা বলে দাবি করেছেন শ্যামবাবু।

সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ গ্রামের সাহাপাড়ার বাসিন্দা দীপঙ্কর দে নিউল্যান্ড সংস্থাটি চালু করেন। তার আগে তিনি অন্য একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু, কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিবাদের জেরে সেই সংস্থার এজেন্টদের একাংশকে নিজের দিকে টেনে নিউল্যান্ড খোলেন। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ এবং ওড়িশা, বিহার, অসম, ত্রিপুরার মতো ভিন রাজ্যে ৯০টিরও বেশি শাখা অফিস ছিল ওই সংস্থার। সাধারণ মানুষকে চড়া সুদে টাকা ফেরত দেওয়ার টোপ দিয়ে টাকা তুলত তারা। সেই টাকা বিভিন্ন ব্যবসায় খাটাতেন দীপঙ্করবাবু।

সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে, টাকা তোলার ওই কারবার করে ক্রমেই ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন দীপঙ্করবাবু। শুধু বাঁকুড়া জেলাতেই তিনটি নার্সিংহোম কিনেছিলেন তিনি। জমি কেনাবেচার ব্যবসাতেও টাকা ঢালতেন। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে আবাসন মন্ত্রী হন শ্যামবাবু। ওই বছরই বিষ্ণুপুরের যদুভট্ট মঞ্চে নিউল্যান্ড সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন। সদ্য মন্ত্রী হওয়া শ্যামবাবুকে মঞ্চের কয়েকশো মিটার দূর থেকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে সভাস্থলে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন সংস্থার এজেন্টরা।

উল্লেখ্য, রাজ্যে পরিবর্তনের পর দু’বছর ফুলে ফেঁপে উঠেছিল সংস্থার ব্যবসা। উত্তরবঙ্গের এক একটি শাখায় মাসে কোটি টাকার ব্যবসা হত বলে জানাচ্ছেন এজেন্টরা। ২০১৩ সালে সারদা-কেলেঙ্কারির পরে একের পর এক লগ্নি সংস্থা ঝাঁপ বন্ধ করে। সেই তালিকায় ছিল নিউল্যান্ডও। আমানতকারীরা টাকা ফেরত চেয়ে চাপ দেওয়ায় সংস্থার বহু এজেন্ট এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। গা ঢাকা দেন সংস্থার কর্ণধারও। তিনটি চালু নার্সিংহোমও বন্ধ করে দেন তিনি। সংস্থার বিষ্ণুপুরের এজেন্টদের কথায়, “রাস্তায় বের হলে এখনও আমানতকারীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ, আমাদেরই মুখ চেয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা এই সংস্থায় রেখেছিলেন তাঁরা। ঝাঁপ গুটিয়ে মালিক তো পালিয়ে গেলেন! ফেঁসে গেলাম আমরা।” দীপঙ্করবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সাহাপাড়ায় তাঁর বাড়িতে গেলে সেখানে দীর্ঘদিন তিনি থাকেন না বলে জানান পরিবারের সদস্যেরা। তাঁর মোবাইলও ছিল বন্ধ।

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বাঁকুড়ার ওন্দার বিধায়ক অরূপ খাঁ এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। আর শ্যামবাবুর দাবি, “পুরসভার চেয়ারম্যান (শ্যামবাবু বিষ্ণুপুরের পাঁচ বারের পুরপ্রধান) হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয়। নিউল্যান্ড সংস্থাটি শহরে স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু করছিল। তাই আমন্ত্রণ পেয়ে ওই সংস্থার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তখন জানতাম না যে, ওটা চিটফান্ড সংস্থা।”

বিরোধীরা কিন্তু শ্যামবাবুকে বিঁধতে ছাড়ছেন না। সারদা-কাণ্ডে তাঁর নাম জড়ানোর পর থেকেই তাঁকে মন্ত্রিত্ব পদ থেকে সরানোর দাবি তুলেছে সিপিএম। বৃহস্পতিবার জেলায় দলীয় বৈঠকে এসে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও একই দাবি করেছিলেন। বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “শ্যামবাবু ওই সংস্থার কাজে যে সহায়তা করতেন, তা প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। পুরপ্রধান হিসেবে বিষ্ণুপুরের মানুষের উন্নয়ন তো করেননি, উল্টে অর্থলগ্নি সংস্থার মাধ্যমে গরিব লোকের ক্ষতি করেছেন।”

শ্যামবাবুর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার বিষয়ে দলীয় স্তরেও আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন সুভাষবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE