Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
রোহিত-কাণ্ডে তৃণমূলকে কটাক্ষ করলেন গুরুঙ্গ

সকলকেই সাবধানে চলতে হবে

ফেসবুক-কাণ্ড নিয়ে এ বার তৃণমূলকে বিঁধলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। ফেসবুকে নাম না করে তৃণমূল নেতাকে ইঙ্গিত করে মালবাজারের যুবক রোহিত পাশির লেখা ও তার জেরে তাঁকে রাতভর থানায় আটকে রাখা প্রসঙ্গে সোমবার সিপচুতে সরব হন গুরুঙ্গ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল রাজ্যের পুলিশকে দিয়ে দলীয় পতাকা পোঁতার কাজও করিয়ে নেবে। যা পরিস্থিতি তাতে ফেসবুকে নাম না করে তৃণমূল নেতার নামে লেখার দায়ে যুবককে যে আটক করা হল তাতে অবাক হই নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৫
Share: Save:

ফেসবুক-কাণ্ড নিয়ে এ বার তৃণমূলকে বিঁধলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। ফেসবুকে নাম না করে তৃণমূল নেতাকে ইঙ্গিত করে মালবাজারের যুবক রোহিত পাশির লেখা ও তার জেরে তাঁকে রাতভর থানায় আটকে রাখা প্রসঙ্গে সোমবার সিপচুতে সরব হন গুরুঙ্গ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল রাজ্যের পুলিশকে দিয়ে দলীয় পতাকা পোঁতার কাজও করিয়ে নেবে। যা পরিস্থিতি তাতে ফেসবুকে নাম না করে তৃণমূল নেতার নামে লেখার দায়ে যুবককে যে আটক করা হল তাতে অবাক হই নি। তাই সকলকেই সাবধানে চলতে হবে। পুলিশের একাংশ সরাসরি তৃণমূলী নেতাদেরই নিয়ন্ত্রণে। রাজ্যে তাই গণতন্ত্রই নেই, ভয়ানক পরিস্থিতি।’’ সোমবার ডুয়ার্সের নাগরাকাটা থানার ঝালং লাগোয়া সিপচুতে বলিদান দিবসের সভায় আসেন বিমল গুরুঙ্গ। সেখানেই রোহিত পাশি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তর দিতে এ কথা জানান বিমল। তার আগে রাজ্যে যে আইন শৃঙ্খলা, গণতন্ত্র কিছুই আর নেই সে কথাও বলিদান দিবসের মঞ্চে বারবার অভিযোগ তোলেন বিমল গুরুঙ্গ।

এ দিকে রোহিতের স্ত্রীর তৃণমূল কাউন্সলির পুলিন গোলদারের বিরুদ্ধে করা লিখিত অভিযোগের জেরে পুলিশ ১০৭ সিআরপিসির ধারাতেই মামলা রুজু করেছে বলে জানিয়েছে। গত রবিবার দুপুরে রোহিতের স্ত্রী রাখি রায় পাশি পুলিন বাবু প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। শুক্রবার মালবাজার থানা চত্বরে যখন রোহিতকে আনা হয় সেদিন এবং পর যখন শনিবার রাতে রোহিত বাড়িতে ছিল তখন গভীর রাতে পুলিনবাবু এবং তার ১০ থেকে ১২জন সঙ্গী গালাগালি করেন বলে লিখিত অভিযোগ জানান রাখি। গত রবিবার মালবাজার থানার পুলিশ সেই অভিযোগ জমা নিলেও অভিযোগের প্রতিলিপিতে কোনও ডায়েরি নম্বর লিখে দেয়নি পুলিশ। মামলা হয়েছে কি না হলে কত ধারায় সে বিষয়েও কিছু জানায়নি পুলিশ। মালবাজারের এসডিপিও নিমা নরবু ভুটিয়া রবিবার শুধু অভিযোগ জমা পড়েছে এবং আমরা তদন্ত করে দেখছি বলে জানান।

তবে পুলিশের এই ভূমিকায় রোহিতের পরিজনেরা প্রশ্ন তুলেছেন, রোহিত যেখানে ফেসবুকে কোনও দল ও নেতার নাম না করে মত জানিয়েই পুলিন বাবুর অভিযোগ দায়েরের ঘন্টাখানেকের মধ্যে আটক হল সেখানে রোহিতের স্ত্রী রাখিদেবীর প্রাণনাশের মত হুমকির অভিযোগে একদিন পেরিয়ে গেলেও কোনও মামলাই শুরু করতে পারলো না কেন পুলিশ। তবে সোমবার বিকেলে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া জানান পুলিন গোলদারের বিরুদ্ধে সিআরপিসির ১০৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে। তিনি জানান, পুলিন বাবুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেক্ষেত্রে ১০৭ ধারাই যথোপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। মালবাজারের মহকুমা দেওয়ানি আদালত থেকে পুলিন বাবুকে ব্যক্তিগত জামিন নিতে হবে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য রোহিতের ক্ষেত্রেও একই ধারায় মামলা করেছিল পুলিশ। রোহিতকে আটক করা হলেও পুলিন বাবুকে অবশ্য এখুনি আটক করবে না পুলিশ বলেই পুলিশসুপার জানিয়েছেন। আকাশ মেঘারিয়ার কথায়, ‘‘১০৭ ধারাতে অভিযুক্ত সরাসরি নিজেই মহকুমা দেওয়ানি আদালত থেকে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পেতে পারেন তবে প্রয়োজন হলে পুলিন বাবুকে থানায় আনাও হতে পারে।’’

তবে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ করলেও পুলিশ ১০৭ ধারায় মামলা করায় ক্ষুব্ধ রোহিত এবং তার স্ত্রী রাখি। রাখিদেবী কথায়, ‘‘পুলিনবাবুকে এত লঘু মামলা কেন দেওয়া হল সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’’ এ দিন রোহিতের বাড়িতে আসেন জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেসের মানবাধিকার সেলের চেয়ারম্যান গণেশ ঘোষ, ভাইস চেয়ারম্যান মামন শীল অরবিন্দ সিংহ , ছাত্র পরিষদের লালন সাহা, বিমান দে সরকার প্রমুখেরা। তারাও পুলিন বাবুর বিরুদ্ধে কেন কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তবে পুলিন গোলদার নিজে অবশ্য এ দিন জানান, আইনি যে কোনও সিদ্ধান্তকে আমি মান্য করব। পাশাপাশি রোহিত পাশির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন বলে প্রথমের জানালেও এ দিন সেখান থেকেও সরে আসেন পুলিন। তিনি বলেন আমি এ বিষয়ে দল যা নির্দেশ দেবে সেটাই মেনে চলবো।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ফেসবুক-কাণ্ডে এ ভাবে জড়িয়ে যাওয়ায় যথেষ্টই বিড়ম্বনায় দল। অবস্থা সামাল দিতে সোমবার সকালে আসরে নামেন জলপাইগুড়ির জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক স্তরে যা হয়েছে সেটি সম্পূ্র্নই আইনগত বিষয়। তবে পুরো ঘটনাটি এতদূর অবধি নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি। দু-তরফেরই কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্যেই এটা ঘটে গিয়েছে। রোহিতের দাদা রাজু পাশি দীর্ঘদিনের সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। সে নিজেও আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছে। বিরোধী দলগুলি এই বিষয়টিকে আরও জটিল করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুরো ঘটনাটি যাতে সমাপ্ত হয় সে জন্যে আমি মালবাজারের চেয়ারম্যান স্বপন সাহাকে দায়িত্বও দিয়েছি।’’ এ দিন স্বপনবাবু বলেন, ‘‘পুলিন এবং রোহিত পরস্পর ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় রয়েছেন। ওঁদের মধ্যে যা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তা মিটিয়ে দেবারই চেষ্টা করবো। তবে কাউন্সিলর বলে যে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে এমনটাও আমরা মনে করি না।’’ আজ, মঙ্গলবার মালবাজারে রোহিতের বাড়িতে আসছেন সেভ ডেমোক্রেসি সংগঠনের কর্মকর্তা তথা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এবং সংগঠনের সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী প্রমুখেরা। চঞ্চলবাবু বলেন, ‘‘অশোক বাবুর উপস্থিতিতে রোহিত ও ওর পরিবারকে আইনি পরামর্শও দেব আমরা।’’

সিপচুতে এ দিন শিলিগুড়িতে সমাবেশ করার কথা ঘোষণা কথা করেন গুরুঙ্গ। এদিন শিলিগুড়িতে বিরাট জনসমাবেশের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দিদি অনেক পাহাড় নিয়ে রাজনীতি করেছেন। পাহাড়ে জাতিগত রাজনীতিরও চেষ্টা করছেন। এ বারে আমি শিলিগুড়িতে এসে রাজনীতি করবো। তরাই ডুয়ার্সের আদিবাসী, মুসলিম, বিহারী , বাঙালি সকল জনজাতির লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিয়ে আগামী দুইমাসের মধ্যে শিলিগুড়িতে বিরাট জনসমাবেশ করে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE