আপন-ঘরে মার খেয়ে মান খুইয়েছে পুলিশ। আলিপুর থানায় হামলার সেই ঘটনায় ন’জন অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেও পুলিশ তাদের ধরতে পারেনি।
ওই ঘটনায় ধৃত যোগেশ বোরাকে জেরা করে নয় অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা হয়। ১৪ নভেম্বর অর্থাৎ হামলার দিনে আলিপুর থানার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ওই ন’জনকে শনাক্তও করেছে সেখানকার পুলিশ। কিন্তু তাদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি তারা। মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে যোগেশকে হাজির করিয়ে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে এমন কথাই জানালেন সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল।
প্রশ্ন উঠছে, শনাক্তকরণের পরেও আলিপুর থানা ওই ন’জনকে এখনও ধরতে পারল না কেন?
সৌরীনবাবু আদালতে জানান, যোগেশকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ওই অভিযুক্তদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। আলিপুর থানা জানাচ্ছে, ওই ন’জনেরই মধ্যে আছে মনোজ এবং বেবি (পুরো নাম জানা যায়নি)। দু’জনেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার ডান ও বাঁ হাত বলে পরিচিত।
পুলিশ ওই ন’জনকে খুঁঁজে পাচ্ছে বলে সরকারি আইনজীবী এ দিন আদালতে জানালেও বিধানচন্দ্র রায় কলোনির বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, মনোজ ও বেবিকে তাঁরা দু’-এক দিন আগেও এলাকায় দেখেছেন। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মনোজ তৃণমূল নেতা এবং বেবি ওই দলেরই নেত্রী। মনোজের মোবাইলে ফোন করলে তিনি ফোন ধরে ‘ভুল নম্বর’ বলে তা কেটে দিয়েছেন। আর বেবির ফোন ‘সুইচড অফ’ দেখাচ্ছে। আলিপুরের ওই বিধানচন্দ্র রায় কলোনির সরকারি জমিতে আবাসন নির্মাণ নিয়েই ১৪ নভেম্বর গোলমাল হয়েছিল। তার জেরে আলিপুর থানায় ঢুকে পেটানো হয় পুলিশকর্মীদের। মাথা বাঁচাতে ফাইলকে ঢাল করে এক পুলিশকে টেবিলের নীচে লুকিয়ে পড়তে দেখা যায়। থানার কাচ ভাঙচুর করা হয়।
আক্রান্ত হয়েও অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ প্রথম থেকেই গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠছিল। কয়েক দিন পরে ধরা পড়ে যোগেশ। এ দিন তাকে আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারক সঞ্জীব দারুকার এজলাসে তোলা হয়। তার আইনজীবী অরিন্দম দাস ও আয়ুব খান দাবি করেন, তাঁদের মক্কেল শেষ চার দিন পুলিশি হাজতে ছিল। তদন্তে আদৌ অগ্রগতি হয়নি। যোগেশকে জেরা করে পুলিশ আর কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, সিসিটিভি-র ফুটেজে যোগেশের ছবি থাকলেও সে যে ভাঙচুর করেছে, তেমন কোনও প্রমাণ পুলিশের কাছে নেই। তাই অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হোক। উভয় পক্ষের সওয়াল শেষে যোগেশকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
অভিযুক্তেরা শাসক দলের হওয়ায় প্রথম থেকেই পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। প্রথমে তো আলিপুর থানার পুলিশ ভাঙচুরের অভিযোগ মানতেই চায়নি। ঘটনার পরে পাঁচ জনকে ধরে আনলেও ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের জড়িত থাকার কোনও তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি পুলিশ। পাঁচ জনকেই জামিনে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। তদন্তের দৈন্যদশার জন্য আদালত তিরস্কার করে পুলিশকে। তার পরেই তদন্তকারী অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন করে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই থানার অতিরিক্ত ওসি-কে। গত বৃহস্পতিবার যোগেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কিন্তু তার পরে তদন্ত আর এগোয়নি। পুলিশের একাংশের অভিযোগ, যোগেশ ছাড়া আর কাউকেই যাতে ধরা না-হয়, সেই জন্য থানার উপরে চাপ রয়েছে। এমনকী থানা ভাঙচুরের ঘটনায় পুরমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ প্রতাপ সাহার ভূমিকা কী ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়নি। ঢিলেমির জন্য আলিপুর কাণ্ডের প্রথম তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতির অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও তদন্ত থমকে রয়েছে কেন? প্রশ্ন তুলেছেন ১৪ নভেম্বর ওই থানায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের একাংশ। পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পরেও থানার ওসি-কে রেখে দেওয়া হয়েছে কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। পুলিশের ভিতর থেকেই অভিযোগ উঠেছে, এর পিছনে আছে শাসক দলের চাপ।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এ ক্ষেত্রে তদন্তের ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ মানতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy