সেই স্থলবন্দর। ছবি: বিকাশ মশান।
রাজ্যে শিল্পের বান ডাকবে ভেবে বাম জমানার শেষ দিকে দুর্গাপুরে গড়ে তোলা হয়েছিল পূর্ব ভারতের এক মাত্র স্থলবন্দর (ড্রাই পোর্ট)। শিল্প আসেনি। তাই সেই বন্দরও ধুঁকছে।
সাধারণত নদী বা সমুদ্র বন্দরের উপর চাপ কমাতে স্থলবন্দর গড়া হয়। জাহাজে কনটেনার তোলা বা নামানোর আগে শুল্ক দফতরের যে ছাড়পত্র লাগে, তা-ও সেখান থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সে ক্ষেত্রে নদীবন্দরে নতুন করে কোনও ছাড়পত্র নিতে হয় না। কনটেনার সরাসরি জাহাজে তুলে দেওয়া যায়। তা ছাড়া স্থলবন্দর থেকে কার্গো পাঠানোরও ব্যবস্থা থাকে।
এ রাজ্যে হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে জাহাজে বহু পণ্য যাতায়াত করে। ওই দুই বন্দরের উপরে চাপ কমাতেই ২০০৬ সালের মে মাসে দুর্গাপুরের বাঁশকোপায় স্থলবন্দর গড়ে তোলা হয়েছিল। বছরে প্রায় ৬০ হাজার কনটেনার ওঠানো-নামানোর পরিকাঠামো রয়েছে সেখানে। কিন্তু বর্তমানে সাকুল্যে ১১ হাজারের বেশি ওঠানামা করে না।
অ্যালায়েড আইসিডি সার্ভিসেস নামে যে বেসরকারি সংস্থা বড় বিনিয়োগ করে এই স্থলবন্দর গড়েছে, তারা বিপাকে পড়ে গিয়েছে। সংস্থার সিইও তথা ডিরেক্টর প্রমোদকুমার শ্রীবাস্তব বলেন, “রাজ্যের বর্তমান পরিবেশ একেবারেই শিল্পবান্ধব নয়। ৬০ কোটি টাকা লগ্নি করে প্রকল্পটি গড়া হয়েছে। তার সামান্যই কাজে লাগছে। এমন চললে আমাদের অন্য ভাবে ভাবতে হবে।”
বাঁশকোপায় প্রায় পাঁচ হেক্টর এলাকা জুড়ে গড়া হয়েছে স্থলবন্দরটি। রয়েছে পর্যাপ্ত আয়তনের গুদাম। কনটেনার ওজন করা থেকে শুল্ক নেওয়া বা শুল্ক দফতরের ছাড়পত্র দেওয়ার মতো নানা ব্যবস্থা আছে। ফাঁকা কনটেনার রাখার জন্য আলাদা গুদাম, কনটেনার সারাইয়ের সুবিধাও রয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে পেশাদার রক্ষীরা আছেন। ২৪ ঘন্টা নজরদারির জন্য রয়েছে সিসিটিভি। কর্মীর সংখ্যা শ’দুয়েক। ২০১১ সালে ভারতীয় রেলের অধীন কনটেনার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রেল যোগাযোগও গড়ে তোলা হয়।
গত জুলাইয়ে সরাসরি বাংলাদেশে রফতানিও শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশের মতেই, কলকাতা হয়ে কার্গো পাঠাতে গেলে কাগজপত্র পরীক্ষার নামে বেনাপোল সীমান্তে ৭-৮ দিন সময় নষ্ট হয়। কিন্তু দুর্গাপুরের স্থলবন্দর থেকে সরাসরি বাংলাদেশে রফতানি পরিষেবা চালু হওয়ায় দুশ্চিন্তা কেটেছে। তবু ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বন্দর কর্তৃপক্ষ। সংস্থার এক কর্তার বক্তব্য, ২০০৬-এ রাজ্যে যে শিল্পায়নের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল, তাতে আশাবাদী হয়েই এই বন্দর গড়া। সেই সময়ে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলেও নতুন-নতুন কারখানা খোলা হচ্ছিল। সব মিলিয়ে স্থলবন্দরের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলে ধরে নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরে পরিস্থিতি বদলে যায়। ২০০৭-০৮ আর্থিক বর্ষে ৬০০০ কনটেনার ওঠা-নামা দিয়ে যার চলা শুরু, এখন তা দাঁড়িয়েছে গড়ে মাত্র ১১ হাজারে।
প্রমোদকুমারের আক্ষেপ, “রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ অনুকূল নয়। পুরনো কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন শিল্প আসছে না। স্বভাবতই স্থলবন্দরের চাহিদা কমছে।” এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের এক মাত্র উপায় যে দ্রুত শিল্পায়ন, তা তাঁরা বিলক্ষণ জানেন। কিন্তু তা কবে হবে বা আদৌ হবে কি না, তা নিয়েই যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy